ফরিদপুর শহরের প্রাণকেন্দ্রে অবস্থিত জেনারেল হাসপাতালের আঙ্গিনায় গাঁজা ও ভাং গাছের সমাহারের দৃশ্য নিয়ে ধুম্রজালের সৃষ্টি হয়েছে। অনেকের দাবি ভাং গাছের মধ্যে গাজা গাছও রয়েছে। উদ্ভিদবিদ ও প্রত্যক্ষদর্শীদের সাথে কথা বলে গাছ দুটির বিষয়ে জানা যায়। তবে, গাঁজা গাছ সাদৃশ্য গাছগুলো আকৃতিতে দুইভাগে বিভক্ত হলেও সেখানে গাঁজা গাছ রয়েছে কিনা নিশ্চিতভাবে জানাতে পারেনি মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর।
গতকাল সকালে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, হাসপাতালের উত্তর দিকে স্টাফ কোয়ার্টারের পথের দুই ধারে ও হাসপাতাল থেকে মসজিদে যেতে পথের ধারে অসংখ্য নেশা জাতীয় গাঁজা গাছ সাদৃশ্য গাছ রয়েছে। কোন কোন গাছ কয়েক ফুট লম্বা হয়েছে। যেগুলো থেকে গন্ধও ছড়াচ্ছে। সার্জারী বিভাগের উত্তর পাশে বদ্ধ জায়গাও ছোট-বড় অসংখ্য গাছ রয়েছে। এছাড়া হাসপাতালের যেখানে-সেখানে মেডিকেল বর্জ্য ও হাসপাতাল বর্জ্যরে স্তূপ দেখা যায়।
এর আগে ‘হাসপাতাল নয় যেন গাজার বাগান’ শিরোনামে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়। এরপর আজ সকাল থেকে অনেকেই সেখানে ভিড় করেন। এমনকি সিভিল সার্জন ও মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের একটি টিম পরিদর্শন করেন এবং নমুনা সংগ্রহ করেন।
ইমরোজ জামান এক প্রত্যক্ষদর্শী বলেন, এখানে ভাং গাছ রয়েছে, তার মাঝে গাঁজার গাছও রয়েছে। তবে দুটি গাছই নেশাজাতীয় দ্রব্য। গাজায় নেশা বেশি হয়, ভাং গাছে নেশা একটু কম হয়ে থাকে। কেউ হয়তো গাজা সেবন করে এখানে বীজ ফেলে রেখেছে, সেকারনে গাছগুলো হয়েছে।
তবে, গাছগুলোর আকৃতি-প্রকৃতি দেখে ভাং ও গাঁজা গাছে বিভক্ত করে নিশ্চিত করেন সরকারী রাজেন্দ্র কলেজের উদ্ভিদবিদ্যা বিভাগের প্রভাষক দীপংকর দাস। তিনি বলেন, গতকাল আমরা সেখানে গিয়েছিলাম। গাছগুলো দেখে আমাদের সন্দেহ রয়েছে। প্রাথমিক দৃষ্টিতে মনে হয়েছে, এখানে গাঁজা ও ভাং গাছ রয়েছে। গাছগুলো একই প্রজাতির। যেখানে স্ত্রী গাছকে বলা হয় গাঁজা এবং পুরুষ গাছকে বলা হয় ভাং। তবে, এগুলো দেখে লাগানো মনে হয়নি, হয়তো প্রাকৃতিকভাবে বেড়ে উঠেছে।
এদিকে হাসপাতালের এমন পরিবেশ দেখে বিস্ময় প্রকাশ করেন তরুণ সংগঠক আবরার নাদিম ইতু। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে দেখে তিনিও বন্ধুদের নিয়ে দেখতে এসেছেন। তিনি বলেন, এই হাসপাতালে আমরা যেকোন সমস্যা নিয়ে এসে থাকি। কিন্তু এসে দেখি চরম অব্যবস্থাপনার মধ্যে রয়েছে। অসংখ্য বর্জ্য ছড়িয়ে-ছিটিয়ে রয়েছে। আবার গতকাল দেখেছি, এখানে গাজার বাগান রয়েছে। এসেও দেখেছি। এখন গাছগুলো যদি সত্যিই গাজা হয়ে থাকে তাহলে আমাদের জন্য লজ্জাজনক।
গতকাল বেলা ১০ টার দিকে পরিদর্শনে আসেন হাসপাতালটির তত্ত্বাবধায়ক ও সিভিল সার্জন ডাঃ সিদ্দিকুর রহমান সহ একটি টিম। পরিদর্শন শেষে তিনি বলেন, আমি কোনদিন গাঁজা বা ভাং গাছ দেখিনি, একারনে সঠিকভাবে বলতে পারবো না। মাদক অধিদপ্তর গাছগুলোর নমুনা নিয়ে গেছে, পরীক্ষা শেষে তারাই বলতে পারবে।
এ বিষয়ে কথা হয় জেলা মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক শামীম হোসেনের সাথে। তিনি প্রবিবেদককে বলেন, গাজা সাদৃশ্য গাছগুলো কেমিক্যাল পরীক্ষা না করেই নিশ্চিত বলা যাচ্ছে না যে, এগুলো আসলে গাঁজা বা ভাং গাছ কি-না। হোয়াইট ক্যানাভিস টাইপের গাছও হতে পারে, যেগুলো বন্যভাবে যেখানে-সেখানে হয়ে থাকে।
তিনি আরও বলেন, এটা যদি কারো ব্যক্তিগত জায়গায় হতো তাহলে আমরা আইনগত প্রক্রিয়ায় যেতে পারতাম। যেহেতু এটি সরকারি প্রতিষ্ঠান সেহেতু হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ যদি আমাদের অনুরোধ করে তাহলে আমরা সেন্ট্রাল কেমিক্যালে এগুলোর নমুনা পাঠাবো এবং পরীক্ষা শেষে নিশ্চিত করে জানাতে পারবো।