ঢাকা-গোপালগঞ্জ মহাসড়ক সংলগ্ন মুকসুদপুর উপজেলা সদরে চলছে তাঁত বস্ত্র শিল্প ও বাণিজ্যমেলা। ধীরে ধীরে জমে উঠছে দেড়মাসব্যাপী মেলাটি। তবে, এই মেলা ঘিরে ক্ষোভ সৃষ্টি হয়েছে সাধারণ মানুষের মনে। মেলায় এসেই এই ক্ষোভ প্রকাশ করছেন আগত দর্শনার্থীরা। তাদের প্রশ্ন- ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান মসজিদের পাশেই মেলা কেন?
মটরসাইকেল ও স্বণের চেইন ফ্রিজ পাওয়ার আসায় অনেকেই কিনছেন লটারি টিকিট কেউ কিনছেন ৫০ টি ২০টি কেউ তার চেয়েও বেশী এতে করে কলহ বাড়ছে অনেকের সংসারে। এভাই তাঁত বস্ত্র শিল্প ও বাণিজ্যমেলা লুটে নিচ্ছেন মোটা অংকের টাকা ।
সচেতন মহল মনে করেন পৌর মেয়র ও স্থানীয় প্রশাসন এ ব্যাপারে যদি পদক্ষপ নেয় তাহলে বাচঁবে মডেল মসজিদের সম্মান ও বন্ধ হতে পারে লটারি বাণিজ্য। দেখা যায় বৃহস্পতিবার (২২ জুন ২০২৩ইং) দৈনিক যুগের সাথী পত্রিকায় ও বিজ্ঞাপন দিয়ে লোটারি জুয়ার ফুলঝড়াচ্ছে এই মেলার।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়- মুকসুদপুর উপজেলা মডেল মসজিদের পাশেই বসানো হয়েছে তাঁত বস্ত্র শিল্প ও বাণিজ্যমেলা। তবে- মেলার নামের সাথে রয়েছে অসংগতি। নামে মাত্র তাঁত বস্ত্র শিল্প ও বাণিজ্য মেলা বসানো হয়েছে। মেলায় লটারীর নামে প্রকাশ্যে চলছে রমরমা জুয়া। দর্শনার্থীদের বাধ্যতামূলক করা হয়েছে লটারীর টিকিট। মেলায় প্রবেশ গেটের দুই পাশে রয়েছে পুরুষ ও মহিলা টিকিট কাউন্টার। শুরুতে প্রবেশ টিকিট কাউন্টার থাকলেও বর্তমান বাধ্যতামূলক করা হয়েছে ২০ টাকার বিনিময়ে লটারীর টিকিট নিতে। লটারীর টিকিটে লেখা হচ্ছে দর্শনাথীদের পূর্ণাঙ্গ ঠিকানা ও মোবাইল নম্বর। এতে বিব্রত হচ্ছে মেলায় আগত দর্শনার্থীরা।
এছাড়া লোভনীয় পুরুস্কারের কথায় ফুলঝড়াচ্ছে মেলা কমিটি। মেলার ভেতর কমপক্ষে ২০টি জায়গায় বসানো হয়েছে টিকিট কাউন্টার। টিকিট বিক্রিতে ব্যস্ত কর্মীরা জানান- প্রতিদিন দুটি মোটর সাইকেল ও স্বর্ণের চেইনসহ ৫১টি পুরস্কার দেয়া হচ্ছে। রাত ১০ টা থেকে শুরু হয় লটারীর ড্র অনুষ্ঠান।
মেলায় ঘুরতে আসা বাচ্চু শেখ বলেন, মডেল মসজিদের পাশে এই অশ্লীল মেলা খুব কষ্টকর। প্রশাসন আছে উপজেলার চেয়ারম্যান আছে পৌরসভার মেয়রসহ আরো যারা আইনের লোক আছে সবাই মিলে এই অশ্লীল মেলা বন্ধ করে দেওয়া উচিৎ।
অপরদিকে মেলায় বসানো হয়েছে দিরাজমণি সার্কাস। প্রতিদিন ৩ থেকে ৪টি শো দেখানো হয় সেখানে। এই সার্কাসের আড়ালে প্রতিদিন রাতে চলছে অশ্লীল নৃত্য। সেখানে আনা হচ্ছে চলচ্চিত্রের নায়ক-নায়িকা ও মডেলদের।
তবে, মডেল মসজিদের পাশেই প্রকাশ্যে মেলার নামে জুয়া ও অশ্লীলতা নিয়ে ক্ষোভ সৃষ্টি হয়েছে স্থানীয় ধর্মপ্রাণ মানুষের মনে। স্থানীয় একাধিক ব্যক্তি এ প্রতিবেদককে বলেন- একটা মসজিদের পাশে এভাবে অশ্লীলতা মেনে নেয়া কষ্টকর। দিনরাত সব সময় চলছে গান-বাজনা। মেলাটি আয়োজক কমিটি অন্য কোথাও বসাতে পারতো। নামাজের সময়ও বন্ধ হয় না গানবাজনা। আর রাত হলেতো সার্কাসের নামে চলে যাত্রাপালা।
মেলায় আগত দর্শনার্থীরাও ক্ষোভ প্রকাশ করেন। তারা জানান- মসজিদের পাশে এভাবে মেলা দেয়া ঠিক হয়নি। আয়োজক কমিটি অন্য কোথাও দিতে পারতো।
এ বিষয়ে মডেল মসজিদের ইমাম ও খতিব মাহামুদ হাসান বলেন- আসলেই বিষয়টি একটু খারাপ লাগেই। কিন্তু মসজিদ উদ্বোধনের ৩ থেকে ৪ মাস আগেই হয়তো ডিসি অফিস থেকে মেলার অনুমতি নেয়া হয়েছে। যে কারনে এখন করার কিছু নেই। এসব বিষয় নিয়ে মুখ খুলতে রাজি হয়নি আয়োজক কমিটি। তবে, আয়োজক কমিটির এক সদস্য জাহাঙ্গীর হোসেন জানান- লটারী ও সার্কাস মেলার একটি অংশ। এগুলো না থাকলেতো মেলা জমবে না। তবে, সার্কাসের আড়ালে অশ্লীলতা হচ্ছে না। মুকসুদপুর পৌর মেয়র আশরাফুল আলমের মুঠোফোনে ফোন দিলে বন্ধ থাকায় তার বক্তব্য নেয়া সম্ভব হয়নি।
এ বিষয়ে মুকসুদপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার ইমাম রাজী টুলু মুঠোফোনে এ প্রতিবেদককে বলেন- মেলার বিষয়ে প্রতিদিন আমি মনিটরিং করছি এবং জুয়া এবং অশ্লীলতার বিষয়টি আমার নলেজে আসেনি। আমি যতটুকু জানি আয়োজক কমিটি ২০ টাকার রেফেল ড্র দিচ্ছে এবং প্রবেশ মুখে বাণিজ্য মেলার এন্ট্রি ফি হিসেবে একটি টিকিট দেয়া হচ্ছে। বাধ্যতামূলক রেফেল ড্রয়ের টিকিট দেয়া হচ্ছে না। তবে, রেফেল ড্র এবং সার্কাসের বিষয়ে অনুমতি দেয়া হয়নি বলে উপজেলা নির্বাহী অফিসার জানান।