ফরিদপুর সদর উপজেলাধীন ৯নং কানাইপুর ইউনিয়নের ২ নং ওয়ার্ডের মিজান মোল্যা নামে এক ব্যক্তির বাড়ি থেকে দুটি ককটেল জাতীয় বস্তু উদ্ধার করেছে র্যাবের একটি টিম। এদিকে ঘটনার সুত্র ধরে ঐ ককটেল জাতীয় বস্তু একই এলাকার কবীর মোল্ল্যা এবং আবজাল মাতুব্ববর নামে দুই ব্যাক্তি রেখেছে মর্মে সন্দেহ করে বাড়ির মালিক মিজান মোল্যা একটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেইসবুকে লাইভে অপ্রচার করার প্রতিবাদ জানিয়ে মঙ্গলবার বিকালে সংবাদ সম্মেলন ও প্রতিবাদ সমাবেশ করেছে স্থানীয়রা। জানা যায়, ইউনিয়নের ২ নং ওয়ার্ডের ভাটি কানাইপুরের ওদুদ মোল্ল্যার ছেলে মিজান মোল্যার বাড়িতে দুটি ককটেল জাতীয় বস্তু ভোর আনুমানিক ছয়টার দিকে দেখতে পেয়ে প্রশাসনের বিভিন্ন পর্যায়ে অবগত করেন তারা। পরে ফরিদপুর র্যাব ক্যাম্পের একটি টিম ঘটনাস্থলে পৌছে অবিস্ফোরিত অবস্থায় ঐ ককটেল দুটি উদ্ধার করে। এদিকে র্যাবের উদ্ধার অভিযানের সময় মিজান মোল্ল্যা একটি ফেইসবুক লাইভ ভিডিওতে কানাইপুর ২ নং ওয়ার্ড বিএনপির সাধারন সম্পাদক কবীর মোল্যা এবং আবজাল মাতুব্ববর নামে দুই ব্যাক্তিকে সন্দেহ করে ঐ ককটেল দুটি রাখতে পারেন বলে দাবি করেন। ঐ ভিডিওটি ভাইরাল হলে স্থানীয় বিএনপির নেতাকর্মিসহ অভিযুক্ত দুই ব্যাক্তি ও স্থানীয় অন্যান্য ব্যাক্তিবর্গ একত্রিত হয়ে ফেইসবুকে অপ্রচার করার প্রতিবাদ জানিয়ে সংবাদ সম্মেলন ও প্রতিবাদ সমাবেশের আয়োজন করে। এ সময় কানাইপুর ইউনিয়ন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি ও ২ নং ওয়ার্ড মেম্বার আ: মোতালেব মোল্ল্যা, কানাইপুর ইউনিয়ন বিএনপি’র সাবেক সভাপতি মো: এহতেশাম খান, কানাইপুর ইউনিয়ন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক ইউসুফ আলী মোল্লা, অভিযুক্ত কবীর মোল্লা, আবজাল মাতুব্ববরসহ স্থানীয় বিএনপির বিভিন্ন পর্যায়ের নেতৃবৃন্দ ও স্থানীয় গন্যমান্য ব্যাক্তিবর্গ বক্তব্য রাখেন। তারা ঘটনার তীব্র নিন্দা জানিয়ে বলেন, গত শনিবার আফজাল মাতুব্বর এর শ^সুর কাঁচামাল ব্যবসায়ী আমিন মোল্যাকে একটি মামলায় মিথ্যা স্বাক্ষী না দেওয়ার কারনে মিজান মোল্যা তার উপর অতর্কিত হামলা চালায়। এ ঘটনার জের ধরে উভয় পক্ষের মধ্যে শত্রুতা সুষ্টি হয়। এরই ধারাবাহিকতায় কবীর মাতুব্বর এবং আবজাল মাতুব্ববরকে ফাঁসাতে মিজান মোল্ল্যা ফেইসবুকে এ ধরনের অপপ্রচার করেন বলে তারা দাবি করেন। এ ছাড়াও মিজান মোল্ল্যার পরিবার আওয়ামী ঘরনার দাবি করে তারা বলেন স্থানীয় বিএনপির ভাবমুর্তি ক্ষুন্ন করাসহ কানাইপুর ২ নং ওয়ার্ড বিএনপির সাধারন সম্পাদক কবীর মাতুব্বর ও আবজাল মাতুব্ববরকে হয়রানী করতেই এ ধরনের অপপ্রচার করা হচ্ছে। এ সময় তারা ঘটনার প্রকৃত দোষিদের খুজে বের করে আইনের আওতায় আনার দাবি জানান। একই সাথে কবীর মাতুব্বর ও আবজাল মাতুব্ববর এ ঘটনায় নির্দোষ দাবি করে তাদের হয়রানী করার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানান বক্তারা। এবিষয়ে মিজান মোল্লা ঘটনার সত্যতা প্রকাশ করে বলেন, ভোর আনুমানিক ছয়টার দিকে আমার নাবালক পুত্র ককটেল জাতীয় ঐ দুটি বস্তু দেখতে পেয়ে আমার মাকে জানালে, আমি তাৎক্ষনিক প্রশাসনের বিভিন্ন পর্যায়ে অবগত করলে র্যাবের একটি দল এসে তা উদ্ধার করে। এদিকে কবীর মাতুব্বর ও আবজাল মাতুব্ববর কে নিয়ে ফেইসবুক লাইভে তাদের সন্দেহমুলক দোষী সাব্যস্ত করার বিষয়টি জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমিন মোল্ল্যা নামে এক ব্যাক্তি জমি সংক্রান্ত একটি মামলায় মিথ্যা স্বাক্ষি দেওয়াকে কেন্দ্র করে গত শনিবার তার সাথে একটু কথা কাটাকাটি হয়। তবে তাকে কোন প্রকার মারধোর করা হয়নি দাবি করে মিজান মোল্ল্যা বলেন এ ঘটনার সুত্র ধরে আমিন মোল্লার জামাতা আবজাল মাতুব্ববর ও কবীর মাতুব্বরসহ স্থাণীয় বেশ কিছু ব্যাক্তি একত্রিত হয়ে আমার উপর হামলা চালানোর চেষ্টা করে। এমনকি তারা বিভিন্ন দেশীয় অস্ত্র নিয়ে আমার বাড়ির সামনে মহড়া দিতে থাকে। এর পর থেকে আমি ঘর থেকে বের হতেই সাহস পাচ্ছিনা। এরই ধারাবাহিকতায় আমার বাড়িতে নাশকতা মুলক কর্মকান্ড করার উদ্দেশ্যে তারা ককটেল দুটি রাখতে পারেন বলে দাবি করে ফেইসবুক লাইভে এ ধরনের বক্তব্য রেখেছেন বলে জানান মিজান মোল্ল্যা। এ বিষয়ে কানাইপুর ইউপি চেয়ারম্যান শাহ মো: আলতাফ হুসাইন ঘটনার সত্যতা প্রকাশ করে বলেন, সকালে খবর পেয়ে আমি ঘটনাস্থলে পৌছে দেখি প্রশাসন ঐ ককটেল জাতীয় দুটি বস্তু উদ্ধার করছে। তবে কে এ বস্তু দুটি রেখেছে তা সনাক্ত করা যায়নি বা এটা যে ককটেল তাও নিশ্চিত করে বলতে পারছিনা। তবে এটা প্রশানের পক্ষ থেকে তদন্ত সাপেক্ষে বের হবে প্রত্যাশা করে সন্দেভাজন অভিযুক্ত দুই ব্যাক্তির বিষয়ে চেয়ারম্যান বলেন, সুনিদৃষ্ট প্রমান ছাড়া কাউকে দোষি সাব্যস্ত করা যায়না। তবে কয়েকদিন আগে মিজান মোল্ল্যা একটি মামলায় মিথ্যা স্বাক্ষী দেওয়াকে কেন্দ্র করে আমিন মোল্যা নামে এক বয়বৃদ্ধকে মারধোর করে। এ ঘটনায় এলাকায় উত্তেজনা সৃষ্টি হলে আমি তাৎক্ষনিক ঘটনাস্থলে পৌছে উভয় পক্ষকে সড়িয়ে দেই। এর পর থেকে ঐ ঘটনার কোন সমাধান হয়নি দাবি করে চেয়ারম্যান জানান, ঐ বয়বৃদ্ধকে মারধোরের ঘটনায় দুই পক্ষের মধ্যে শত্রুতা সৃষ্টি হয়েছে। তবে ককটেল জাতীয় দুটি বস্তু কে বা কাহারা রাখতে পারে তা সুনিদৃষ্ট প্রমান ছাড়া মনগড়া ভাবে কাউকে দোষারফ করলেই তো আর সে দোষি হয়ে যায়না। একই সাথে প্রশাসনের নিবিড় ছায়া তদন্তের মাধ্যমে ঘটনার প্রকৃত রহস্য উধঘাটন হবে বলেও প্রত্যাশা করেন চেয়ারম্যান শাহ মো: আলতাফ হুসাইন। এ বিষয়ে ফরিদপুর র্যাব ১০ এর কোম্পানী কমান্ডার তারিকুল ইসলাম জানান, ঐ ককটেল জাতীয় দুটি বস্তু উদ্ধার করে কোতয়ালী থানায় হস্থান্তর করা হয়েছে। থানা পুলিশ এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় আইনি ব্যবস্থা গ্রহন করবে জানিয়ে এ কর্মকর্তা বলেন, যদিও ঘটনায় কাউকে আটক করা না গেলেও কয়েকজন ব্যাক্তি আমাদের নজড়ে রয়েছে। তবে সকল বিষয়কে সামনে রেখে তদন্ত সাপেক্ষে ঘটনার প্রকৃত দোষীদের আটক করতে র্যাবের বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তারা তৎপর রয়েছেন বলে জানান র্যাবের এ কর্মকতা।