ফরিদপুরের ভাঙ্গায় পৌর সদরের অবস্থিত এম এম ওসমান মডেল স্কুলে গতকাল সোমবার সকালে অর্ধশতাধিক শিক্ষার্থীকে পিটিয়ে আহত করেছে কয়েক শিক্ষক। বকেয়া বেতন পরিষদ করতে দেরি হওয়ার অপরাধে এসব শিক্ষার্থীদের বাঁশের লাঠি, বেত ও পা দিয়ে লাথি মেরে আহত করা হয় বলে জানা যায়। শিক্ষার্থীদের আত্মচিৎকারে আশপাশের লোকজন এগিয়ে আসলে স্কুল থেকে পালিয়ে যায় শিক্ষক ও কর্তৃপক্ষ। আহত উত্তেজিত শিক্ষার্থীদের নিয়ে অভিভাবকগণ উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান এস এম হাবিবুর রহমান ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আজিম উদ্দিন সহ মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা জালাল উদ্দিনের কাছে লিখিত অভিযোগ নিয়ে হাজির হয়। এ সময় আহত শিক্ষার্থীরা তাদের শরীরের বিভিন্ন জায়গায় ক্ষতের চিহ্ন প্রশাসনকে দেখায় এবং অনতিবিলম্বে প্রতিষ্ঠানটির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য দাবি তোলেন। বিষয়টি শুনে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা তাৎক্ষণিকভাবে ঘটনা সত্যতা পেয়ে প্রতিষ্ঠানটিকে সিলগালা করে দেওয়ার নির্দেশ দেন।
একই সাথে দোষীদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ দেন। আহত অনেক শিক্ষার্থী স্থানীয় ক্লিনিক ও হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছেন।
এ বিষয়ে প্রতিষ্ঠানটির পরিচালক ও প্রধান শিক্ষক এম এম ওসমান দৈনিক বাঙ্গালী সময়কে বলেন, ঘটনার সময় আমি স্কুলে ছিলাম না। আমি তখন ভাঙ্গার ইতিহাস বই লেখার জন্য আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন চলচ্চিত্র নির্মাতা তারেক মাসুদের বাড়িতে অবস্থান করছিলাম এবং তার মায়ের সাথে কথা বলতেছিলাম। কোন কোন শিক্ষক ছাত্রদের মেরেছে তাও আমি দেখি নাই। আমার প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে একটি কুচক্র মহল উঠেপড়ে লেগেছে। এর সাথে কয়েকজন শিক্ষকও জড়িত হয়েছে, যার বহিঃপ্রকাশ আজ ঘটেছে। পরিকল্পিতভাবে কয়েকজন শিক্ষক এ ঘটনা ঘটিয়েছে। শিক্ষার্থীদের কাছে কোনো পাওনা টাকা নেই। পরীক্ষায় আমি নিজে অন্য মাধ্যমে প্রশ্ন করায় শিক্ষকেরা আমার উপর ক্ষিপ্ত হয়, তারই বহিঃপ্রকাশ।
উল্লেখ্য ভাঙ্গা থানার পাশে অবস্থিত এম এম ওসমান মডেল স্কুলটি দীর্ঘদিন যাবত পাঠদানের অন্তরালে কোচিং বাণিজ্য করে আসছে। অথচ সরকারিভাবে পাঠদানের কোন অনুমতি নেই প্রতিষ্ঠানটির। ভাঙ্গা অবস্থিত বিভিন্ন স্কুলে সাথে আঁতাত করে ওই স্কুলের রেজিস্ট্রেশন দেখিয়ে চার পাঁচশ শিক্ষার্থীকে নিয়মিত কোচিং এর মাধ্যমে প্রতিষ্ঠানটি পাঠদান করত। এর আগেও উক্ত প্রতিষ্ঠানে নিয়মিতভাবে সরকারি বই শিক্ষার্থীদের হাতে পৌঁছালে প্রশাসনের ভেতরে বিতর্ক সৃষ্টি হয়। সে সময় তৎকালীন মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তার ছত্রছায়ায় বিষয়টি ধামাচাপা দেওয়া হয়। তারপরেও বীর দর্পে পাঠদান চালিয়ে যাচ্ছিল প্রতিষ্ঠানটির কর্ণধর এম এম ওসমান। এসব কোচিং বাণিজ্যে শিক্ষার্থীদের শতভাগ গ্যারান্টি দিয়ে পাস করানোর প্রলভোন দেখিয়ে শত শত শিক্ষার্থীর কাছ থেকে প্রতিমাসে হাতিয়া নিত লাখ টাকা।