ফরিদপুরের আলোচিত স্কুলছাত্র আলাউদ্দিন মাতুব্বর ওরফে অন্তর হত্যা মামলার যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত পলাতক আসামি আজিজুল শেখকে (৩০) দীর্ঘ ছয় বছর পর গ্রেপ্তার করেছে র্যাব-১০। শনিবার (১৮ মে) সকাল সাড়ে ১১ টার দিকে ফরিদপুর ক্যাম্পে প্রেস ব্রিফিংয়ে র্যাব-১০ এর অধিনায়ক লে. কমান্ডার কে এম শাইখ আকতার সাংবাদিকদেও এ তথ্য জানান। গ্রেপ্তার হওয়া আজিজুল শেখ ফরিদপুরের নগরকান্দা উপজেলার তালমা ইউনিয়নের মানিকদী গ্রামের বাসিন্দা।
এর আগে শুক্রবার (১৭ মে) জেলার ভাঙ্গা উপজেলার টোলপ্লাজা এলাকায় অভিযান চালিয়ে আসামি আজিজুল শেখকে গ্রেপ্তার করে র্যাব। প্রেস ব্রিফিং সূত্রে জানা যায়, ফরিদপুরের নগরকান্দার মানিকদী পাগলপাড়া এলাকার গ্রীস প্রবাসী আবুল হোসেন মাতুব্বরের ছেলে আলাউদ্দিন ওরফে অন্তর (৮ম শ্রেণির ছাত্র)।
২০১৮ সালের ৭ জুন মসজিদে তারাবির নামাজ পড়তে যাওয়ার পথে তাকে অপহরণ করা হয়। অপহরণকারীরা অন্তরকে জীবিত অবস্থায় ফেরত দিতে অন্তরের মা-বাবার কাছে মুক্তিপণ দাবি করেন। এরপর বিকাশের মাধ্যমে কিছু টাকাও দেয় অন্তরের পরিবার। শেষ পর্যন্ত অপহরণকারীরা অন্তরকে শ্বাসরোধ করে হত্যা করে। অনেক খোঁজাখুঁজি করে না পেয়ে অন্তরের মা জান্নাতি বেগম নগরকান্দা থানায় অভিযোগ করলে পুলিশ বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালিয়েও উদ্ধার করতে ব্যর্থ হয় অন্তরকে।
ঘটনার ২১ দিনপর ওই এলাকার একটি খাল থেকে অন্তরের গলিত লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। এ ঘটনায় অন্তরের মা জান্নাতি বেগম নগরকান্দা থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। মামলায় গত ২০১৮ সালের ১৫ অক্টোবর নগরকান্দা থানার উপপরিদর্শক (এসআই) নিখিল চন্দ্র অধিকারী মামলার চার্জশিট আদালতে দাখিল করেন। দীর্ঘ সাক্ষ্য ও শুনানি শেষে প্রায় ৬ বছর পর আদালত চলতি বছরের ২৭ মার্চ মামলার রায় ঘোষণা করেন।
এ মামলায় ৩ জনের মৃত্যুদণ্ড ও তিনজনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেন আদালত। র্যাব-১০ ফরিদপুর ক্যাম্পের অধিনায়ক লে. কমান্ডার কে এম শাইখ আকতার প্রেস ব্রিফিংয়ে জানান, স্কুলছাত্র আলাউদ্দিন মাতুব্বর ওরফে অন্তর হত্যা মামলার রায়ের পর থেকে যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত আসামি আজিজুল শেখ পলাতক ছিলেন। শুক্রবার (১৭ মে) র্যাবের একটি আভিযানিক দল গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে ফরিদপুর জেলার ভাঙ্গার টোলপ্লাজা এলাকা থেকে অভিযান পরিচালনা করে হত্যা মামলায় যাবজ্জীবন এবং ১ লক্ষ ২০ হাজার টাকা অর্থদন্ডে দন্ডিত সাজা প্রাপ্ত আসামি আজিজুল শেখকে গ্রেপ্তার করা হয়। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেফতারকৃত আসামি অপহরণ ও হত্যাকান্ডের সাথে তার সম্পৃক্ততার বিষয়টি স্বীকার করেছে।
গ্রেফতারকৃত আসামি আজিজুল বিজ্ঞ আদালত কর্তৃক যাবজ্জীবন রায় ঘোষনার পর দেশের বিভিন্ন এলাকায় বিভিন্ন ছদ্মবেশ ধারণ করে আত্মগোপন করে ছিল এবং সর্বশেষ পিরোজপুর জেলার ভান্ডারিয়া এলাকায় কাঠমিস্ত্রী, দর্জি ইত্যাদি পেশায় আত্মগোপন করে ছিল বলে জানা যায়।