ফরিদপুরে দেড়যুগ ধরে স্ত্রীর মর্যাদা পাচ্ছেনা জেলা সদরের কৃষ্ণনগর ইউয়িন পরিষদের বর্তমান চেয়ারম্যান বাশারুল আলম বাদশার স্ত্রী রাশেদা বেগম (৬২)। এমনকি তিনি দীর্ঘদিন যাবৎ বড় সন্তান বাবুল ও স্বামীর অমানসিক নির্যাতনে দিশেহারা। শেষ বয়সে স্ত্রীর মর্যাদা ও শান্তির আশায় ঘুরছেন আদালত পাড়া থেকে শুরু করে পুলিশ প্রশাসন সহ বিভিন্ন ব্যক্তির দ্বারে দ্বারে।
রাশিদা বেগম দৈনিক বাঙ্গালী সময়য়ের এ প্রতিবেদককে জানান- আমি একজন বীর মুক্তিযোদ্ধার বোন এবং বর্তমান কৃষ্ণনগর ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের মহিলা সম্পাদিকা। ১৯৭৬ সালে ইসলামিক শরিয়া মোতাবেক বাশারুল আলম বাদশার সাথে তার বিয়ে হয়। বর্তমানে তিনি ৫ সন্তানের জননী। বিয়ের তিন বছর পর থেকেই তার আসল রুপ আমি দেখতে পাই। বিয়ের পরে জানতে পারি আমার আগে রাহিমা নামে একজনকে বিয়ে করেছিলো। তাকে গলা টিপে হত্যা করে আত্মহত্যা বলে চাপিয়ে দেয়। বিষয়টি জানার পরও আমি আমার প্রথম সন্তানের মুখের দিকে তাকিয়ে থেকে যাই। এরপর থেকেই বিভিন্ন কারনে তার উপর অত্যাচার নির্যাতন নেমে আসে। এমনকি যৌতুকের কারনেও বিভিন্ন সময় চাপ প্রয়োগ করে তার উপর নেমে আসে নির্যাতন।
তিনি এ প্রতিবেদককে বলেন- ‘বিগত ২৫ বছর ধরে আমাদের দাম্পত্য জীবনে চির ধরে। আমার স্বামী বাশারুল আলম বাদশা আমাকে ভোরণপোষণ দেয় না। দীর্ঘদিন যাবৎ স্বামীর আদর, ¯েœহ ও ভালোবাসা থেকে বঞ্চিত হয়ে দুঃখ দুর্দশার মধ্যে দিয়ে বিভীষিকাময় জীবন যাপন করতেছি। নিরুপায় হয়ে একা একা বসবাস করে আসছি। তার সামনে গেলেই আমাকে মারধর করে। ৭/৮ বার আমাকে মেরে মাথা ফাটিয়ে দিয়েছে। আমার বড় ছেলে বাবুলকে সব জমিজমা লিখে দিতেছে। বাবুলও আমাকে বিভিন্ন সময় মারধর করে রক্তাক্ত জখম করে। বিষয়টি নিয়ে অন্য সন্তানরা চেয়ারম্যানের ভয়ে কথা বলতে পারে না। কোনো সন্তান কিছু বললেই তাদের নামে মামলা দিয়ে থাকে। আমি বুড়ো বয়সে আর পারছি না। আমি যেখানে আইনের আশ্রয় নিতে যাই সেখানে গিয়ে আমার স্বামী বাঁধা দেয়। তারপর আমি তার বাড়িতে থাকি। ভাঙাচোরা একটি ঘরে থাকি, দেয়ালগুলো ভেঙেও পড়েছে। আমাকে কখন মেরে ফেলে জানিনা। আমি জীবন নিয়ে নিরাপত্তাহীনতায় রয়েছি। এই বয়সে আমি কার কাছে যাবো, কার কাছে বিচার চাবো? তিনি কোনো মান সম্মানের দিকে তাকাচ্ছেন না।
তিনি বলেন- ‘আমার স্বামী একজন স্বার্থবাদী, স্বার্থ ফুরালে সকলকে ভুলে যায়। আমাকে একবার ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচনে জোর করে টাকা দাখিল করায় এবং টাকা উইথড্র করতে দেয় না, বিষয়টি নিয়ে পরবর্তীতে আমার উপর দোষ চাপায়। এরপর আমাকে ২০১২ সালে ডিভোর্স দেয়। পরবর্তীতে আবার ২০১৫ সালে আমাকে কাবিন করে নেন। এরপরও চলতে থাকে অমানবিক নির্যাতন। সে শুধু আমাকে না, এলাকার অসহায় মানুষের উপরও অত্যাচার নির্যাতন করে থাকে। আশেপাশের কয়েকজন মানুষের জমিজমাও জোর করে দখল করে রেখেছেন। তার কারনে বাড়ির পাশের একজন তার বউকে তালাক দিতে বাধ্য হয়।
তিনি আরো বলেন- আমার একটি পুকুরে মাছ চাষ করে চলাফেরা করে থাকি। বর্তমানে সেই পুকুর থেকে মাছও ধরতে দেয় না। জেলেরা মাছ ধরতে গেলে তাদের ভয়ভীতি দেখিয়ে তাড়িয়ে দেয়। আমি বর্তমানে চলবো কিভাবে? এখন আমার কেউ নেই, কার কাছে যাবো? আমি ফরিদপুরের জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপার, ইউএনও সহ আইনের মাধ্যমে বিষয়গুলোর সমাধান চাই। আমি এই বয়সে স্বামী-সন্তানের ভালোবাসা চাই, একটু শান্তিতে থাকতে চাই।
এ বিষয়ে কৃষ্ণনগর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান বাশারুল আলম বাদশা দৈনিক বাঙ্গালী সময়কে বলেন, আমি তাকে নির্যাতন করতেছি না, সে আমাকে নির্যাতন করতেছে। নির্বাচনে কুচক্রীদের পরামর্শে আমার বিরোধীদের পক্ষে ভোট চেয়েছে। আমার একটি পুকুরে মাছ চাষ করি। সে জমির মধ্যে তার নামে আমার বোনের নিকট থেকে কিছু কিনে দিয়েছিলাম। সেই পুকুর পুরোটাই তার দাবি করে। বিষয়টি নিয়ে মামলাও করেছে। এছাড়া বাড়ির বিল্ডিংয়ের তিনভাগের দুই ভাগ সে নিয়েছে। আমি কাজের লোকের থাকার একটি রুমে থাকি। ভোরণপোষণের বিষয়ে প্রতিমাসে ৫ হাজার করে টাকা কোতয়ালী থানার ওসির কাছে দিয়ে আসি। গত দুই মাস যাবৎ সে নাকি তাও নিতেছে না বলে ওসি ফোন দিয়ে বলেছে।