মুকসুদপুর উপজেলায় গত কয়েকদিনের প্রচন্ড তাপদাহ ও লোডশেডিংয়ে জনজীবন বিপর্যস্ত ও দুর্বিষহ হয়ে ওঠেছে। হুমকির মুখে রয়েছে শিশু স্বাস্থ্য। ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে কৃষক ও শিক্ষার্থীরা এবং উৎপাদনমুখী কল-কারখানার মালিকরা। পায়রা তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র বন্ধ হওয়ার কারণে লোডশেডিংয়ের প্রভাব বলে মনে করেন বিশ্লেষকরা।
তীব্র গরমে পুড়ছে জনপদ, মাঠ-ঘাট ও শষ্যের ক্ষেত। কোথাও স্বস্তির বাতাস নেই। সর্বত্র গরম আর গরম, কখনও প্রচন্ড, আবার কখনও ভ্যাপসা গরম। বৈশাখ শেষ, জ্যৈষ্ঠ মাসও শেষের পথে তবুও বৃষ্টির দেখা নেই। ভ্যাপসা গরমের তান্ডব চলছে জনপদে, সূর্যের প্রখরতা ক্রমান্বয়ে বৃদ্ধি পাচ্ছে। দুপুর হতে না হতেই সড়ক বাজারে লোক কমে যাচ্ছে। একটু প্রশান্তির জন্য গাছতলায় ঠাই নিচ্ছে মানুষ। অসহনীয় তাপ, রৌদ্রযন্ত্রণা- সেই সাথে পানি সঙ্কটে জনজীবনকে আরও এক ধাপ বিপর্যয়ের মুখে নিক্ষিপ্ত করছে।
প্রাকৃতিক গরমের সাথে যোগ হয়েছে লোডশেডিং। লোডশেডিং এর কারণে লেখাপড়া করতে পারছে না শিক্ষার্থীর। হাসপাতালগুলোতে অসুস্থ রোগীরা কাতরাচ্ছে। বিপর্যস্ত জনজীবনের পাশাপাশি উৎপাদন কমে যাচ্ছে কল-কারখানাগুলোতে। অনাবৃষ্টি এবং লোডশেডিংয়ে অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে চাষাবাদ, ফসলের মাঠ ফেটে চৌচির, বীজতলা শুকিয়ে যাচ্ছে। বীজতলা সেচের মাধ্যমে উর্বর রাখার চেষ্টা করা হচ্ছে। ফলে কৃষকের উৎপাদন ব্যয় বৃদ্ধি পাচ্ছে। অধিকাংশ এলাকায় পানির স্তর নিচে নেমে গেছে। গরমে কেবলমাত্র জনজীবনেই অস্থিরতা আনছে না, নানান ধরনের গরমজনিত এবং পানি বাহিত রোগ ছড়িয়ে পড়ার সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। যেখানে বেশি ক্ষীতগ্রস্ত হচ্ছে শিশুরা। শিশুদের একটু আরাম দেয়ার জন্য একটু ছায়াতল ঠান্ডা জায়গা খুজছে অভিভাবকরা। এদিকে বাজারে দেখা মিলছে না চার্জার ফ্যান ও সৌর বিদ্যুতের।
অতি গরম হিটস্ট্রোকের কারণ হিসেবে জানান দিচ্ছেন চিকিৎসকরা, আবহাওয়াবিদরা বলছেন, বৃষ্টিপাত হলে তাপমাত্রা কিছুটা হ্রাস পেতে পারে। আবহাওয়া দপ্তরের তথ্য আগামি দিনগুলোতে বেশি পরিমাণ তাপদাহ আসছে, তাপদাহ জনজীবনের দুরবস্থার সব ক্ষেত্রই বিস্তৃত করেছে। তাপদাহ আর রৌদ্রের প্রখরতা হতে মুক্ত থাকতে হিটস্ট্রোক, পানিবাহিত ও গরমজনিত রোগের কবল হতে মুক্ত রাখতে সূর্যের প্রখরতা ভেদ করে বাইরে নয়, ঘাম ঝরানো নয়, সহনীয় ঠান্ডা আবহাওয়ায় নিজেকে সম্পৃক্ত করার পরামর্শ দিয়েছেন আবহাওয়াবিদ এবং চিকিৎসকরা।
উপজেলার গোপালপুর গ্রামের জসিমউদ্দীন জানান, গত কয়েকদিন ধরে শোডশেডিং আর গরমের কারণে ঘুমাতে পারছেন না। ছোট দুই সন্তানকে নিয়ে খোলা আকাশের নিচেই বসে থাকতে হয় আমাদের। কারেন্ট যাওয়া-আসার মধ্যে থাকছে। তিনি বলেন, একবার কারেন্ট গেলে দেড় ঘণ্টা খবর নেই। আসলে আবার ৪০ মিনিট থাকছে। গড়ে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে ১৩ ঘণ্টার বেশি লোডশেডিং হচ্ছে। এভাবে থাকা খুব কঠিন।
রসুলপুর গ্রামের বাসিন্দা শরিফুল ইসলাম জানান, আমি ফ্রিল্যান্সিং করি। কিন্তু লোডশেডিংয়ের কারণে তার কাজেও সমস্যা হচ্ছে। এই উদ্যোক্তা জানান, এখন লোডশেডিং অত্যাচারের পর্যায়ে পৌঁছে গেছে। একবার কারেন্ট এসে ফ্যান চালু না হতেই আবার চলে যাচ্ছে। কম্পিউটারে কাজ শুরুই করা যাচ্ছে না। লোডশেডিং দেখে মনে হচ্ছে আমরা ২০ বছর পিছিয়ে গেছি।