উপজেলা নির্বাচনের আগের দিন আড়াই হাজার কোটি টাকা পাচারের অভিযোগে ফরিদপুরের বহুল আলোচিত দুই ভাইসহ ৪৭ জনের নামে দেওয়া সম্পূরক অভিযোগপত্রর (চার্জশিট) আসামি সামচুল আলমকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দিয়েছেন আদালত। মঙ্গলবার বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে আড়াই হাজার কোটি টাকা পাচার মামলার আসামি সামচুল আলম ঢাকার সিনিয়র স্পেশাল জজ মোহাম্মদ আসসামস জগলুল হোসেনের আদালতে হাজির হয়ে জামিনের আবেদন জানালে আদালত জামিনের আবেদন নামঞ্জুর করে তাকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন।
ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে সংশ্লিষ্ট আদালতের অতিরিক্ত পাবলিক প্রসিকিউটর তাপস কুমার পাল বলেন, সামচুল আলম এবং সম্পূরক চার্জশিটের আরও দুই আসামি অমিতাভ বোস ও গোলাম নাসির আদালতে হাজির হয়ে জামিন প্রার্থনা করেন। আদালত অমিতাভ বোস ও গোলাম নাসিরের জামিন মঞ্জুর করলেও সামচুল আলমের জামিন না মঞ্জুর করেন। সামচুল আলম ফরিদপুর সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক।
৮ মে প্রথম পযায়ে অনুষ্ঠিত ফরিদপুর সদর উপজেলা পরিষদের নির্বাচনে তিনি জেলা আওয়ামী লীগ সমর্থিত চেয়ারম্যান প্রার্থী হিসেবে আনারস প্রতীক নিয়ে নির্বাচন করছেন। একই মামলার আসামি হিসেবে অন্য যে দুইজনকে ওই আদালত জামিন দিয়েছেন তারা হলেন জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক ও ফরিদপুর পৌরসভার মেয়র অমিতাভ বোস ও জেলা শ্রমিক লীগের সভাপতি ও জেলা আওয়ামী লীগের নির্বাহী কমিটির সদস্য গোলাম নাসির। ঘটনার বর্ণনা দিয়ে অমিতাভ বোস বলেন, সামচুল আলমসহ আমরা তিনজন একসাথে ছিলাম। আমরা তিনজনই আদালতে জামিনের আবেদন জানাই। আদালত আমার ও নাসিরের জামিনের আবেদন মঞ্জুর করলেও সামচুল আলমের জামিনের আবেদন নামঞ্জুর করেন।
এ আদেশ শুনে সামচুল আলম আদালতে অসুস্থ হয়ে পড়েন। এ ঘটনার প্রতিক্রীয়া জানার জন্য জেলা আওয়ামী রগের সভাপতি শামীম হক ও সাধারণ সম্পাদক শাহ্ মো. ইশতিয়াকের মুটোফোনে একাধিকবার ফোন করা হয়। তবে তারা কেউ ফোন না ধরায় এ ব্যাপারে তাদের বক্তব্য জানা যায়নি। প্রসঙ্গত ২০২০ সালের ২৬ জুন আড়াই হাজার কোটি টাকা পাচারের অভিযোগে ওই সময় ফরিদপুর-৩ আসনের সংসদ সদস্য সাবেকমন্ত্রী খন্দকার মোশাররফ হোসেনের আস্থাভাজন ও ঘনিষ্টজন হিসেবে পরিচিত দুই সহোদর ফরিদপুর শহর আওয়ামী লীগের তৎকালীন সাধারণ সম্পাদক সাজ্জাদ হোসেন বরকত ও ফরিদপুর প্রেসক্লাবের তৎকালীন সভাপতি ইমতিয়াজহোসান রুবেলের বিদ্ধে রাজধানীর কাফরুল থানায় মামলা দায়ের করেন সিআইডির পরিদর্শক এস এম মিরাজ আল মাহমুদ।
২০২১ সালের ৩ মার্চ মামলার তদন্ত কর্মকর্তা সিআইডির সহকারী পুলিশ কমিশনার (এএসপি) উত্তম কুমার সাহা সিএমএম আদালতে এ মামলায় ১০ জনের নামে প্রথম অভিযোগপত্র জমা দেন। একই বছরের ৩০ সেপ্টেম্বর এ মামলায় ১০ আসামির বিরুদ্ধে চার্জশিট গ্রহণ করে আদেশ দেন ঢাকার সিনিয়র স্পেশাল জজ কে এম ইমরুল কায়েশ। এরপর মামলাটি বদলি হয়ে বিশেষ জজ আদালত-৯ এ আসে। এ আদালতে ২০২২ সালের ১ সেপ্টেম্বর চার্জ শুনানির দিনে চার্জশিটে কিছু অসঙ্গতি পরিলক্ষিত হলে আদালত স্বপ্রণোদিত হয়ে মামলাটি অধিকতর তদন্তের জন্য সিআইডিকে আদেশ দেন।
সে অনুযায়ী গত বছর ২২ জুন মোট ফরিদপুর সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সামচুল আলমসহ মোট ৪৭ জনকে অভিযুক্ত করে নতুন করে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করেন পুলিশের অপরাধ তদন্ত সংস্থা-সিআইডির সহকারী পুলিশ সুপার রায়হান উদ্দিন। গত ২২ এপ্রিল আলম ঢাকার সিনিয়র স্পেশাল জজ মোহাম্মদ আসসামস জগলুল হোসেন এ চার্জশিট গ্রহন করে আদালত জামিনে থাকা আসামিদের জামিনের মেয়াদ বর্ধিত করেন এবং বাকি ৩৭ জনের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারির আদেশ। আদালত মামলার পরবর্তি তারিখ ধার্ করেছেন আগামী ৩০ মে।
প্রসঙ্গত ২০২০ সালের ১৬ মে রাতে ফরিদপুরে জেলা আওয়ামী লীগের তৎকালীন সভাপতি সুবল চন্দ্র সাহার বাড়িতে দুই দফা হামলার ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় ১৮ জুন অজ্ঞাত ব্যক্তিদের আসামি করে ফরিদপুর কোতয়ালী থানায় একটি মামলাদায়ের করেন সুবল চন্দ্র সাহা। এর জের ধরে ওই বছর ৭ জুন ফরিদপুরে পুলিশের বিশেষ অভিযানে খন্দকার মোশাররফের বাড়ি থেকে সাজ্জাদ হোসেন ও ইমতিয়াজ হাসানসহ ১০জনকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। এ বিশেষ অভিযানের একদিন পর ৯ জুন ফরিদপুর শহর ছেড়ে ঢাকা চলে যান ফরিদপুর-৩ (সদর) আসনের তৎকালীন আওয়ামী লীগ মনোনীত সংসদ সদস্য ও সাবেক এলজিআরডি মন্ত্রী খন্দকার মোশাররফ হোসেন।