ফরিদপুরের মধুখালীতে পঞ্চপল্লীর কালি মন্দিরে আগুন দেয়ার গুজব ছড়িয়ে দুই ভাইকে পিটিয়ে হত্যার পর জেলাজুড়ে উত্তপ্ত পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণো আবারো বিজিবি মোতায়েন করা হয়েছে। এ পরিস্থিতিতে বুধবার (২৪ এপ্রিল) সকাল ৯টা থেকে চার প্লাটুন বিজিবি সদস্য মোতায়েন করা হয়েছে সেখানে। বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) সদর দপ্তরের জনসংযোগ কর্মকর্তা মো. শরীফুল ইসলাম বিষয়টি নিশ্চিত করেন।
তিনি বলেন, ফরিদপুর জেলা প্রশাসনের ম্যাজিস্ট্রেটদের সঙ্গে ফরিদপুর সদরসহ মধুখালী উপজেলার বালিয়াকান্দি পঞ্চপল্লীর কাছে ও বাঘাটে বাজার এলাকায় যৌথ বাহিনীর সঙ্গে সমন্বয়ে টহল পরিচালনা করছে। বর্তমানে এলাকার পরিস্থিতি স্বাভাবিক রয়েছে। ম্যাজিস্ট্রেটসহ যৌথ বাহিনীর সঙ্গে বিজিবির টহলের পাশাপাশি গ্রাম পুলিশ অবস্থান করছে। ‘মধুখালীর পঞ্চপল্লীর কালি মন্দিরে আগুনের গুজব ছড়িয়ে দুই ভাইকে পিটিয়ে হত্যার পর ওই এলাকায় উত্তপ্ত পরিস্থিতি বিরাজ করছে। সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ ও মানববন্ধনের ঘটনা ঘটছে। পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হওয়া পর্যন্ত মাঠে থাকবে বিজিবি।
এদিকে, দুই সহোদর ভাইকে পিটিয়ে হত্যার ঘটনায় জেলাজুড়ে উত্তপ্ত অবস্থা বিরাজ করছে। এরই ধারাবাহিকতায় অভিযুক্তদের বিচারের দাবিতে মঙ্গলবার মধুখালীর ফরিদপুর-খুলনা মহাসড়ক অবরোধ করে স্থানীয়রা। পরে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনেন। প্রসঙ্গত, গত বৃহস্পতিবার (১৮ এপ্রিল) রাত সাড়ে ৭টার দিকে ফরিদপুরের মধুখালী উপজেলার ডুমাইনের পঞ্চপল্লিতে কালি মন্দিরে আগুন দেয়ার সন্দেহে গুজব ছড়িয়ে বাঁশ, লাঠি দিয়ে পিটিয়ে ও ইট দিয়ে থেতলিয়ে আপন দুই সহোদরকে হত্যা এবং আরও ৫জনকে গুরুতর আহতের ঘটনা ঘটে। খবর পেয়ে মধুখালীর ইউএনও মামনুন আহমেদ অনীক এবং ওসি মিরাজ হোসেনের নেতৃত্বে হতাহতদের উদ্ধারে পুলিশ ঘটনাস্থলে গেলে তাদেরও জিম্মি করে হামলকারীরা। খবর পেয়ে ফরিদপুরের জেলা প্রশাসক কামরুল আহসান তালুকদার ও পুলিশ সুপার মোহাম্মদ মোর্শেদ আলম ঘটনাস্থলে ছুটে যান। পরে ফরিদপুর ও রাজবাড়ী থেকে অতিরিক্ত পুলিশ ও র্যাব প্রায় ৫ ঘণ্টা চেষ্টা চালিয়ে তাদের উদ্ধার করে।
এ সময় হামলাকারীরা পুলিশকে লক্ষ্য করে ইটপাটকেল ছুড়তে থাকে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে ১৭৫ রাউন্ড ফাঁকা গুলি করে পুলিশ।
এ ঘটনার পরে মন্দিরে আগুন, নির্মাণ শ্রমিক হত্যা ও সরকারি কাজে বাধা দেয়ার ঘটনায় পৃথক তিনটি মামলা হয়েছে স্থানীয় থানায়। ঘটনার দুইদিন পর শনিবার (২০ এপ্রিল) ধর্মমন্ত্রী মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী মো. ফরিদুল হক খান এমপি নিহতদের বাড়িতে গিয়ে স্বজনদের শান্তনা দেন এবং পঞ্চপল্লীতে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন। এ ঘটনায় অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মো. আলী সিদ্দিকীর নেতৃত্বে তিন সদস্যবিশিষ্ট তদন্ত কমিটির তদন্ত চলমান রয়েছে। এছাড়া রোববার (২১ এপ্রিল) ঘটনাস্থল পরিদর্শনে যান পুলিশের ঢাকা রেঞ্জের ডিআইজি সৈয়দ নুরুল ইসলাম।