ফরিদপুরের বোয়ালমারীতে পল্লী উন্নয়ন যুব সমবায় ক্লাব নামের একটি সামাজিক সংগঠনের কার্যালয় ভাঙচুরের অভিযোগ উঠেছে সহদর প্রাইমারি স্কুলের দুই শিক্ষক ও তাদের চাচা গোলাম কবিরের বিরুদ্ধে। শনিবার (১৬.১১.২৪) ভোরের দিকে দূর্বৃত্তদের এনে ভেকু মেশিন দিয়ে এ সামাজিক সংগঠন ক্লাবের অফিসটি ভেঙে গুড়িয়ে দেয়। অভিযোগকারি শিক্ষক শেখর ইউনিয়নের সত্রকান্দা গ্রামের বাসিন্দা তৈয়েবুর রহমান মোল্যা সূর্য্যক সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারি শিক্ষক ও তাঁর ভাই আবু তাহের রহমান সোহাগ দেউলী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারি শিক্ষক এবং তাদের চাচা একই গ্রামের মো. গোলাম কবির মোল্যা।
সরেজমিনে গিয়ে জানা যায়, উপজেলার শেখর ইউনিয়নের সত্রকান্দা বট তলা রাস্তার পাশে যুবসমাজ ও প্রবীণদের নিয়ে ১৯৮৩ সালে পল্লী উন্নয়ন যুব সমবায় ক্লাবটির যাত্রা শুরু হয়। শুরুতে একটি ছাপড়া ঘরে কার্যক্রম চালানো হয়। গত দু বছর বিভিন্ন দানবীর ও স্থানীয় লোকজনের সহযোগিতায় আর সি সি প্লার করে পাকা স্থাপন তৈরী করা হয়। তবে এ জমি নিজেদের দাবী করে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারি শিক্ষক মো. তপু মোল্যা ও তাঁর ভাই সোহাগ ও চাচা গোলাম কবির মোল্যাসহ ১০-১৫ জন দূর্বৃত্তদের নিয়ে ভোরের দিকে ক্লাব ঘরটি ভেঙে দুমড়েমুচড়ে দেন। এনিয়ে এলাকার যুবসমাজ ও সংগঠনের নেতাকর্মীরা উত্তেজিত হয়ে উঠছে। কেন এ সামাজিক সংগঠনের অফিসটি ভাঙা হয়েছে।
পল্লী উন্নয়ন যুব সমবায় ক্লাবের উদ্যোক্তা মো. ইয়াছিন বলেন, ১৯৮৩ সালে এই ক্লাবটি স্থাপিত হয়। ১৯৮৪ সালে ৫ শতাংশ জমি এই ক্লাবের নামে দলিল করে করে দেন জমির মালিক সত্রকান্দা গ্রামের মৃত আব্দুল হক মোল্যা। সেখানে একটি ছাপড়া ঘরের মধ্যে আমরা কার্যক্রম চালিয়ে আসছি। তবে দুই বছর হয়েছে আর সিসি করে একটি বিল্ডিং করা হবে। তবে শনিবার সকালে ঘুম থেকে উঠে শুনি ক্লাব ঘরটির সেই আর সিসি প্লার ভাঙচুর করেছে। ক্লাব ঘরটি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক তৈয়েবুর রহমান তপু মোল্যা তাঁর ভাই শিক্ষক আবু তাহের রহমান সোহাগ মোল্যা ও তাদের চাচা গোলাম কবির সহ ১০-১৫ জন ভেকু দিয়ে ভেঙে দিয়েছে। আমরা এর তিব্র নিন্দা জানাই। আমরা এর সুষ্ঠু বিচার চাই। অনতিবিলম্বে তাদের আইনের আওতায় এনে সুষ্ঠু বিচার চাই। সেই সাথে ক্লাবের যে ক্ষতি সাধন করেছ তাঁর ক্ষতিপূরণ চাই।
স্থানীয় লোকজন বলেন, আমাদের যুব সমাজের একটি বসার স্থান ছিল এই ক্লাব ঘরটি। এমনকি আমরা এই ক্লাব থেকে সমাজের নানা উন্নয়ন মূলক কাজ ও করেছি। অসহায় হত দরিদ্রদের মাঝে আর্থিক সহযোগিতাও করেছি এ ক্লাবের পক্ষ থেকে। তবে এ ভালো কাজ সমাজের কিছু স্বার্থন্বেষী লোক ভালো চোখে দেখছে না। এজন্য এ ক্লাব টিকে উচ্ছেদ করতে তারা এমন ন্যাক্কারজনক কাজ ঘটিয়েছে। আমরা এর তীব্র নিন্দা জানাই।
শেখর ইউপি চেয়ারম্যান কামাল আহমেদ বলেন, ওই বটগাছের মোড় ক্লাবঘর নামে পরিচিত। আমার জানা মতে স্থানীয় যুবক, শিক্ষক, ছাত্র, এবং সমাজিক ও সুশীল সমাজের লোকজন উপস্থিত থেকে ভিত্তি প্রস্থ স্থাপন করেছিল। তবে যারা এটাকে ভাঙচুর করেছে নির্ঘাত এটা নিন্দনীয় কাজ।
সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক মো. তৈয়েবুর রহমান তপু বলেন, আমাদের পরিবারের সিদ্ধান্তে এটা ভাঙা হয়েছে। তবে এখানে কোন ক্লাব ছিলনা। একটি সমিতির নাম দিয়ে ঘর তুলেছিল। ক্লাব থাকলে তার রেজিষ্ট্রেশন থাকবে। আমরা গ্রামবাসি বসবো। তাঁর পর যা হয় হবে।
গোলাম কবিরের বাড়িতে গিয়ে তাকে পাওয়া যায়নি। তার মোবাইল নাম্বারে কল করলে বন্ধ পাওয়া যায়। এ কারণে তার বক্তব্য নেয়া হয়নি।
সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক আবু তায়ের রহমান সোহাগের মোবাইল বন্ধ পাওয়ায় বক্তব্য নেয়া সম্ভব হয়নি।হোয়াটসঅ্যাপে নক করা হলেও তিনি তার উত্তর দেননি।
বোয়ালমারী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ তানভীর হাসান চৌধুরী বলেন, এমন ঘটনা আমার জানা নেই। এমনটি ঘটলে থানা পুলিশ দেখবে। সংগঠনের রেজিস্ট্রেশন থাকে, তাহলে সমবায় পদক্ষেপ নিবে।
বোয়ালমারী থানার পরিদর্শক ( ওসি তদন্ত) মো. মজিবুর রহমান বলেন, আমরা এখনো এমন খবর পায়নি। কেউ আমাদের জানায়নি। অভিযোগ পেলে তদন্ত করে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।