ফরিদপুরে ভারি বর্ষণের সাথে আকস্মিক ঝড়ে বিধ্বস্ত হয়েছে তিনটি উপজেলার অন্তত ১০টি গ্রাম। এতে দুমড়ে-মুচড়ে গেছে গ্রামগুলোর অধিকাংশ বসতঘর ও উপড়ে পড়েছে শত শত গাছপালা। ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে ফসলি মাঠ। এছাড়া ঝড়ে ঘরের উপর গাছ পড়ে এক অন্তসত্ত¡া নারীর মৃত্যু হয়েছে। তাৎক্ষণিকভাবে ক্ষতিগ্রস্থদের পাশে দাড়িয়েছেন জেলা প্রশাসন। গতকাল শুক্রবার দুপুর থেকে ক্ষতিগ্রস্থ এলাকা পরিদর্শন করেন জেলা প্রশাসক মোঃ কামরুল আহসান তালুকদার।
তবে, সঠিক ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ এখনও সঠিকভাবে জানা যায়নি বলে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাগণ জানিয়েছেন। তারা জানিয়েছেন, তিনটি উপজেলায় প্রায় চার শতাধিক পরিবার ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে।
বৃহস্পতিবার (০৫ অক্টোবর) ভোর থেকে জেলা জুড়ে শুরু হয় মুষলধারে ভারি বর্ষণ। চলে গতকাল শুক্রবার সকাল পর্যন্ত। এতে বিপর্যস্ত হয়ে পড়ে জনজীবন। জেলায় চলতি বছরের সর্বোচ্চ বৃষ্টিপাত হয়েছে বলে জেলা আবহাওয়া অধিদপ্তরের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা জাহাঙ্গীর আলম জানিয়েছেন। তিনি জানান, গত ২৪ ঘন্টায় ১২৯ দশমিক ৯ মিলিমিটার বৃষ্টি রেকর্ড করা হয়েছে।
এদিন সন্ধ্যায় আকস্মিক ঝড় হয় জেলার আলফাডাঙ্গা, সালথা ও ভাঙ্গা উপজেলায়। এতে উপজেলাগুলোর অন্তত ১০টি গ্রামের প্রায় দুই শত ঘরবাড়ি বিধ্বস্ত হয়েছে বলে বিভিন্ন সুত্রে জানা গেছে। তবে, শুক্রবার সন্ধ্যা পর্যন্ত উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাগণের হিসাবে প্রায় চার শতাধিক পরিবার ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। এছাড়া ৭৬টি বসত ঘর বেশিগ্রস্থ হয়েছে বলে তারা জানিয়েছেন।
ঝড়ে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে আলফাডাঙ্গা উপজেলার সদর ইউনিয়ন ও টগরবন্ধ ইউনিয়নে ইউনিয়নের অন্তত ৬টি গ্রাম। ক্ষতিগ্রস্থ গ্রামগুলোর মধ্যে রয়েছে সদর ইউনিয়ন বিদ্যাধর, ব্রাহ্মণ-জাটিগ্রাম, বেজিডাঙ্গা ও টগরবন্ধ ইউনিয়নের মালা, কৃষ্ণপুর-টগরবান, তিতুরকান্দি।
গ্রামগুলোতে ঝড়ের স্থায়িত্ব ছিলো মাত্র একমিনিট। এতে শতাধিক কাঁচা-পাকা ঘরবাড়ি বিধ্বস্ত হয়েছে, উপড়ে পড়েছে কমপক্ষে তিনশতাধিক গাছপালা। এছাড়া ৩টি বিদ্যুতের খুঁটি উপড়ে পড়ে ওই এলাকায় বিদ্যুৎ সংযোগ বন্ধ রয়েছে। তবে কোন হতাহতের ঘটনা না ঘটলেও ক্ষতিগ্রস্তরা অনেকেই খোলা আকাশের নিচে ও আশপাশের বাড়ি-এলাকায় অবস্থান নিয়েছে।
টগরবন্ধ ইউনিয়নের বাসিন্দা ও উপজেলা পরিষদের মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান লায়লা বেগম বলেন, খবর পেয়ে ক্ষতিগ্রস্তদের মাঝে গিয়ে সাধ্যমতো সহোযোগিতার চেষ্টা করা হয়। টগরবন্ধ ইউনিয়নে তিনটি গ্রামের ৬০ থেকে ৭০ টি কাচাপাকা বাড়িঘর ও কয়েকশত গাছপালা ভেঙ্গে চুড়ে উপড়ে পড়ে।
উপজেলাটির নির্বাহী কর্মকর্তা রফিকুল হক জানান, ঝড়ে উপজেলার ২/৩টি গ্রামের ২০টি ঘরবাড়ি বিধ্বস্ত হয়েছে। এতে শুক্রবার বিকাল পর্যন্ত প্রায় দেড় শতাধিক পরিবার ক্ষতিগ্রস্থ পরিবারের তালিকা করা হয়েছে। চ‚ড়ান্ত তালিকা করে সহায়তা দেয়া হবে। এছাড়া শনিবার ১০ কেজি চাল ও ডাল, তেল সহ তাৎক্ষণিক সহায়তা দেয়া হবে।
এদিকে সালথা উপজেলার বল্লভদী ইউনিয়নের সোনাতন্দী নামে একটি গ্রামে ঝড়ের আঘাত হানে। বিকাল সাড়ে ৫টার দিকে ঝড়টির স্থায়িত্ব ছিলো মাত্র তিন মিনিট বলে স্থানীয়রা জানায়। এতে ভেঙ্গে গেছে ২১ টি ঘরবাড়ি ও অসংখ্য গাছপালা।
উপজেলাটির নির্বাহী কর্মকর্তা আনিচুর রহমান বালি জানান, উপজেলার শুধু একটি গ্রামেই ঝড়ে ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। গ্রামটির অন্তত ২১টি ঘরবাড়ির ক্ষতি হয়েছে এবং ১০/১২টি ঘরের বেশি ক্ষতি হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্থদের মাঝে তাৎক্ষণিক সহায়তা হিসেবে ২৫ কেজি চাল, ডাল, তেল ও লবণ দেয়ার প্রস্তুতি চলছে।
বিকালে উপজেলাটির ক্ষতিগ্রস্থদের পাশে ছুটে যান স্থানীয় সংসদ সদস্য শাহদাব আকবর লাবু চৌধুরী। এ সময় তিনি ২১টি পরিবারের প্রত্যেককে ২৫ কেজি চাল, ৫ কেজি আলু, ২ কেজি ডাল, ২ কেজি তেল, ১ কেজি পেঁয়াজ ও ২ কেজি লবন বিতরণ করেন।
এছাড়া টানা প্রবল বর্ষণে রোপা আমন সহ মাঠে থাকা বিভিন্ন ফসলের মাঠ তলিয়ে যাওয়ায় ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে বলেও খবর পাওয়া গেছে। নি¤œাঞ্চলে বসতবাড়িতে ঢুকে গেছে পানি। এছাড়াও পানি নিষ্কাশন না হওয়ায় চরম দুর্ভোগে পড়েছে সাধারন মানুষ। বৃষ্ট চলমান থাকলে এবং ফসলের মাঠে পানি না নামলে ক্ষতিগ্রস্ত হবে সব শ্রেনীর কৃষক।
উপজলা কৃষি অফিসার কৃষিবিদ সুদর্শন সিকদার বলেন, চলতি রোপা মৌসুমে উপজেলায় ১২৯৭০ হেক্টর জমিতে রোপা আমন ধান আবাদ হয়েছে। টানা বর্ষনে ফসলের মাঠে পানি জমে গেছে। প্রায় হেক্টর জমির ধান তলিয়ে গেছে, বৃষ্ট অব্যাহত থাকলে ক্ষয়ক্ষতির পরিমান বাড়তে পারে। ঘূর্ণঝড় এলাকাতেও ফসলের ক্ষতি হয়েছে। আগামী দুদিনের মধ্যে পানি জমে না নামলে ফসল নষ্ট হয়ে যেতে পারে। তাছাড়া যেকোন প্রোয়জনে উপজেলা কৃষি অফিসে যোগাযোগ করতে বলা হয়েছে।
অপরদিকে ঝড়ে আঘাত হেনেছে ভাঙ্গা উপজেলার দুটি ইউনিয়নের কয়েকটি গ্রামে। গ্রামগুলো হলো আজিমনগর ইউনিয়নের পুকুড়পাড়, ঈশ্বরদি, হামিরদি ইউনিয়নের ছোট হামিরদি ও বড় হামিরদি এবং পুকুরিয়া ও নওয়াপাড়া। এতে ৩০/৩৫টি ঘরবাড়ির ক্ষতি হয়েছে বলে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আজিম উদ্দিন জানিয়েছেন। তিনি জানান, এতে প্রায় দুইশত পরিবার ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। তাৎক্ষণিকভাবে জেলা প্রশাসনের সহায়তায় ক্ষতিগ্রস্থদের ১০ কেজি চাল, এক কেজি তেল ও ডাল দেয়া হয়েছে।
তিনি আরও জানান, ঝড়ে উপজেলার ছোট হামিরদি গ্রামের ঝর্ণা বেগম নামে অন্তসত্ত¡া নারীর মৃত্যু হয়েছে। সে ওই গ্রামের শাহাবুদ্দিন শেখের স্ত্রী। তাৎক্ষণিকভাবে পরিবারটিকে ২০ হাজার টাকার সহায়তা দেয়া হয়েছে।
জেলা প্রশাসক(ডিসি) মোঃ কামরুল আহসান তালুকদার বলেন, হঠাৎ করে ঘুর্ণিঝড়টি রুপ নেয়। স্থানীয় উপজেলা প্রশাসন ও জনপ্রতিনিধিসহ সংশ্লিষ্টদের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ক্ষতিগ্রস্তদের সর্বাত্মক সাহায্য সহযোগিতা করা হবে।