ভুয়া সনদধারী ডক্টর দীর্ঘদিন ধরে সমাজ সেবা মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন চাকরি করছেন। ধাপে ধাপে পেয়েছেন পদোন্নতি। বিভিন্ন অনুষ্ঠানে মন্ত্রী প্রধান অতিথি থাকলে ডক্টর আবদুর রহমান থাকেন উদ্বোধক, আবার কখনো বিশেষ অতিথি। এসব পরিচিতি কাজে লাগিয়ে বিভিন্ন সময়ে প্রতারণা অনিয়ম ও দুর্নীতি করে রাতারাতি বনেগেছে কোটিপতি। ডক্টর এ রহমান এখন দানবীর। নিজের পরিচয় ভাঙ্গিয়ে কৌশলে ভাগিয়ে নিয়েছেন স্ত্রীর চাকরি। স্বামী স্ত্রী দু’জনেই এখন সরকারি চাকুরে। কে এই রহমান ? চলমান সমাজ ব্যবস্থায় কর্মের থেকে ডিগ্রী যেন বেশি প্রয়োজন। আবার যোগ্য মেধাবী জ্ঞানীরা প্রচার বিমুখ। মিথ্যা বাহবা কুড়াতে মরিয়া অনেকে। মেধা যোগ্যতা যাই থাকুক ডিগ্রী সনদের ভারে নুয়ে পড়া ব্যক্তিরা কখনো হন আলোচিত আবার কখনো সমালোচিত। ডক্টর অব ফিলোসোফির নীতিমালা মেনে কতজন এই ডিগ্রী গ্রহণ করেছে তার সঠিক তথ্য নেই সরকারের কোনো দপ্তরে। জানা অজানায় ডক্টর ডিগ্রীতে ছেয়ে গেছে দেশ। পর্দার আড়ালে থেকে বহু ভূয়া ডক্টর ডিগ্রী ধারীরা নিত্য জন্ম দিচ্ছে ভয়ংকার অপরাধ। বেশ কয়েক বছর ধরে এলাকায় ডক্টর হিসেবে ব্যাপক পরিচিতি পেয়েছেন আবদুর রহমান। গোখলা লু-লুয়ে দ্বীন ইসলামিয়া দাখিল মাদ্রাসার চলতি সালের ফেব্রæয়ারি মাসে বার্ষিক ক্রীড়া, ইসলামী সাংস্কৃতিক প্রতিযোগীতা ও পুরষ্কার বিতরণী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে নরসিংদী-৪ আসনের এমপি, বিশিষ্ট আইনবিদ, জননেতা শিল্পমন্ত্রী আলহাজ্ব এডভোকেট নূরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ূন আর অনুষ্ঠানের উদ্বোধক হিসেবে ডক্টর আবদুর রহমানের নাম ব্যাপক প্রচার প্রচারণা পেলে জনমনে প্রশ্ন জাগে, কে এই ডক্টর আবদুর রহমান? তথ্যানুসন্ধানে জানা যায়, নরসিংদী জেলার মনোহরদী উপজেলার গোখলা গ্রামের আবদুল কুদ্দুসের পুত্র রহমান’ই ডক্টর আবদুর রহমান। পরিবারের সকলে স্বাধীনতার বিপক্ষ শক্তির রাজনৈতিক দলের সাথে জড়িত। মুক্তি সংগ্রামে বাবা আবদুল কুদ্দুসের অবস্থানও বিতর্কিত। এলাকায় সরকার দলীয় বিদ্বেষী পরিবার হিসেবে সবাই চেনে জানে। আবদুর রহমান ১৯৮৪ সালে হাতির দিয়া ছাদত আলী আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয় হতে এসএসসি পাশ করে এইচএসসি ভর্তি হন মনোহরদী রাজিউদ্দীন ডিগ্রী কলেজে। ছাত্র হিসেবে তেমন মেধাবী না হওয়ায় কোনো রকম এইচএসসি পাশ করে একই কলেজে ¯œাতক শ্রেণিতে ভর্তি হয়ে ১৯৮৯ সালে অনুষ্ঠিত ডিগ্রী পরীক্ষায় পাশ করেন। সমাজ সেবার প্রকল্পে চাকুরী জীবন আরম্ভ করেন আবদুর রহমান। ১৯৯৮ সরকারের শাসনামলে সমাজসেবা প্রকল্পে কর্মরত ৬৮ জন কর্মীকে মানবিক বিবেচনায় চাকরি স্থায়ীকরণ করা হয়। রাজধানী শহরে দীর্ঘ জীবনযাপনের কারণে এলাকার সাধারণ জনগণ ও তরুণ প্রজম্মের কাছে একেবারে অপরিচিত মুখ আবদুর রহমান। বিভিন্ন সময়ে একাধিক পথ-পদ পাড়ি দিয়ে এখন সমাজসেবা মন্ত্রণালয়ের অধীনে বিশেষ শিক্ষা শিক্ষক প্রশিক্ষণ কলেজের প্রভাষক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন আবদুর রহমান। কাজের থেকে অকাজে বেশ সুচতুর আবদুর রহমান এখন কোটিপতি দানশীল ব্যক্তি। সরকার প্রশাসনের চোখ ফাঁকি দিয়ে আবদুর রহমান অনৈতিক পথে হাতিয়ে নিয়েছে কোটি কোটি টাকা। এলাকায় হঠাৎ দান-খয়রাত করে আলোচনায় উঠে আসে কোটিপতি আবদুর রহমান। রাজধানীর প্রাণ কেদ্র মিরপুরে কিনেছেন আলীশান ফ্লাট, মদনপুরে রয়েছে প্লট। নামে বেনামে রয়েছে অঢেল সম্পদ। কর্মস্থল মিরপুর-১৪ তে অবস্থিত বিশেষ শিক্ষা শিক্ষক প্রশিক্ষণ কলেজে গিয়ে দেখা যায় তার নেমপ্লেটে লেখা আছে আবদুর রমান, প্রভাষক (দৃষ্টি প্রতিবন্ধকতা বিভাগ) বিশেষ শিক্ষা শিক্ষক প্রশিক্ষণ কলেজ, জাতীয় বিশেষ শিক্ষা কেন্দ্র। এখানে আবদুর রহমান নামের পূর্বে ডক্টর ব্যবহার করতে দেখা যায়নি। এই বিষয়ে জানতে চাইলে আবদুর রহমান জানান, তিনি ইন্ডিপেন্ডেন্ট ইউনির্ভাসিটি হতে ২০১৭ সালে ডক্টরেট ডিগ্রী গ্রহণ করেছেন। ডিগ্রী গ্রহণের দাবি করলেও বিশ্ববিদ্যালয়টিতে খোঁজখবর নিয়ে তার সত্যতা পাওয়া যায়নি। এলাকার বিভিন্ন অনুষ্ঠানে ডক্টর হিসেবে তার উপাধী ব্যবহার করে অতিথির আসন অলংকৃত করার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি যশোর বার্তাকে জানান, এলাকার সুধীমহল খুশী হয়ে এমনটা করলে আমি কি করতাম। নামের আগে ডক্টর ডিগ্রী ব্যবহারের বিষয়ে বারণ করেছেন কিনা এমন প্রশ্নে, তিনি জানান অনেক বার নিষেধ করেছি তারা মানেনা, অহন কি করতাম।’ আপনি যেহেতু পিএইচডি ডিগ্রী অর্জন করেছেন সেহেতু নিষেধ করবেন কেনো? এমন প্রশ্নের জবাবে, তিনি কোনো জবাব দেননি. প্রশ্নের জবাব এড়িয়ে যান। কর্মক্ষেত্রে আবদুর রহমানের নানা কর্মকান্ড নিয়েও রয়েছে ধোয়াশা। প্রকৃতার্থে দেশের সাধারণ মানুষের কাছে পিএইচডি ডিগ্রী অতিমূল্যবান, সেই ক্ষেত্রে বিশেষ জ্ঞানী ব্যক্তিরা এই ডিগ্রী অর্জন করে থাকেন। আবার অপকর্মে সুচতুর লোকেরা মিথ্যে সম্মান কুড়াতে যে করে হোক এই মূল্যবান ডক্টরেট ডিগ্রী সনদ হাতিয়ে সম্মানিত হবার চেষ্টা করে। আবদুর রহমানের মতো কেউ কেউ কোনো সনদ ছাড়াই রাতারাতি টাকার জোরে হয়ে যান ডক্টর। সরকারি চাকরি করার সুবাদে অনিয়মে হয়ে যায় কোটিপতি। সরকার প্রশাসন এসব রহমানদের অনিয়ম দুর্নীতির গতি ফিরিয়ে নিয়মে আনতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন এমনটাই আজকের প্রতিবেদনের প্রত্যাশা।