ফরিদপুরের বোয়ালমারীতে প্রতিবাদী এক নারীকে এলাকা ছাড়া করতে তার উপর সিমাহীন জুলুম-অত্যাচার চালানোর অভিযোগ উঠেছে। উপজেলার সাতৈর ইউনিয়নের আরাজিপাইকহাটি গ্রামের সাথী আক্তার নামে ঐ নারীকে স¤প্রতি পিটিয়ে ও কুপিয়ে জখমের ঘটনায় থানায় মামলা হবার পর বিবাদী গফুর শেখ, আলীম মাতুব্বর গং জামিনে মুক্ত হয়ে এসে বাদীর সঙ্গে আরো বেপরোয়া আচরণ করছে বলে অভিযোগে প্রকাশ। মামলা প্রত্যাহার করে নিতে চাপ দেওয়া হচ্ছে সাথী আক্তারকে। কথা না শুনলে শুধু এলাকা ছাড়া নয় তাকে দুনিয়া থেকেই সরিয়ে দেয়া হবে বলে হুমকি-ধমকী দিচ্ছে প্রভাব শালী আসামিপক্ষ। ফলে পরিবার পরিজন নিয়ে চরম নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন ঐ বাদিনী। মামলার এজাহার ও ভুক্তভোগীর মৌখিক অভিযোগ সূত্রে জানাযায়,আরাজিপাইকহাটি গ্রামের মৃত গয়েজউদ্দীনের বড় মেয়ে সাথী আক্তার। তার স্বামীর নাম মোঃ মোশারফ হোসেন। স্বামীর সঙ্গে ভুলবোঝাবুঝি চলায় ভাইদের সাথে পিত্রালয়েই থাকেন সাথী। তার ছোট বোন আম্বিয়ার বিয়ে হয় একই গ্রামের রিপন শেখের সঙ্গে। আম্বিয়া যখন দুই সন্তানের জননী তখন বিবাদী গফুর শেখ ও আলীম মাতুব্বর গং ষড়যন্ত্র করে তার (আম্বিয়ার) সংসারটা ভেঙে দেন। তারা একটি মিথ্যা অপবাদ দিয়ে আম্বিয়াকে মারধর করে রিপনের বাড়ি থেকে তাড়িয়ে দেয়। এটার প্রতিবাদ করেন বড় বোন সাথী আক্তার। শুরু হয় বিবাদীদের সঙ্গে সাথী আক্তার ও তার পরিবারের বিরোধ । এরই জের ধরে গত ১১ এপ্রিল গফুর শেখ ও আলীম মাতুব্বরের নেতৃত্বে ২০/২৫ জনের একদল লোক দেশীয় অস্ত্র-শস্ত্র,লাঠি শোঠা নিয়ে সাথীদের বাড়িতে হামলা চালায়। হামলাকারীরা ঘর-বাড়িতে ব্যাপক ভাংচুর,লুটপাটের পাশাপাশি সাথী আক্তারকে ঘর থেকে টেনে হেঁচড়ে বাইরে এনে মাটিতে ফেলে লাঠি দিয়ে বেধড়ক পিটিয়ে ও ধারালো অস্ত্র দিয়ে মাথা, ঘার,হাত সহ শরীরের বিভিন্ন স্থানে এলোপাথাড়ি কুপিয়ে রক্তাক্ত জখম করে। এ সময় সাথীর তিন ভাই মিজান শেখ,নিজাম শেখ,খায়রুল শেখ,মা সোনাই বেগম সহ পরিবারের অন্যান্য সদস্যদেরও ব্যাপক মারধর করে দূর্বৃত্তরা। হামলায় খায়রুল শেখের একটি দাঁত ভেঙ্গে যায়। এ ঘটনায় পরবর্তীতে আদালতের নির্দেশে বোয়ালমারী থানা পুলিশ একটি মামলা গ্রহণ করলেও কোন আসামী গ্রেফতার হবার আগেই তারা আদালত থেকে জামিনে মুক্ত হয়ে আসে। সাথী আক্তার অভিযোগ করে বলেন,আসামীরা খুবই প্রভাবশালী। তাদের প্রভাবের কারণেই পুলিশ কোন আসামী ধরেনি। প্রভাব বিস্তার করে আমার মেডিকেল রিপোর্টও আসামীরা তাদের পক্ষে নিয়ে নেয়। ফলে আদালত থেকে তারা সহজেই জামিন নিয়ে এসে এখন আরো বেপরোয়া হয়ে উঠেছে। সাথী আক্তার জানান,মামলা তুলে নিতে তার উপর ভীষণ চাপ সৃষ্টি করছে বিবাদী পক্ষ। কথা না শুনলে হয় এলাকা ছাড়তে হবে নয়তো স্বপরিবারে মেরে ফেলা হবে বলেও দিচ্ছে হুমকি ধামকী। অর্থাৎ এলাকায় তার চলাফেরা বন্ধ। সাথী বলেন, তাদের জমির ধান কাটতে পারছেনা,পাট নিড়ানিও দিতে পারছেন না। রাতের আঁধারে ঘরের উপর ঢিল ছুড়ে সৃষ্টি করছে আতঙ্কের। ফলে স্বজনদের নিয়ে চরম উৎকন্ঠা আর নিরাপত্তা হীনতায় দিন কাটছে সাথী আক্তারের। সাথীর মা সোনাই বেগম বলেন,ওদের (আসামী পক্ষ) কথা না শুনলে বিপদ। তাদের কথা মতো পা ফেলতে হবে আমার মেয়েদের। আমার ছোট মেয়েটাকে তারা মিথ্যা অপবাদ দিয়ে এলাকাছাড়া করেছে। এখন লেগেছে বড় মেয়েটার পিছনে। পবিত্র রমজান মাসে ওরা আমার মেয়েটাকে কুপিয়ে জখম করে। আমাদেরও মারধর করে। আর সেটার বিচার চাইতে গিয়ে এখন গোটা পরিবারের টিকে থাকা দায় হয়ে পড়েছে। এব্যাপারে জানতে চাইলে মামলার ৩ নং বিবাদী মোঃ রাজু শেখ বলেন,মহিলা লোক ভালোনা। সে গ্রামের মাতুব্বর,মুরব্বিদের অসম্মান করে কথা বলে। তাই কিছু ছেলেপেলে ক্ষিপ্ত হয়ে তাকে মেরেছিলো। মামলার তদন্ত কর্মকর্তা এস আই মাসুদুর রহমান বলেন, মামলাটি এখন তদন্তাধীন রয়েছে। আসামীরা জামিনে আছেন। তদন্ত শেষ হলে যথাযথ ভাবে চার্জশিট দেওয়া হবে বলে জানান তিনি।