পূর্ব শত্রæতার জের ধরে পতিতাপল্লীতে যাওয়ার নাটক সাজিয়ে খুন করা হয় রবিন মোল্যা (২৩) নামে এক রিক্সাচালককে। নিহত রবিন মোল্যা জেলার সদরপুর উপজেলার চৌধুরী ডাঙ্গী গ্রামের মৃত কানু মোল্যার পুত্র। গত ১৫ই জুলাই ফরিদপুর জেলা সদরের আলিয়াবাদ ইউনিয়নের পাটপাশা বড় ব্রীজ এলাকার মান্নান খালাসীর মেহেগুনী বাগান থেকে তার লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। এ ঘটনায় গত ১৭ই জুলাই ফরিদপুর কোতয়ালী থানায় একটি মামলা দায়ের করেন নিহতের বাবা। ক্লুলেস এই হত্যাকান্ডে মাত্র চারদিনের মধ্যে গতকাল বুধবার ভোর রাতে ঘাতক নাঈম খান (৩১) সহ সহযোগী হালিম শেখকে (৪২) গ্রেফতার করেছে ফরিদপুর কোতয়ালী থানা পুলিশ। এ সময় হত্যাকান্ডে ব্যবহৃত গামছা উদ্ধার করা হয়। ঘাতক নাঈম খান মীরেরডাঙ্গী গ্রামের মোয়াজ্জেম খানের পুত্র।
নাঈমকে গ্রেফতারের বের হয়ে আসে হত্যাকান্ডের লোমহর্ষক রহস্য। লেগুনা গাড়ি চালাতো নাঈম খান। রবিনের অটোরিক্সায় নাঈম খানের গাড়িতে ধাক্কা লাগে, সেদিন দুজনের মধ্যে বাকবিতন্ডা হয়। এরপর পূর্ব শত্রæতা ভুলে গিয়ে তাদের দুজনের মধ্যে গড়ে উঠে সখ্যতা কিন্তু প্রতিশোধ নিতে সুযোগ খুঁজতে থাকে নাঈম খান। সুযোগ পেয়েই রবিন মোল্যাকে গলায় গামছা পেচিয়ে শ্বাসরোধ করে হত্যা করে নাঈম।
গতকাল বুধবার দুপুরে ফরিদপুর পুলিশ সুপার কার্যালয়ে এক প্রেস ব্রিফিংয়ে এসব তথ্য জানান অতিরিক্ত পুলিশ সুপার শেখ আবদুল্লাহ বিন কালাম ও অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) সুমন রঞ্জন সরকার। এ সময় উপস্থিত ছিলেন সদ্য যোগদানকৃত অতিরিক্ত পুলিশ সুপার শৈলেন চাকমা, ফরিদপুর কোতয়ালী থানার ওসি এম.এ. জলিল, তদন্ত অফিসার গফফার হোসেন ও এসআই মিজানুর রহমান।
হত্যাকান্ডের বর্ণনা দিয়ে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার শেখ আব্দুল্লাহ বিন কালাম বলেন- ‘গত ১৫ই জুলাই ফরিদপুর পতিতা পল্লীতে যাওয়ার জন্য নিহত রবিন মোল্যার অটোরিক্সা ভাড়া করে নাঈম খান। ঐদিন সকাল ১০টায় পূর্ব পরিকল্পিত অনুযায়ী ফরিদপুর পতিতাপল্লীর উদ্দেশ্যে রওয়ানা দেয় তারা। তারা চরভদ্রাসন থানাধীন লোহারটেক নামে স্থানে পৌছালে নাঈম রবিনকে বলে অটোরিক্সা নিয়ে ফরিদপুরে গেলে পুলিশে ধরবে। অটোরিক্সা আমার কাছে দাও, আমি নিরাপদে রেখে আসি। তখন রবিন অটোরিক্সা নাঈমের কাছে দেয়। এ সময় নাঈম রবিনকে বলে তুমি ফরিদপুরে চলে যাও, আমি অটোরিক্সা নিরাপদে রেখে ফরিদপুরে আসতেছি। তখন নাঈম অটোরিক্সা নিয়ে চরভদ্রাসন থানার গাবতলা মোড়ে গিয়ে তার পূর্ব পরিচিত হালিম শেখকে ফোন করে আনে এবং তার নিকট রিক্সাটি ১৫ হাজার টাকায় বিক্রি করে। পরে নাঈম ফরিদপুরে এসে রবিনকে সাথে নিয়ে পতিতাপল্লীতে যায়। এরপর তারা ফেরার পথে গজারিয়া বাজারে নেমে দুজনে একসাথে চা পান করে। রবিন তার রিক্সার কথা জিজ্ঞাসা করলে নাঈম বলে তোর রিক্সা সামনে আছে, ঐখানে চল দিয়ে দেব। তারপর দুজনে বাজার হতে লেগুনা যোগে পাটপাশা বড় ব্রীজের উপর নামে। নামার পর নাঈম জানায় তোর অটোরিক্সা মেহেগুনী বাগানে আছে। তারপর সেখানে তারা দুজনে যায়। তখন এ বিষয়ে তাদের মধ্যে কথা কাটাকাটি হয়। এক পর্যায়ে নাঈম তার কোমড়ে থাকা গামছা রবিনের গলায় গিট দিয়ে শ্বাসরোধ করে হত্যা করে।’
হত্যাকান্ডের পেছনের ঘটনা উল্লেখ করে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) সুমন রঞ্জন সরকার বলেন- ‘কিছুদিন পূর্বে রবিনের অটোরিক্সায় নাঈমের লেগুনা গাড়ির ধাক্কা লাগে, এ সময় রবিন নাঈমকে রাগারাগি করে। তারপর আবার তাদের মধ্যে সম্পর্ক গভীর হয়। তার সেদিনের ঘটনায় পূর্ববর্তী বিরোধ এবং অটোরিক্সা বিক্রির টাকার লোভে মূলত রবিনকে হত্যা করা হয়।’