ফরিদপুর জেলার কোতয়ালী থানার ক্লু-লেস অজ্ঞাতনামা হত্যা মামলার মূল রহস্য ২৪ ঘন্টার মধ্যে উদঘাটন সহ ঘটনায় জড়িত ২ জন আসামী গ্রেফতার করেছে পুলিশ।
আজ সোমবার সকাল সাড়ে ১১ টায় ফরিদপুর পুলিশ সুপারের কার্যালয়ে এ ব্যাপারে সাংবাদিকদের বিভিন্ন তথ্য প্রদান করেন পুলিশ সুপার মো: আব্দুল জলিল। এ সময় হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত প্লাস্টিকের রশি, চোরাইকৃত রিক্সা ও রিক্সার ব্যাটারী উদ্ধার বিষয়ে প্রেসবিফ্রিং করেন।এসময় উপস্থিত ছিলেন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার শৈলন চাকমা।
ব্রিফিংয়ে পুলিশ সুপার বলেন, রিক্সাচালক ফরহাদ প্রামানিক (২০) প্রতিদিনের ন্যায় গত ৩০ জানুয়ারি সকাল ১১ টায় রিক্সা নিয়ে বাড়ী থেকে বের হয়। এরপর তিনি বাড়ী না ফেরায় আনুমানিক সন্ধ্যা ৬ টা ২০ মিনিটে তার স্ত্রী রাবেয়া বেগম মোবাইলে তার সাথে কথা বলে। কিন্তু রাত সাড়ে আটটার দিকে তার মোবাইল ফোন বন্ধ পেয়ে তাদের নিকট আত্মীয় স্বজনদের সাথে আলোচনা করে খোঁজাখুঁজি করতে থাকে।
এক পর্যায়ে পরদিন ৩১ জানুয়ারি সকাল অনুমান সাড়ে ৯ টায় তার স্বামীর নম্বর খোলা পায়। এবং অপর প্রান্ত থেকে শিরিন নামে একজন মহিলা মোবাইল রিসিভ করে জানায়, মোবাইলটি কোতয়ালী থানাধীন ঈশান গোপালপুর ইউনিয়নের কাচাঁরিটেক এলাকায় চকের মধ্যে বন্ধ অবস্থায় পেয়ে সচল করে এবং স্থানীয় মেম্বার রফিকুল ইসলামের নিকট জমা দেয়।
পরবর্তীতে তার আত্মীয় স্বজন মেম্বারের বাড়ীতে গিয়ে মোবাইল নেয় এবং উক্ত এলাকায় তাকে খুঁজতে থাকে।
খোঁজাখুঁজির এক পর্যায়ে ৩১ জানুয়ারি বেলা অনুমান দুপুর ১২টায় ফরিদপুর জেলার কোতয়ালী থানাধীন ঈশান গোপালপুর ইউনিয়নের দুর্গাপুর কাচারিটেক জনৈক হাকিম মোল্যার পুকুর পাড়ে পরনের প্যান্ট দেখতে পায় এবং একপর্যায়ে উক্ত পুকুরের উত্তর-পশ্চিম কোণে কলাবাগানের ভিতর কলাপাতা দিয়ে ঢাকা অবস্থায় একটি মানুষের হাত দেখতে পেয়ে কলা পাতা সরালে তার আত্মীয় স্বজন উক্ত ফরহাদ প্রামাণিক (২০) কে সনাক্ত করে।
ধারনা করা হয় ৩০ জানুয়ারি সন্ধ্যা অনুমানিক সাড়ে ৯ টার পর হতে মধ্যবর্তী যে কোন সময় অজ্ঞাতনামা আসামীরা উক্ত ফরহাদ প্রামাণিক (২০) কে গলায় প্লাস্টিকের রশি দিয়া পেঁচিয়ে শ্বাসরোধ করে হত্যা করে তার রিক্সা চুরি করে নিয়ে যায়।
ফরিদপুর কোতয়ালী থানা পুলিশ সংবাদ পেয়ে দ্রুত ঘটনাস্থলে পৌঁছে তার সুরতহাল প্রতিবেদন প্রস্তুত করে ময়না তদন্তের জন্য লাশ মর্গে প্রেরণ করে। পরবর্তীতে গত ১ ফেব্রুয়ারি কোতয়ালী থানায় হাজির হয়ে অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিদের নামে এজাহার দাখিল করলে কোতয়ালী থানার মামলা নম্বর-০১, তারিখ-০১/০২/২০২৫ খ্রিঃ, ধারা-৩০২/২০১/৩৭৯/৩৪ পেনাল কোড রুজু হয়।
মামলার তদন্তভার এসআই(নিঃ) শক্তিপদ মৃধা এর উপর অর্পন করা হয়। এই ঘটনায় পুলিশ সুপারের দিক-নির্দেশনায় কোতয়ালী থানা পুলিশের একটি চৌকস টিম তদন্ত কার্যক্রম শুরু করে। গুপ্তচর নিয়োগ ও তথ্য প্রযুক্তির সহায়তায় আসামী সনাক্ত ও গ্রেফতারের জন্য বিভিন্ন জায়গায় অভিযান পরিচালনা করা হয়। অভিযান পরিচালনা কালে গত ১লা ফেব্রুয়ারি বিকেল পাঁচটায় রাজবাড়ী জেলার গোয়ালন্দঘাট থানাধীন এলাকা হতে আসামী ১। মোঃ সুমন শেখ (২১) কে গ্রেফতার করে হেফাজতে নেওয়া হয়।
তার দেওয়া তথ্য মতে কোতয়ালী থানাধীন ঈশান গোপালপুর ইউনিয়নের সাইজুদ্দিন মাতুব্বরপাড়া। মোঃ রেজাউল করিম মিন্টু(৪২) এর ভাঙ্গারি ব্যবসা প্রতিষ্ঠান হতে উক্ত চুরি যাওয়া রিক্সা ভাঙ্গা অবস্থায় ও রিক্সার ৪টি ব্যাটারী উদ্ধারপূর্বক জব্দ করা হয়। আসামী ২। মোঃ রেজাউল করিম মিন্টু (৪২) কে গ্রেফতার করে জেল হেফাজতে পেরন করেন। আসামী মোঃ সুমন শেখ (২১) কে নিবিড় ভাবে জিজ্ঞাসাবাদের একপর্যায়ে উক্ত হত্যাকান্ডের সাথে তার জড়িত থাকার কথা স্বীকার করে এবং তার সহযোগী অপর আসামীর নাম ঠিকানা প্রকাশসহ হত্যাকান্ডের লোমহর্ষক ঘটনা বর্ণনা করে।
আটক আসামী মোঃ সুমন শেখ (২১) জানায়, রিক্সা চুরি করার জন্য উক্ত ফরহাদ প্রামানিক( ২০) কে ভাড়ায় নেওয়ার কথা বলে উক্ত ঘটনাস্থলে নিয়ে গলায় প্রাস্টিকের রশি পেচিয়ে উপর্যুপরি আঘাত করে হত্যা নিশ্চিত করে রিক্সা চুরি করে নিয়ে আসামী রেজাউল করিম মিন্টু (৪২)এর নিকট ১১,০০০/= টাকায় বিক্রি করে। অন্যান্য আসামী গ্রেফতার অভিযানসহ মামলার তদন্ত কার্যক্রম অব্যাহত আছে।