ফরিদপুরের কুমার নদকে রক্ষা করে নান্দনিক সাজে রুপ দিতে কচুরিপানা অপসারণ কর্মসূচি চলছে। এতে অংশ নিয়েছেন জেলার ১০ হাজার স্বেচ্ছাসেবী। পৌরসভাধীন ১০টি এলাকায় চলছে এ কর্মসূচি। গতকাল শনিবার সকাল ৭ টায় ফরিদপুর শহরের গোয়ালচামট প্রতিমা বিসর্জন ঘাটে এ কর্মসূচির উদ্বোধন করেন জেলা প্রশাসক (ডিসি) কামরুল আহসান তালুকদার। ফরিদপুর জেলা প্রশাসনের আয়োজনে এবং ফরিদপুর জেলা পরিষদ, ফরিদপুর পৌরসভা ও উপজেলা পরিষদের সার্বিক সহযোগিতায় এ অপসারণ কর্মসূচির উদ্যোগ নেওয়া হয়।
এতে জেলার বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার দশ হাজার মানুষ কাজ করছেন, তাদের মধ্যে মৎস্যজীবী ৯০০, ছাত্রী-ছাত্রী ১ হাজার, অন্যান্য পেশার ৮ হাজার ১০০ জন রয়েছেন। কাজে অনুপ্রেরণা জোগাতে বিসর্জন ঘাট সংলগ্ন মঞ্চে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ও গান পরিবেশন করছে বিভিন্ন সংগঠনের শিল্পীরা।
অপসারণ কর্মসূচির উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে জেলার অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) ইয়াছিন কবীরের সভাপতিত্বে এসময় বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন- পুলিশ সুপার (এসপি) মো. শাহজাহান, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) সুমন রঞ্জন সরকার, ফরিদপুর জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান শাহাদাত হোসেন, জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি শামীম হক, সাধারণ সম্পাদক শাহ মো. ইশতিয়াক আরিফ, ফরিদপুর পৌরসভার মেয়র অমিতাভ বোস, সদর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আব্দুর রাজ্জাক মোল্লা, সরকারি রাজেন্দ্র কলেজের অধ্যক্ষ প্রফেসর অসীম কুমার সাহা, জেলা জাকের পার্টির সভাপতি মশিউর রহমান যাদু মিয়া প্রমুখ। এছাড়া এসময় উপস্থিত ছিলেন- ফরিদপুর জেলা আওয়ামী লীগ ও তাঁর অঙ্গ সংগঠনের নেতৃবৃন্দ, ফরিদপুর পৌরসভার কাউন্সিলর ও সংরক্ষিত মহিলা কাউন্সিলর বৃন্দ, বিভিন্ন সামাজিক সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠানের ব্যক্তিবর্গ, বিএনসিসি, রোভার স্কাউট, ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স, পরিবেশ অধিদপ্তর, এনজিও ব্যক্তিবর্গ সহ সর্বস্তরের জনগণ।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বক্তারা বলেন, ফরিদপুর শহরকে নান্দনিক সাজে সজ্জিত করার লক্ষ্যে কুমার নদ পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করা অপরিহার্য হয়ে পড়েছে। বর্তমান সরকারের আমলে ফরিদপুরের অবকাঠামোগত উন্নয়নসহ অন্যান্য খাতে ব্যাপক উন্নতি সাধিত হয়েছে। এরই ধারাবাহিকতায় কুমার নদের কচুরিপানা অপসারণ করে মৎস্যচাষ সহ নান্দনিক সাজে সজ্জিত করা হবে।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের শেষে জেলা প্রশাসক (ডিসি) কামরুল আহসান তালুকদার বলেন, সকালে উদ্বোধন অনুষ্ঠান শেষে একযোগে শহরের আড়াই কিলোমিটার এলাকার দশটি স্পটে ১০ হাজার স্বেচ্ছাসেবী কচুরিপানা অপসারণে নদে নামে। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে আরও লোকজন অংশগ্রহণ করে। চোখের সামনে একটা নদী মারা যাবে এটা হতে পারে না। যেকোনো মূল্যেই এ কচুরিপানা অপসারণ করতে হবে। তাইতো চ্যালেঞ্জ জেনেও এ উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। তবে সবার সাড়া পেয়েছি। ফরিদপুর শহর ছাড়াও জেলার অন্য উপজেলাগুলোতেও একইদিন কচুরিপানা ও বর্জ্য অপসারণ কর্মসূচি চলছে।
তিনি আরো বলেন- পরিচ্ছন্নতা অভিযানের পর কুমার নদে কেউ ময়লা আবর্জনা ফেললে তার বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এছাড়া নদীর দুইপাড়ে অবৈধ দখলে থাকা স্থাপনা ভেঙ্গে ফেলা হবে। কুমার নদকে রক্ষা করতে যা যা করা দরকার সবই করা হবে। এ নদ নিয়ে যতদূর যাওয়া যায় আমরা পর্যায়ক্রমে ততোদূর যাব। কচুরিপানা অপসারণের মাধ্যমে এ কাজের সূচনা হলো। এরপর নদীকে দখল ও দূষণমুক্ত করতে যা যা প্রয়োজন সবই করা হবে। আমরা এ কাজে সবাইকে সম্পৃক্ত করতে চাই। কুমার নদ রক্ষায় সবার মধ্যে একটি বার্তা পৌঁছে যাবে। যার যার পাড়ের ময়লা অপসারণে তারা নিজে থেকে আগ্রহী হবেন।