1. kazi.rana10@gmail.com : Sohel Rana : Sohel Rana
  2. jmitsolution24@gmail.com : support :
শুক্রবার, ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৫:৩৪ অপরাহ্ন
শিরোনাম :
মুকসুদপুরে বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করাকে কেন্দ্র করে দুগ্রুপের সংঘর্ষে নিহত ১, আহত ৫ নগরকান্দায় সাংবাদিকদের সাথে নবাগত ওসির মতবিনিময় স্বেচ্ছাসেবক দলের নেতা খুন” গোপালগঞ্জে শেখ সেলিম-কানতারা খানসহ ১১৮ জনের বিরুদ্ধে মামলা সালথায় কৃষকদের মাঝে বিনামূল্যে পেঁয়াজ বীজ ও সার বিতরণ সালথা উপজেলা পর্যায়ে শ্রেষ্ঠ প্রধান শিক্ষক বাবু অনন্ত বিশ্বাস ফরিদপুরে কোটি টাকা নিয়ে লাপাত্তা ব্যাংকের এজেন্ট মালিক ফরিদপুরে তরুণীকে উত্ত্যক্ত, প্রতিবাদ করায় দুই যুবককে গুলি ফরিদপুরে বাসের হেলপার সাদ্দামকে হত্যার দায়ে পাঁচজনের যাবজ্জীবন বিগত তিন জাতীয় নির্বাচনের সিইসিদের বিরুদ্ধে মামলা আওয়ামী লীগের মতো করলে একই দশা আমাদেরও হবে: মির্জা ফখরুল

ঝুলে আছে “পদ্মা বিভাগ” বাস্তবায়ন

সোহেল রানা
  • Update Time : রবিবার, ২০ আগস্ট, ২০২৩
  • ৫১৪ Time View

ঝুলে আছে বৃহত্তর ফরিদপুর অঞ্চলকে নিয়ে ‘পদ্মা বিভাগ’ বাস্তবায়ন। ফরিদপুরবাসীর প্রাণের এই দাবি পূরণের সিদ্ধান্ত এলেও বৈশ্বিক অর্থনৈতিক সংকট ও সরকারের ব্যয় সংকোচন নীতির কারণ দেখিয়ে ২০২২ সালের ২৭ নভেম্বর নিকারের সভায় পদ্মা বিভাগ বাস্তবায়নে সাময়িকভাবে স্থগিত করা হয়। তবুও আশা নিয়ে তাকিয়ে আছে ফরিদপুরবাসী। তবে, ফরিদপুরের সুশীল সমাজ মনে করেন শীঘ্রই বিভাগ বাস্তবায়নে সিদ্ধান্ত আসতে পারে। কিন্তু তাদের দাবি- পদ্মা নামে নয়, ফরিদপুর নামেই বিভাগ বাস্তবায়ন করা হোক।
তারা জানান, ফরিদপুর বা পদ্মা বিভাগ বাস্তবায়ন করতে হলে ফরিদপুরে অবকাঠামোমূলক উন্নয়ন করতে হবে। এরমধ্যে ফরিদপুরে বিভাগীয় হেডকোয়ার্টার, একটি পূর্ণাঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়, বিভিন্ন সরকারি অফিসের দপ্তর, অধিদপ্তর, ক্যান্টনমেন্ট, মহিলা ক্যাডেট কলেজ, ইপিজেড, বিভিন্ন ইন্ডাষ্ট্রি, গ্যাস লাইন ও পদ্মা নদী সংলগ্ন পর্যটন কেন্দ্র করতে হবে।
ইতিহাস ঐতিহ্যে ঘেরা এই “ফরিদপুর” জেলাকে ঘিরে বিভাগ বাস্তবায়নের দাবিতে আন্দোলন শুরু হয়েছে ১৯৮৫ সাল থেকেই। তৎকালীন “ফরিদপুর বিভাগ এবং পদ্মা সেতু বাস্তবায়ন” কমিটির মাধ্যমে আন্দোলন শুরু করেন ফরিদপুরের অনেক প্রবীণ ও গুনি ব্যক্তিরা। সে সময়ে এই আন্দোলনের নেতৃত্ব দেন শিক্ষাবিদ প্রফেসর অধ্যাপক এম.এ আজিজ। ২০০৯ সাল পর্যন্ত “ফরিদপুর বিভাগ এবং পদ্মা সেতু বাস্তবায়ন” কমিটির মাধ্যমে তিনি আন্দোলন চালিয়ে এসেছেন। পরবর্তী পদ্মা সেতু বাস্তবায়িত হলে ঐ কমিটির নাম দেয়া হয় “ফরিদপুর উন্নয়ন কমিটি”। এই কমিটির মাধ্যমেই ফরিদপুর বিভাগ বাস্তবায়নসহ কয়েকটি উন্নয়নমূলক কর্মকান্ডের দাবিতে কাজ করে যাচ্ছেন। বর্তমানে তিনি এই কমিটির সভাপতি হিসেবে নেতৃত্ব দিচ্ছেন।
এ বিষয়ে কথা হয় প্রবীণ এই শিক্ষাবিদের সাথে। তিনি বলেন- ‘এই অঞ্চলের উন্নয়নের কথা বিবেচনা করে ১৯৮৫ সাল থেকেই ফরিদপুর বিভাগ বাস্তবায়নের জন্য নিয়মতান্ত্রিকভাবে আন্দোলন, প্রধানমন্ত্রী বরাবর স্মারকলিপি প্রদান, প্রেস ব্রিফিং করে আসছি। ঢাকায় লিয়াজু কমিটির মাধ্যমে বৃহত্তর ফরিদপুরের পাঁচ জেলাকে সংগঠিতও করেছি। বর্তমানে রাজনৈতিক অস্থিরতা এবং করোনা ও রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারনে অর্থনৈতিক সংকটে বিভাগ বাস্তবায়ন কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে। দেশের অবস্থা ভালো হলে আবারও আমরা আন্দোলন শুরু করবো।’
তিনি আরো বলেন- ‘১৯৮৮ সালে তৎকালীন মন্ত্রী কামাল ইউসুফ জানায় ফরিদপুর বিভাগ হবে। সেসময় আমরা মিষ্টিমুখও করি। কিন্তু পরবর্তীতে তা পাইনি। ২০০১ সালে বিএনপি ক্ষমতায় এলে আন্দোলন চালিয়ে যাই। পরবর্তীতে ২০০৯ সালে আওয়ামীলীগ সরকার ক্ষমতায় এলে আন্দোলন আরো জোরদার করি। এক পর্যায়ে ঘোষণা আসে পদ্মা সেতু হবে। কিন্তু আমরা আজও আমরা বিভাগ পাইনি, যেটা আমাদের প্রাণের দাবি।’
এদিকে ২০১৫ সালের ২৬ জানুয়ারি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মন্ত্রিসভার এক বৈঠকে বৃহত্তর ফরিদপুর অঞ্চল নিয়ে ফরিদপুর বিভাগ গঠনের বিষয়ে আলোচনা করেন এবং বাস্তবায়নের জন্য নির্দেশনা দেন। এরপরই ফরিদপুর নামে বিভাগ না করার দাবিতে শরিয়তপুর ও গোপালগঞ্জ জেলায় মানববন্ধন করেন স্থানীয়রা। পরবর্তীতে ২০১৯ সালের ২২ অক্টোবর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত প্রশাসনিক পুনর্বিন্যাস সংক্রান্ত জাতীয় বাস্তবায়ন কমিটির (নিকার) সভায় পদ্মা নামে নতুন বিভাগ গঠনের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়। ঐদিনই ফরিদপুর শহর জুড়েই মিষ্টিমুখ করে উদ্যাপন করে ফরিদপুরবাসী। শহরের থানা রোডে আওয়ামীলীগের দলীয় কার্যালয়ের সামনে জড়ো হয় হাজারো মানুষ। ঢাক-ঢোলের তালে উদযাপন করে ফরিদপুরবাসী। এরপর ২০২২ সালের ২৭ নভেম্বর একনেক সভায় বিভাগ বাস্তবায়নের ঘোষণা আসতে পারে- এমন আশায় উৎকন্ঠায় দিন কাটে ফরিদপুরবাসীর। কিন্তু ঐ সভায় বৈশ্বিক অর্থনৈতিক সংকটের কারণ দেখিয়ে পদ্মা বিভাগ বাস্তবায়ন সাময়িকভাবে স্থগিত রাখার ঘোষণা দেয়া হয়।
তবে খুব শীঘ্রই বিভাগ বাস্তবায়ন হবে বলে মনে করেন ফরিদপুর জেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি শামীম হক। তিনি এই প্রতিবেদককে বলেন- ফরিদপুর বিভাগ বাস্তবায়নের জন্য বিভাগীয় দপ্তরের প্রয়োজন এবং যে অবকাঠামোমূলক উন্নয়নের প্রয়োজন সেটার জন্য জননেত্রী শেখ হাসিনা সিদ্ধান্ত একটু দেরিতে নিবে। কারন, করোনাকালীন অর্থনৈতিক ও ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধে সারাবিশ্বে অর্থনৈতিক প্রভাবের কারনে সেটা বন্ধ রয়েছে। কিন্তু মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর চিন্তা-চেতনায় রয়েছে। আমি আশা করি, খুব শীঘ্রই বিভাগ বাস্তবায়ন হবে। দক্ষিণবঙ্গের ২১টি জেলার উন্নয়নের জন্য পদ্মাসেতু হয়েছে এবং এই অঞ্চলে শিল্পায়নের জন্য পদ্মা বিভাগ বাস্তবায়ন সকলের দাবি। এখন আমরা অপেক্ষায় আছি। তারপরও জনগণের দাবি পূরণে আমি কাজ করে যাবো।’
ফরিদপুর বিভাগ বাস্তবায়ন সংক্রান্তে আক্ষেপ জানান ফরিদপুর বিভাগ আন্দোলন বাস্তবায়ন কমিটির নেতা, প্রবীণ শিক্ষাবিদ প্রফেসর অধ্যাপক এম.এ. সামাদ। তিনি বলেন, ‘ফরিদপুর আদি শহর। ফরিদপুরকে বিভাগ বাস্তবায়নে আমরা আন্দোলন করেছি, এখন আর করছি না। অনেক কারন রয়েছে।’
তবে তার আশা- ফরিদপুর বিভাগ বাস্তবায়িত হলে তা ফরিদপুর নামেই করা হোক। এ প্রসঙ্গে তিনি এ প্রতিবেদককে বলেন, ‘এই ফরিদপুর ঘিরে রয়েছে ইতিহাস ঐতিহ্য। বঙ্গবন্ধুর জন্ম এই ফরিদপুরেই। তার জন্মস্থান হিসেবে ফরিদপুরকেই পরিচয় দিতেন। তার বাবা ফরিদপুর কোর্টের পেশকার ছিলেন, সে সময় এই ফরিদপুরেই বাসা নিয়ে থাকতেন। ফরিদপুর বিভাগ বাস্তবায়িত হলে নিশ্চিতভাবে এই জনপদের উন্নয়নে প্রসার ঘটবে।’
বিভাগ বাস্তবায়ন সংক্রান্ত বিষয়ে জানতে চাইলে ফরিদপুর জেলা বিএনপির আহ্বায়ক মোদাররেছ আলী ইছা দাবি করেন- নাম সর্বস্ব বিভাগ নয় এবং ফরিদপুর নামেই বিভাগ করা হোক। তিনি বলেন, ‘যদি আওয়ামীলীগ সরকার ফরিদপুরকে পদ্মা বিভাগ নাম দেয়, সেক্ষেত্রে বলার কিছু থাকে না। তারপরও জনগণ তা মেনে নিতে চাইবে না। এই ফরিদপুর থেকেই পাচটি জেলায় রুপান্তর হয়েছে। ফরিদপুর নাম ব্যতিত পদ্মা, মেঘনা, আড়িয়াল যে নামে দেবে, সেটি এই অঞ্চলের মানুষের বিপক্ষে যাবে।’
তিনি আরো বলেন, ‘আমরা পাকিস্তান আমল থেকেই নিগৃহীত। আমাদের এই অঞ্চল শিল্পায়ন নেই, সাধারন মানুষের উন্নয়নে তেমন কিছু নেই। শিক্ষা ব্যবস্থায় জাতীয় পর্যায়ে সেরকম কোনো বিশ্ববিদ্যালয় নেই। দেশের উন্নয়নে যতকিছু প্রয়োজন, তার থেকে আমরা সব সময়ই বঞ্চিত। আমরা আশায় ছিলাম বর্তমান সরকার বিভাগ দিবে কিন্তু সেটাও আমরা পাইনি।’
বিএনপি সরকার ক্ষমতায় এলে ফরিদপুর বিভাগ বাস্তবায়ন সংক্রান্ত বিষয়ে তিনি বলেন, ‘যদি আওয়ামীলীগ সরকার বিভাগ বাস্তবায়ন না করে এবং বিএনপি ক্ষমতায় এলে মানুষের উন্নয়নের স্বার্থে ফরিদপুর বিভাগ বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে বিএনপি অগ্রণী ভূমিকা পালন করবে।’
বিভাগ বাস্তবায়ন বিষয়ে কথা হয় ফরিদপুর নাগরিক মঞ্চের সভাপতি আউলাদ হোসেন বাবরের সাথে। তিনি মনে করেন- ‘বিভাগ বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে এখন কোনো সিদ্ধান্তে আসবে না সরকার। তবে নির্বাচনের আগে সরকার এই বিষয়ে সিদ্ধান্ত এবং আরো কিছু উন্নয়নের ঘোষণা দিতে পারে। সেটা তিনি জাতির উদ্দেশ্যে ভাষণেও বলতে পারে বা এখানে কোনো প্রতিনিধি পাঠিয়ে ঘোষণা দিতে পারে।’
তিনি ফরিদপুর নামেই বিভাগ বাস্তবায়নের দাবি জানিয়ে বলেন, ‘মাননীয় প্রধানমন্ত্রী পদ্মা বিভাগ নামেই করতে চায় কিন্তু আমাদের পছন্দ ফরিদপুর নামেই বিভাগ হোক। কারন, সুদূর ইরান থেকে এদেশে আগত শাহ ফরিদের নাম অনুসারেই ফরিদপুর জেলার নামকরণ করা হয়েছে, সেই থেকে একটা কষ্টের জায়গা রয়ে যায়।’
উল্লেখ্য, ১৭৮৬ সালে ফরিদপুর জেলা প্রতিষ্ঠালাভ করে। তখন জেলার নাম ছিল ঢাকাজালালপুর এবং সদরদপ্তর ছিল ঢাকা। ১৮০৭ খ্রিষ্টাব্দে জেলার সদরদপ্তর ফরিদপুর শহরে স্থানান্তর করা হয়। ফরিদপুরে আসার পরও জেলার নাম ‘ঢাকাজালালপুর’ ছিল। ১৮৩৩ সাল থেকে জেলার নাম ‘ফরিদপুর’ ব্যবহৃত হতে থাকে। যা মোঘল আমলে ফতেহাবাদ নামে পরিচিত ছিলো। বর্তমানে ফরিদপুর ভেঙে সৃষ্টি হয়েছে ফরিদপুর, রাজবাড়ী, গোপালগঞ্জ, মাদারীপুর ও শরিয়তপুর নামে পাঁচটি জেলা।

Please Share This Post in Your Social Media

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

More News Of This Category
© All rights reserved © 2023
Developed By : JM IT SOLUTION