বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে দেশত্যাগে বাধ্য করার প্রতিবাদে বিক্ষোভ সমাবেশে সেনা সদস্যদের ওপর হামলা, গাড়িতে অগ্নিসংযোগ ও ভাঙচুর ও অস্ত্র ছিনিয়ে নেওয়ার ঘটনায় দায়ের করা মামলায় সাবেক ইউপি চেয়ারম্যানসহ চারজনকে গ্রেফতার করেছে র্যাব-৬।
মঙ্গলবার র্যাব-৬ এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য নিশ্চিত করেছে।
সোমবার গোপালগঞ্জ শহর থেকে আমিনুল হক শরীফ (লাচ্চু) ও সদর উপজেলা গোপীনাথপুর ইউনিয়নের বিভিন্ন এলাকা থেকে অপর তিন আসামিকে গ্রেফতার করেন র্যাব-৬ এর সদস্যরা। র্যাব-৬ এর কোম্পানি কমান্ডার সৈয়দ ফজলুর রহমান এ অভিযোগে নেতৃত্ব দেন।
গ্রেফতারকৃরা হলেন- গোপীনাথপুর ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান আমিনুল হক শরীফ (লাচ্চু), গোপীনাথপুর গ্রামের রফিকুল ইসলাম কাজি, পুলিশ শরীফ ও মো. মোস্তাক মোল্লা। গ্রেফতারকৃতদের আদালতের মধ্যমে জেলহাজতে পাঠানো হয়েছে বলে নিশ্চিত করেছেন গোপালগঞ্জ সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোহাম্মদ আনিচুর রহমান।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে দেশত্যাগে বাধ্য করার প্রতিবাদে ১০ আগস্ট বিকালে ঢাকা-খুলনা মহাসড়ক অবরোধ করে গোপালগঞ্জ সদরের গোপীনাথপুর বাসস্ট্যান্ডে দেশীয় অস্ত্র নিয়ে মহড়া ও বিক্ষোভ সমাবেশ করেন আওয়ামী লীগের নেতাকর্মী ও সমর্থকরা। এতে মহাসড়কের দুই পাশে অসংখ্য গাড়ি আটকা পড়ে।
খবর পেয়ে গোপালগঞ্জে কর্তব্যরত সেনা সদস্যরা ঘটনাস্থলে গিয়ে বিক্ষোভকারীদের মহাসড়ক ছেড়ে দিতে বলেন। তখন সেনাসদস্যদের সঙ্গে বিক্ষোভকারীরা বাগবিতণ্ডায় জড়ান। একপর্যায়ে তারা সেনাসদস্যদের ওপর হামলা করেন। এতে সেনাবাহিনীর ৪ কর্মকর্তাসহ ৯ জন আহত হন। এছাড়া সেনাবাহিনীর দুটি রাইফেল, ছয়টি ম্যাগাজিন ছিনিয়ে নিয়ে একটি গাড়িতে আগুন ও দুটি গাড়িতে ভাঙচুর করা হয়। পরে দুটি অস্ত্র ও তিনটি ম্যাগাজিন উদ্ধার করে সেনাবাহিনী।
এ ঘটনায় ২২ আগস্ট ১০ বেঙ্গল রেজিমেন্টের লে. কর্নেল মো. মাকসুদুল আলম বাদী হয়ে গোপালগঞ্জ সদর থানায় একটি মামলা দায়ের করেন। মামলায় জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকসহ ১০৬ জনের নাম উল্লেখ করে ৩ হাজার ২শ জনকে অজ্ঞাত আসামি করা হয়।
মামলার সংক্ষিপ্ত এজাহারে বেআইনি জনতাবদ্ধে মারাত্মক অস্ত্রশস্ত্রে সজ্জিত হয়ে দাঙ্গা করার জন্য সরকারি কাজে বাধা দিয়ে হত্যার লক্ষ্যে সরকারি কর্মচারীদের মারধর করে গুরুতর জখম, অস্ত্র কেড়ে নিয়ে সরকারি গাড়ি পুড়িয়ে দেওয়ার অভিযোগ করা হয়।
মামলার উল্লেখযোগ্য আসামিরা হলেন- জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মাহাবুব আলী খান, সাধারণ সম্পাদক জিএম সাহাব উদ্দিন আজম, গোপীনাথপুর ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান সাহেব আলী টুকু, সাবেক চেয়ারম্যান লাচ্চু শরীফ, তার দুই ভাই কিচলু শরীফ ও পলাশ শরীফ, শুকতাইল ইউপির চেয়ারম্যান রানা মোল্লা, সাবেক চেয়ারম্যান আবেদ শেখ, জালালাবাদ ইউপির সাবেক দুই চেয়ারম্যান সুপারুল আলম ও হেমায়েত হিমু প্রমুখ।
গোপালগঞ্জ সদর থানার ওসি মোহাম্মদ আনিচুর রহমান বলেন, সেনাবাহিনীর দায়েরকৃত মামলায় গ্রেফতার চার আসামিকে আদালতের মাধ্যমে জেলহাজতে পাঠানো হয়েছে। তাদের বিরুদ্ধে আদালতে ৭ দিনের রিমান্ড চাওয়া হয়েছে।