ফরিদপুরের সদরপুরে ভাতিজাদের ধারালো চাপাতির কোঁপে জখম হয়েছে কাজী ওবায়দুর রহমান নামের এক ব্যক্তি। তবে, এ ঘটনার নেপথ্যে ওই চাচার সাথে তার অর্ধ বয়সি ভাতিজির সাথে প্রেম এবং বিয়ের ঘটনা রয়েছে বলে উঠে এসেছে।
গত বৃহস্পতিবার দুপুরে উপজেলার চরবিষ্ণুপুর ইউনিয়নের কাজীরডাঙ্গী এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। আহত চাচা কাজী ওবায়দুর রহমান (৪০) ওই গ্রামের মৃত ইমদাদ কাজীর ছোট ছেলে এবং তার স্ত্রী ও দুই সন্তান রয়েছে। বর্তমানে তিনি ফরিদপুর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ট্রমা সেন্টারে চিকিৎসাধীন আছেন।
আহত ওবায়দুর কাজী তার চাচাতো ভাই সেলিম কাজীর কলেজ পড়–য়া মেয়ে স্বর্ণা আক্তারকে (২০) প্রেমের ফাঁদে ফেলে বিয়ে করেছেন বলে স্থানীয়রা জানায়। এ ঘটনায় ওই এলাকায় আলোচনার জন্ম দিয়েছে এবং মেয়ের পরিবার লোকলজ্জায় বাড়ি থেকে বের হতে পারছেন না এবং বর্তমানে তারা নিরাপত্তাহীনতায় আছেন বলে জানিয়েছেন।
গতকাল রবিবার ওই এলাকায় গিয়ে কথা হয় একাধিক স্থানীয় ব্যক্তির সাথে। তারা জানায়, ওবায়দুর ও স্বর্ণা সম্পর্কে চাচা-ভাতিজি। ওবায়দুরের বাবা এবং স্বর্ণার দাদা আপন ভাই। তাদের এমন সম্পর্ক হবে কেউ কখনো ধারণাও করতে পারেনি। এটা সমাজে ঘৃণিত কাজ এবং সমাজ কখনো মেনে নিবে না।
জানা যায়, গত ৪ বছর যাবৎ ভাতিজি স্বর্ণার সাথে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে তোলেন চাচা ওবায়দুর কাজী। অনার্সে পড়ার সুবাদে গত দুই বছর আগে ফরিদপুর শহরের একটি মেসে থাকতে শুরু করে স্বর্ণা আক্তার। এই সুযোগে স্বর্ণাকে বিভিন্ন জায়গা ঘুরতে নিয়ে যেত ওবায়দুর। তখন থেকে তাদের সম্পর্ক গভীরে রুপ নেয়। এক পর্যায়ে গত তিন মাস আগে ওবায়দুরের সাথে পালিয়ে ঢাকায় চলে যায় সে। এরপর মেয়ের পরিবারের সন্দেহ হলে ওবায়দুরকে একমাত্র আসামী করে গত ২৪ জুলাই ফরিদপুরের নারী ও শিশু নির্যাতন ট্রাইব্যুনালে মামলা করেন স্বর্ণার বাবা কাজী সেলিম। এরপর তারা দুজনে বিয়ে করেছেন বলে জানায়।
এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে বৃহস্পতিবার দুপুরে কৃষি কাজ করার সময় ওবায়দুরের উপর হামলা চালায় সেলিম কাজীর ছেলে নিশাত (১৮) ও তার আরেক চাচাতো ভাইয়ের ছেলে ইমন। এ সময় তার দুই পায়ে ধারালো ছুড়ি দিয়ে কুঁপিয়ে জখম করা হয়।
শনিবার রাতে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ওবায়দুর কাজী বলেন, আমার দুঃসম্পর্কীয় এক আত্মীয়ের মেয়ের সাথে আমার প্রেমের সম্পর্ক গড়ে উঠে। আমরা দুজনে বিয়েও করেছি। বর্তমানে আমরা সংসার করছি। কিন্তু বৃহস্পতিবার আমার স্ত্রীর দুই ভাই আমার উপর অতর্কিতভাবে হামলা চালিয়েছে।
বিষয়টি নিয়ে স্বর্ণার বাবা সেলিম কাজী বলেন, ওবায়দুর এমন কাজ করবে কখনো ভাবতে পারিনি। তারা চাচা-ভাতিজি অনেক সময় বাড়িতে কথা বলতো সেটা দেখে কখনো মনে হয়নি তারা সম্পর্কে জড়িয়ে পড়েছে। এটা কিভাবে সন্দেহ হবে। কারণ, সেতো চাচা এবং বিবাহিত। ও (ওবায়দুর) আমার মেয়ে এবং আমাদের ক্ষতি করে ফেলেছে। সমাজে আমরা মুখ দেখাতে পারতেছি না। মানুষ অনেক কথা বলাবলি করছে। আমার ছেলের বন্ধুরা ছেলেকে অনেক খারাপ কথা বলছে। ও হয়তো কথাগুলো সহ্য করতে পারেনি। যে কারনে ওবায়দুরকে মারধর করেছে। এটাই আমাদের অপরাধ।
তিনি বলেন, চাচা হয়ে কিভাবে ভাতিজির সাথে প্রেম করে? এখন শুনতেছি ওরা বিয়েও করে ফেলেছে। আমি এ ঘটনার ন্যায্য বিচারের দাবি জানাই।
স্বর্ণার মা এ প্রতিবেদককে বলেন, স্বর্ণা আমার খুব আদরের মেয়ে ছিলো। কত কষ্ট করে ওরে বড় করেছি। আমরা কিভাবে বিশ্বাস করবো, চাচা হয়ে তার ভাতিজাকে প্রেমেরে ফাঁদে ফেলিয়ে বিয়ে করবে। ও (ওবায়দুর) আমার কলিজা ছিড়ে নিয়ে গেছে। আমার ছেলে আমাকে বলতো, মা আপুকে নিয়ে আমাদের কত স্বপ্ন ছিলো। এখন আপুইতো আমাদের চিনে না। আমার ছেলে হয়তো এগুলো সহ্য করতে পারেনি, ওর বোনকে এভাবে নিয়ে গেছে।
তিনি আরও বলেন, ওবায়দুরকে মারধর করার পর ওর (ওবায়দুর) ভাগ্নে চরচাঁদপুর গ্রামের হেদায়েত, শোয়েব, ইব্রাহিম, সিরাজ সহ কয়েকজন প্রকাশ্যে চাপাতি নিয়ে আমাদের বাড়ির চারপাশে ঘুরে বেড়ায়। আমার ছেলেকে ওরা যেখানে পাবে সেখানেই নাকি মেরে ফেলবে। এখন আমি আমার ছেলেকেও হারাতে চাই না, মেয়েতো হারিয়ে গেছে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে তাদের এক স্বজন জানায়, ওবায়দুর স্বর্ণাকে বিদেশে নিয়ে যাওয়ার লোভ দেখিয়ে প্রেমের ফাঁদে ফেলেছে। ওদের দুজনের বয়সের তফাত ২০ বছর।
তবে, এ ঘটনায় ওবায়দুর কাজীর বিচারের দাবি জানিয়েছেন স্থানীয়রা। স্থানীয় একাধিক ব্যক্তি এ প্রতিবেদককে বলেন, ক্ষোভে হয়তো ওবায়দুরকে মারধর করেছে। কিন্তু ওবায়দুর যে কাজ করেছে তা সমাজে ঘটে না। ওর উপযুক্ত শাস্তি হওয়া উচিৎ।