ফরিদপুরের মধুখালী উপজেলার দয়ারামপুর গ্রামের পাকা সড়কের পশ্চিম পাশে অবস্থিত আশ্রয়ন প্রকল্পের বাসিন্দাদের কোনো রাস্তা না থাকায় চলাচলে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি হয়েছে। তারা পূর্ব পাশে ব্যক্তি মালিকানাধী জমি দিয়ে চলাচল করতেন কিন্তু বৃষ্টিতে কাঁদা হওয়ার কারনে আরও ভোগান্তিতে পড়েছেন। এ ভোগান্তি থেকে রক্ষা পেতে প্রশাসনের সহযোগিতা কামনা করছেন উপকারভোগী ব্যক্তিরা।
গতকাল বুধবার সরেজমিনে গিয়ে ঘটনার সত্যতা পাওয়া যায়। স্থানীয় বাসিন্দাদের সাথে কথা বলে জানা যায়, আশ্রয়ন প্রকল্পের বসবাসকারীদের চলাচলের রাস্তা না থাকায় প্রধানমন্ত্রীর উপহার হিসেবে দেওয়া আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘরের উপকারভোগী ব্যক্তিরা দুর্ভোগ ও ভোগান্তিতে পড়েছেন। তাঁরা এখন প্রকল্প সংলগ্ন বিভিন্ন বাড়ি ও জমির ওপর দিয়ে যাতায়াত করছেন।
উপজেলা প্রশাসন সুত্রে জানা যায়, মুজিব বর্ষ উপলক্ষে প্রধানমন্ত্রীর উপহার হিসেবে আশ্রয়ণ প্রকল্পের (দ্বিতীয় পর্যায়) আওতায় উপজেলার কামারখালী ইউনিয়নের দয়ারামপুর গ্রামে প্রায় ১ একর জমিতে ৪৯টি পরিবারকে দুই কক্ষবিশিষ্ট আধাপাকা ঘর নির্মাণ করে দেওয়া হয়। প্রায় দুই বছর আগে আনুষ্ঠানিকভাবে এসব ঘর হস্তান্তর করা হয়। বর্তমানে এই গুচ্ছগ্রামে প্রায় দেড় শতাধিক মানুষ বাস করেন।
গুচ্ছগ্রামটি ঘুরে দেখা যায়, প্রতিটি ঘরে বিদ্যুৎ, পানি, শৌচাগার ও রান্নাঘরের সুবিধা রয়েছে। কিন্তু গুচ্ছগ্রাম থেকে মূল সড়কে আসা ও যাওয়ার কোনো রাস্তা নেই। ফলে গুচ্ছগ্রামে বসবাসকারী মানুষ আশপাশের বাড়িঘরের উঠান ও ফসলি জমির ওপর দিয়ে যাতায়াত করছেন। প্রায়ই সেসব বাড়িঘর ও জমির মালিকেরা তাঁদের চলাচলে বাঁধা দেন। ফলে গুচ্ছগ্রামের বাসিন্দারা তাঁদের চলাচলে বিড়ম্বনা, দুর্ভোগ ও ভোগান্তি পোহাচ্ছেন। এ সময় উপকারভোগী রতন মৃধা বলেন, ‘আমি ভ্যান চালাইয়া কাজ কইরা সংসার চালাই। নিজের কোনো জায়গা-জমি নাই। বাইরে যাইয়া ভ্যান চালাতে হয়। কিন্তু চলাচলের রাস্তাঘাট না থাকায় অনেক সমস্যা হইতাছে। আশপাশের বাড়িঘরের ওপর দিয়া যাওয়ার সময় ভ্যান নিলে তারা বাঁধা দেয়। আর বলে সরকার তোগরে ঘর দিছে। তোরা সরকারি জায়গা দিয়া চলাচল করগা। কিন্তু চলাচলের জন্য সরকারের কোনো রাস্তা না থাকায় আমগরে খুব কষ্ট ও সমস্যা হইতাছে।’
তাছাড়া পাকা সড়ক থেকে নামলে মালিকানা জমিতে পানি ও কাঁদা যার কষ্টের শেষ নাই। এ ছাড়াও আশ্রয়ন প্রকল্পে স্ট্রীট লাইট, মাটি ভরাট প্রয়োজন। গুচ্ছগ্রামের আরেক বাসিন্দা আসমা বেগম বলেন, তিনি কামারখালী কলেজে কাজ করে সংসার চালান। কিন্তু গুচ্ছগ্রাম থেকে বের হওয়ার রাস্তা না থাকায় আশপাশের জমি ও বাড়ির ওপর দিয়ে চলাচল করতে গেলে ওই সব জমির মালিকেরা রাগ করেন।
আশ্রয় প্রকল্পের রতন মৃধা, মেহেদী হাসান, মিঠু শেখ সহ কয়েকজন বাসিন্দা বলেন, সরকার তাঁদের ঘর ও বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা দিয়েছে। এতে তাঁরা খুব খুশি। কিন্তু চলাচলের রাস্তাঘাট না থাকায় তাঁরা দুর্ভোগ ও ভোগান্তিতে পড়েছেন। অনেকটা জেলখানার মতো বন্দী জীবন কাটাচ্ছেন।
তাঁদের সমস্যার কথা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে (ইউএনও) মৌখিকভাবে জানিয়েছেন। এই সমস্যার সমাধান করে দেওয়ার জন্য সরকারের কাছে আবেদন জানান তাঁরা। গুচ্ছগ্রাম থেকে মূল সড়কে যাওয়ার জন্য উত্তর পাশের জমিটির মালিক মন্নু, আহাদ , লিটন শেখ আর পূর্ব পাশের রাস্তার মালিক বুলু মুন্সী ও কালু মোল্যা। ওই জমিতে গুচ্ছগ্রামের বাসিন্দাদের চলাচলে প্রতিবন্ধকতার সৃষ্টি হয়েছে। এ ব্যাপারে ইউএনও আশিকুর রহমান চৌধুরী বলেন, কামারখালীর দয়ারামপুর আশ্রয়ণ প্রকল্পের উপকারভোগী ব্যক্তিদের চলাচলের সমস্যার বিষয়টি তিনি জেনেছেন। কিন্তু বদলীকৃত জনিত কারনে কোন ব্যবস্থা করে যেতে পারলাম না।’