জালের নাম “চায়না জাল”- গড়ে প্রায় ৪০ ফুট লম্বা। এক ফুট পরপর ছোট-বড় মাছ প্রবেশের পথ। প্রবেশ করলে আর বের হতে পারে না। এই জালে রেনু পোনা থেকে বড় মাছ এমনকি জলজ প্রাণি সবই আটকে যায়। বিশেষভাবে তৈরি এই জাল মাছের মরণফাঁদ।
সরকারিভাবে নিষিদ্ধ হলেও গোপালগঞ্জ জেলার মুকসুদপুর উপজেলার খাল-বিল, নদী-নালা এই জালে সয়লাব। এক শ্রেণির অসাধু ব্যবসায়ীরা অধিক লাভের আশায় এসব জাল অবাধে বিক্রি করছেন। অপরদিকে এক শ্রেণির মানুষ এগুলো খালে-বিলে, নদী-নালায় ব্যবহার করে দেশি প্রজাতির মাছের বংশবিস্তার সংকটে ফেলছে।
নিষিদ্ধ এ জালের ব্যবহার বন্ধ ও জব্দে মাঝে মধ্যে অভিযান চালানো হলেও উপজেলা প্রশাসন থেকে দৃশ্যমান কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে না বলে অভিযোগ স্থানীয়দের। তবে মৎস্যসম্পদ ধ্বংসকারী এ জাল বন্ধে ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযান অব্যাহত রয়েছে বলে জানান মুকসুদপুর উপজেলার সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা মো. খায়রুল ইসলাম।
এ উপজেলার বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, চলতি বর্ষা মৌসুমের শুরু থেকেই খাল-বিলে পানি কম। এরপরও এক শ্রেণির অসাধু মৎস্য শিকারী বেপরোয়া হয়ে উঠেছে নিষিদ্ধ ‘রিং জাল’ দিয়ে মাছ শিকারে। স্থানীয়রা জানান, কয়েক দিনের অবিরাম বৃষ্টিতে মুকসুদপুরে নদী, খাল-বিল ও জলাশয়ে পানি বৃদ্ধি পেয়েছে। এই সুযোগে মিঠা পানির সব ধরনের দেশি মাছ সূক্ষ্ম এই ‘চায়না জালে’ ধরা পড়ছে। এতে প্রজনন মৌসুমের আগেই ডিমওয়ালা চিংড়ি, পুঁটি, টেংরা, কই, শিং, মাগুর, তেলাপিয়া, বেলে, বোয়াল, শোল, টাকিসহ প্রাকৃতিক সব মাছ এই জালে নিধন হচ্ছে।
এ জালের ব্যবহার বন্ধের দাবি করে সুশীল সমাজের একাধিক ব্যক্তি মনে করছেন, এমনিতে দেশি মাছ বিলুপ্তির পথে, এই জাল দিয়ে দেশি মাছের রেনুপোনাসহ বিভিন্ন জলজপ্রাণি ধ্বংস করা হচ্ছে। এরফলে দেশি মাছের যে কয়কটি প্রজাতি টিকে রয়েছে তাও অরিচেই বিলুপ্ত হয়ে যাবে। তারা দাবি করেন, নিষিদ্ধ এই জাল ব্যবহারের উপর প্রশাসনের কঠোর নজরদারি করতে হবে।
মুকসুদপুর বাজারের আড়তদাররা জানান, বর্ষা মৌসুমের শেষ দিকে কিছুটা বৃষ্টি ও উজানের ঢলে পানি বৃদ্ধি পেয়েছে। তবে অন্য বছর এ সময় প্রতিদিন শত শত টন মাছ আড়তে উঠত। কিন্তু এবার দেশি মাছ নেই বললেই চলে। নিষিদ্ধ ‘চায়না জালের’ ব্যবহার বন্ধ না হলে ভবিষ্যতে আর হয়তো মিঠা পানির এই মাছ পাওয়া দুষ্কর হবে বলে মত অনেকের।
উপজেলা সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা মো. খায়রুল ইসলাম বলেন, চায়না দুয়ারিসহ সকল নিষিদ্ধ জালের ব্যবহার বন্ধে মানুষকে সচেতন করা হচ্ছে। একই সাথে অভিযান চালিয়ে এসব জাল পুড়িয়ে ধ্বংস করা হচ্ছে। আগামিতে আরও ব্যাপক ভাবে অভিযান পরিচালনা করা হবে।