1. kazi.rana10@gmail.com : Sohel Rana : Sohel Rana
  2. jmitsolution24@gmail.com : support :
বৃহস্পতিবার, ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৭:৫৭ পূর্বাহ্ন
শিরোনাম :
মুকসুদপুরে বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করাকে কেন্দ্র করে দুগ্রুপের সংঘর্ষে নিহত ১, আহত ৫ নগরকান্দায় সাংবাদিকদের সাথে নবাগত ওসির মতবিনিময় স্বেচ্ছাসেবক দলের নেতা খুন” গোপালগঞ্জে শেখ সেলিম-কানতারা খানসহ ১১৮ জনের বিরুদ্ধে মামলা সালথায় কৃষকদের মাঝে বিনামূল্যে পেঁয়াজ বীজ ও সার বিতরণ সালথা উপজেলা পর্যায়ে শ্রেষ্ঠ প্রধান শিক্ষক বাবু অনন্ত বিশ্বাস ফরিদপুরে কোটি টাকা নিয়ে লাপাত্তা ব্যাংকের এজেন্ট মালিক ফরিদপুরে তরুণীকে উত্ত্যক্ত, প্রতিবাদ করায় দুই যুবককে গুলি ফরিদপুরে বাসের হেলপার সাদ্দামকে হত্যার দায়ে পাঁচজনের যাবজ্জীবন বিগত তিন জাতীয় নির্বাচনের সিইসিদের বিরুদ্ধে মামলা আওয়ামী লীগের মতো করলে একই দশা আমাদেরও হবে: মির্জা ফখরুল

মাদকের টাকায় ড্রাইভার থেকে সামাদ খাঁনের কোটিপতি হয়ে উঠার গল্প

বাঙ্গালী খবর ডেস্ক
  • Update Time : মঙ্গলবার, ৮ আগস্ট, ২০২৩
  • ৪৯৮ Time View
Exif_JPEG_420

গত ০৪ আগস্ট ঢাকায় জাতীয় প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে ফরিদপুরের গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) ওসি রাকিবুল ইসলামের বিরুদ্ধে গাড়ি আটকে সাত লাখ টাকা ঘুষ দেয়ার অভিযোগ আনেন সামাদ খান নামের এক ব্যক্তি। সেদিন তিনি নিজেকে নির্দোষ দাবি করেন। এ ঘটনার পরেই আলোচনায় আসে সে। এরপরই বেরিয়ে আসতে থাকে এই সামাদ খানের আদ্যোপান্ত। মুখ খুলতে থাকেন এলাকার নির্যাতিত ও হয়রানির শিকার ব্যক্তিরা।
সামাদ খান ফরিদপুর জেলার মধুখালী উপজেলার মধুপুর গ্রামের চৌকিদার তথা গ্রাম পুলিশ মৃত মজিদ খানের পুত্র। তার বড় ভাই হামিদ খান একজন ফার্নিচার মিস্ত্রি। তবে এই দুই ভাইয়ের সাথে কোন সম্পর্ক নেই। এছাড়া তার ছোট ভাই একজন হুজুর। গ্রামের অনেকের সাথেই সামাদ খানের রয়েছে দুরত্ব।
সরেজমিনে গেলে এই সামাদের বিরুদ্ধে উঠে আসে নানা অনিয়মের তথ্য। একসময়ের হতদরিদ্র পরিবারের সন্তান সামাদ পুলিশের রিকি্যুজেশন করা গাড়ির ড্রাইভার হিসেবে পুলিশের আড়ালেই গড়ে তোলে মাদকের সাম্রাজ্য। নিজেকেও সে আড়াল করে অবৈধপথে বনে গেছে কোটিপতি। মাদক ব্যবসা ছাড়াও নিরীহ মানুষকে মাদক দিয়ে ধরিয়ে দেয়া ও অসাধু পুলিশের মাধ্যমে ভয়ভীতি দেখিয়ে অবৈধ সুবিধা আদায় এবং হারবাল ব্যবসার আড়ালে যৌন উত্তেজক ওষুধের ব্যবসাও গড়ে তুলেছে সে। এঘটনায় একবার র‌্যাবের হাতে আটক হওয়ার পরে তার নিকট থেকে বিপুল পরিমাণ ইয়াবা, ফেনসিডিল, বিদেশী মদ, যৌন উত্তেজক ওষুধ এবং পুলিশের বুট ও ক্যাপ উদ্ধার করা হয়। এসব ঘটনায় তার নামে তিনটি মামলাও হয়।
আর এই সুবাদে প্রত্যন্ত গ্রামে গড়ে তুলেছে লাখ লাখ টাকা ব্যয়ে সুদৃশ্য ভবন। ফরিদপুর-খুলনা মহাসড়কের পাশে মধুখালীর নওপাড়া মোড় হয়ে আঞ্চলিক সড়ক ধরে এগোলেই মধুপুর গ্রামে সামাদ খানের এই বাড়ি। একতলাবিশিষ্ট বেশ প্রশস্ত একটি পাকা উঁচু ভবন। ঢালাই দেয়া ছাদের নিচে দেয়ালের পলেস্তরা আর জানালায় লাগানো থাই গøাস। আশেপাশে এমন ভবন আর একটিও নেই। বিল্ডিংয়ের পাশেই ইটের গাঁথুনির উপর চৌচালা আরেকটি সেমি পাকা বাড়ি। দক্ষিণপাশের দেয়ালে লাগানো সিসি ক্যামেরা ও এসি। তার সেমিপাকা ঘরের পিছনে আরো একটি টিনের চৌচালা ঘর। সামনের বিল্ডিং ও মাঝের সেমিপাকা ঘরের মাঝে প্রায় ৬ ফুট চওড়া বাড়ির প্রবেশপথের সামনে সবুজ রঙের বড় পর্দা দিয়ে ঢাকা।
এ সময় কথা হয় গ্রামের একাধিক মানুষের সাথে। এগিয়ে আসেন এই সামাদের হাতে নির্যাতিত ব্যক্তিরাও। তবে অনেকে প্রকাশ্যে মুখ খুলতে রাজি হয়নি। এখনও সামাদের ভয়ে থাকেন তারা। তবে, তাদের সাথে কথা বলে জানা যায় নানা তথ্য।
প্রথমজীবনে ছিলেন মাইক্রোবাসের চালক। পুলিশ তার গাড়ি রিক্যুজিশন নিয়ে বিভিন্ন কাজে যেতো। তখন থেকে সে পুলিশের ড্রাইভার হিসেবে পরিচিত হয়ে উঠে। এরপর পুলিশের নাম ভাঙ্গিয়ে জড়িয়ে পড়ে বিভিন্ন অপরাধমূলক কাজে। পুলিশের দেয়া তথ্য মতেই, এসময় সে সীমান্ত এলাকা থেকে দেদারসে ফেনসিডিল ও পরে ইয়াবার চালান এনে সে মাদক কারবারে জড়িয়ে পড়ে। এরপর হারবাল ওষুধের আড়ালে শুরু করে যৌন উত্তেজক ওষুধের ব্যবসা।
স্থানীয়দের তথ্য মতে, অষ্টম শ্রেণি সামাদ খান এখন ডাক্তার পরিচয়ে টাই লাগিয়ে ঘুরে বেড়ায়। একসময় অনেকে তাকে পুলিশের লোক হিসেবেও চিনতো। তার বিরুদ্ধে কেউ কোনো কথা বলতে পারে না। প্রতিবাদ করলেই নেমে আসতো হামলা-মামলা।
বাবর মিয়া নামে এক ফলবিক্রেতা এ প্রতিবেদককে বলেন, সামাদের কারণে এলাকায় ইয়াবা, ফেনসিডিলে যুবসমাজ ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে। শরিফুল ইসলাম (৩৮) নাম স্থানীয় এক যুবক বলেন, র‌্যাবের হাতে গ্রেফতারের পর সামাদ নিজে আড়ালে চলে যেয়ে লোক দিয়ে মাদকের ব্যবসা চালায়। তার বিরুদ্ধে যেই কিছু বলতে যায় তাকেই সে পুলিশ দিয়ে ফাঁসিয়ে দেয়। একারণে কেউ মুখ খুলতে ভয় পায়। সামাদের বড় ভাই হামিদ খান বলেন, ও কি করে তা জানিনা। আমার সাথে যোগাযোগ নেই। ২০১৭ সালে আব্বা ওকে বিদেশ পাঠায়ছিলো। ৯ মাস থেকে সুবিধা করতে না পেরে দেশে চলে আসে।
এই ফলবিক্রেতা আরো বলেন, মাদকের ব্যবসা করে, অনেককে মিথ্যা মামলায় ফাঁসিয়ে বাড়ি-গাড়ি সহ কোটি টাকার সম্পদের মালিক সে। ওর বাবার এক শতাংশ জমি ছিলনা। যখনই তার মাদক সহ গাড়ি ধরা পড়ে সে ওই গাড়ি বিক্রি করে দেয়। এভাবে সে দুইটি মাইক্রোবাস, একটি প্রাইভেটকার ও চারটি মোটর সাইকেল বিক্রি করে নতুন গাড়ি কিনেছে। তার এক ভাগ্নের মাধ্যমে তাকে ইয়াবাসহ ধরিয়ে দেয়ারও চেষ্টা করে।
এ সময় মাহবুবুর রহমান (৪২) নামে একজন কৃষক বলেন, আমার ছোট ভাই ওর গাড়ীতে একটি ঢিল ছুড়ে মারলে সামাদ আমার ছোট ভাইকে বেদমভাবে মারপিট করে আমাদের নামে মামলা দিয়ে পুলিশে ধরিয়ে দেয় এবং মামলাও করে। সেই মামলায় আমার জেলও খেটেছি। আদালতে নির্দোষ প্রমাণিত হই আমরা।
তিনি বলেন, এই সামাদ সমাজের সবচেয়ে নিকৃষ্ট লোক। এলাকার প্রায় অর্ধশত ছেলেকে সে মাদকে ধ্বংস করেছে। সে এইট পাশ করেনি অথচ নিজেকে ডাক্তার পরিচয় দিয়ে গলায় টাই পড়ে ঘুরে বেড়ায়।
সামাদের বাড়ি থেকে একটু এগিয়ে গিয়ে চা’য়ের দোকানে কথা হয় কয়েকজনের সাথে। এ সময় সামাদ সম্পর্কে জানতে চাইলে কেউ কেউ সরে যায়। মুখ গম্ভীরভাবে দু/একজন জানান, সামাদ অনেক ভালো মানুষ। সেখানে ছুটে আসেন সামাদের বড় ভাই হামিদ খান। এ সময় তার কাছে জানতে চাইলে বলেন- ও কি করে জানিনা।
এদিকে মধুখালী রেলেগেটের পাশে মডার্ন ফার্মেসি এন্ড ইনডেক্স ল্যাবরেটরীস আয়ুর্বেদিক চিকিৎসালয়। সেখানে চর্ম ও যৌন রোগ, ডায়বেটিস, হাঁপানি, শ্বাসকষ্ট, বাতব্যাথা, আমাশয় সহ নারী ও পুরুষের যাবতীয় গোপন রোগের চিকিৎসা করেন। স্থানীয়দের অভিযোগ, তিনি আসলে এসবের আড়ালে যৌন উত্তেজক সিরাপ, মাদক ব্যবসা করেন।
এসব ব্যাপারে জানতে চাইলে সকল অভিযোগ অস্বীকার করে সামাদ খান বলেন, সোনালী ব্যাংক থেকে গত বছর দশ লাখ টাকা লোন করে আমি নোয়া গাড়িটি কিনি। এর আগে পুরনো মালিকের নিকট থেকে একটি মাইক্রোবাস ও একটি প্রাইভেটকার কিনেছিলাম। তবে সেগুলো বিক্রি করে দিয়েছি। আর ৫ হাজার করে ইট কিনে কিনে বাড়ি বানিয়েছি। আর পৈত্রিক কোন জমি না থাকলেও তিনি তার নিঃসন্তান চাচার মৃত্যুর পরে তার কিছু সম্পত্তি পান। সেই জমি বিক্রি করে বিদেশেও গিয়েছিলেন। সামাদ খান দাবি করেন, তিনি উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয় হতে এইচএসসি পাশ করেছেন বলে দাবি করে জানান, সাতক্ষীরার একটি প্যারামেডিকেল সেন্টার থেকে তিনি প্রশিক্ষণ নিয়ে এখন গ্রাম্য ডাক্তার হিসেবে কাজ করছেন। তাকে একাধিকবার জিজ্ঞাসা করলেও তিনি ওই প্যারামেডিক্যাল সেন্টারটির নাম পুরোপুরি বলতে পারেননি। তিনি বলেন, মধুখালীতে ওই প্যারামেডিক্যালের একটি শাখাও খুলেছিলেন। তবে তা বন্ধ হয়ে গেছে।
প্রসঙ্গত, ঢাকার জাতীয় প্রেসক্লাবে এক সংবাদ সম্মেলন করে সামাদ খান অভিযোগ করেন, গত ১৯ জুলাই তার মাইক্রোবাসের (নং-ঢাকা মেট্রো-চ-৫৩-১০২০) চালক প্রশান্ত তাকে না জানিয়ে চারজন যাত্রী নিয়ে ঢাকা যাচ্ছিলেন। পথে ডিবির এসআই জাকির, আলী আকবর নামের এক ব্যক্তিকে গাড়িতে তোলেন। এরপর ফরিদপুর রাজবাড়ী রাস্তার মোড়ে পৌঁছালে গাড়িটি দাঁড় করে চালক প্রশান্তকে একটি মোটরসাইকেলে ডিবি অফিসে নিয়ে যায়। গাড়িটিও ডিবির লোকেরা চালিয়ে নিয়ে যায়। পরেরদিন ডিবি ওসি রাকিব তার কাছে সাত লাখ টাকা ঘুস দাবি করেন। টাকা না দেয়ায় একটি মিথ্যা মামলা দেওয়া হয় এবং রাতে ওসি রাকিব তাকে ফোন দিয়ে গালিগালাজ ও গুলি করে মেরে ফেলার হুমকি দেন। চালক প্রশান্তকে আটক কার পরেও তাকে পলাতক দেখানো হয়।
এব্যাপারে পুলিশ জানায়, ওসি ডিবি রাকিবুল ইসলামের নেতৃত্বে ওইদিন সামাদ খানের মাইক্রোবাস থেকে ৩ হাজার পাঁচশো ৮২ পিচ ইয়াবা উদ্ধার ও মাদক মামলায় যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত ১৩ মামলার আসামী আলী আকবর ফকির (৫০), কক্সবাজারের উখিয়ার জসিম উদ্দিন (৩৮), মো. ফারুক (৩২), খোকন তারেক (২০), নগরকান্দার ইমরুল কাজী ও সুশান্ত (৩৫) সহ ৬ জনকে গ্রেফতার করা হয়। তাদের প্রত্যেকের নামেই একাধিক মাদক মামলা রয়েছে বলে পুলিশ জানায়।
তবে এ বিষয়টি নিয়ে সামাদ খান জানায়- মাদক মামলায় সাজাপ্রাপ্ত আলী আকবর ফকির তার গাড়িতে ছিলো না। তাকে আমার গাড়ি থেকে আটক দেখানো হয়েছে। এমনকি ঐ গাড়ির চেচিস্ট ও ইঞ্জিন নাম্বার পুলিশ ঘেষে উঠায় ফেলায়ছে।
সামাদের বিষয় নিয়ে কথা হয় ফরিদপুর পুলিশ সুপার মোঃ শাহাজাহান (পিপিএম-সেবা) এর সাথে। এ সময় পুলিশ সুপার জানিয়েছেন, একসময়ের দরিদ্র পরিবারের সন্তান সামাদ খান এভাবে প্রচুর টাকার মালিক হয়ে অনেকের কাছে হয়ে উঠেছে এক আতঙ্কের নাম। নানামহলের সাথে তার যোগাযোগ। এই হোয়াইট কলার ক্রিমিনাল চাতুরতার সাথে নিজেকে আড়াল করেই এসব কর্মকান্ড চালিয়ে যান যেকারণে তাকে হাতেনাতে সহসা গ্রেফতারও করা হয়নি। তার ব্যাপারে আমাদের অনুসন্ধান চলছে।

Please Share This Post in Your Social Media

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

More News Of This Category
© All rights reserved © 2023
Developed By : JM IT SOLUTION