ফরিদপুর সদর উপজেলার চর মাধবদিয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান তুহিনুর রহমান খোকন মন্ডল (৫৪) এর বিরুদ্ধে এক অসহায় শিক্ষকের পৈতৃক সম্পত্তি জোর দখলের অভিযোগ উঠেছে।
ঘটনার সূত্রে জানা যায়, ২০২১ সালের ১ জুন মৃত আইনুদ্দিন গং এর ওয়ারিশ গণ বাদী হয়ে ফরিদপুর সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা কে বিবাদী করে ফরিদপুর বিজ্ঞ সিনিয়র সদর সহকারী জজ আদালতে একটি দেওয়ানী মামলা করেন যার মামলা নং ২১৭/ ২০২১।
মামলার এজাহারে উল্লেখ করা হয় ফরিদপুর সদর উপজেলার চর মাধবদীয়া ইউনিয়নের বালুরধুম মৌজার অন্তর্গত আফজাল মন্ডলের গরুর হাট সংলগ্ন বাদী মোঃ শফিউদ্দিন শেখ (৫৮) (পদ্মার চর মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের অফিস সহকারী কাম সহকারী শিক্ষক) পিতা: মৃত শেখ আইনুদ্দিন । বাপ- দাদার পৈতৃক সম্পত্তি (রেকর্ড মূলে) এস এ খতিয়ান নং- ৩৩০ দাগ নং- ১৬৫৬-৫৭-৫৮-৫৯ দিয়ারা খতিয়ান নং- ৬০৯ দিয়ারা দাগ নং- ৩০৮৭ উপরোক্ত খতিয়ান ও দাগে মোট জমির পরিমাণ ২ একর ৭৮ শতাংশ।
দলিল মূলে ক্রয় কৃত সম্পত্তির বিবরণ:
দলিল সম্পাদনের তারিখ: ১৮ জুন ১৯৬৪ ইং দলিল নং- ৩১০৩ দাতা: মৃত শেখ দরশন গ্রহীতা: মৃত শেখ আইনদ্দিন এস এ খতিয়ান নং- ৩২৯ দাগ নং-১৬৫৫ দিয়ারা খতিয়ান নং-৮০৮ দিয়ারা দাগ নং-৩০৮৭ জমির পরিমাণ সাড়ে ১৬ শতাংশ।
দলিল সম্পাদনের তারিখ: ১০ সেপ্টেম্বর ১৯৬৪ ইং দলিল নং-৩৫১৩ দাতা: মৃত শেখ দরশন গ্রহীতা মৃত শেখ আইনদ্দিন এস এ খতিয়ান নং-৩২৯ দাগ নং-১৬৫৪-৫৫ জমির পরিমাণ ২১ শতাংশ। দলিল সম্পাদনের তারিখ: ১০ সেপ্টেম্বর ১৯৬৪ ইং দলিল নং-৩৫১২ দাতা: মৃত শেখ দরশন গ্রহীতা মৃত শেখ আইনদ্দিন এস এ খতিয়ান নং-৩২৯ দাগ নং-১৬৫৪-৫৫-৫৬ জমির পরিমাণ ৩৮ শতাংশ। দলিল সম্পাদনের তারিখ: ২২ মার্চ ১৯৬৬ ইং দলিল নং-২৯২৮ এস এ খতিয়ান নং-৭৪ দাগ নং-১৬৬০ জমির পরিমাণ ৪৩ শতাংশ ও দিয়ারা খতিয়ান নং-৬১১ দাগ নং-৩০৮৮ জমির পরিমাণ ৫০ শতাংশ। জমির সঠিক পরিমাণ ও অবস্থান নির্ণয়ের জন্য বিজ্ঞ আদালত একজন এডভোকেট কমিশনার নিযুক্ত করেন । অ্যাডভোকেট কমিশনার তদন্ত প্রতিবেদনের ভিত্তিতে জানা যায়, আদালতের নির্দেশ অনুযায়ী দায়িত্বপ্রাপ্ত অ্যাডভোকেট কমিশনার গত ১৫ জানুয়ারি ২০২২ ইং তারিখে সরেজমিনে গিয়ে পরিমাণ,নকশা প্রস্তুত ও অবস্থান নির্ণয় করে দেখতে পায় । বালুরধুম মৌজার অন্তর্গত দিয়ারা ৩০৮৭/৮৮ নং দাগের পার্শ্ববর্তী আফজাল মন্ডল গরুর হাট কর্তৃপক্ষ দিয়ারা ৩০৮৭ দাগের মোট ৩ একর ৫৪ জমির মধ্যে ৬০ শতাংশ জমি এবং দিয়ারা ৩০৮৮ নং দাগের ৫০ শতাংশ জমির মধ্যে ১১.২৫ শতাংশ বাদীর জমি দখল করে গরুর হাট স্থাপন করেছে। মামলা চলমান থাকা সত্ত্বেও আইনের তোয়াক্কা না করে গরুর হাট কর্তৃপক্ষ জোর দখল করে দেয়াল তৈরি করে । ২৪/১১/২০২২ ইং তারিখে মৃত আইনুদ্দিন শেখের ছেলে নান্নু শেখ (৪৫)বাদী হয়ে চর মাধবদিয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মীর্জা সাইফুল ইসলাম আজম(৫০) কে বিবাদী করে বিজ্ঞ অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে ১৪৪ ধারায় একটি মামলা দায়ের করেন । যাহার পিটিশন নং ৩৭৯/ ২২ । তাতেও কোন প্রতিকার পাননি তিনি পুনরায় বর্তমান চর মাধবদীয়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান তুহিনুর রহমান খোকন মন্ডল ( ৫৪) সরকারি অর্থায়নে প্রকল্পের মাধ্যমে গরুর হাট ঘাট শাসনের নামে জমি জোর দখল করে দেয়াল নির্মাণ করে।
পুনরায় গত ১২/০৬/২০২৩ ইং তারিখে মৃত সানাউল্লার ছেলে আব্দুল হালিম শেখ (২৭) বাদী হয়ে চর মাধবদিয়া ইউনিয়ন পরিষদের বর্তমান চেয়ারম্যান তুহিনুর রহমান খোকন মন্ডলের (৫৪) বিরুদ্ধে অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে ১৪৪ ধারায় আরেকটি মামলা দায়ের করেন। এ বিষয়ে জানতে চাইলে চর মাধবদিয়া ইউনিয়নে চেয়ারম্যান তুহিনুর রহমান খোকন মন্ডল(৫৪) বাঙ্গালী খবর কে বলেন আমরা যে জায়গায় গরুর হাট বসেয়েছি সেই জায়গাটি সরকারি ঐখানে কোন মালিকানা জায়গা নেই তারপরেও আইনুদ্দিন গং এর সাড়ে ১৬ শতাংশ জমি আমাদের গরুর হাটের আওতাধীন আছে আমরা চুক্তিপত্রের মাধ্যমে এক বছরের চুক্তি করি প্রতি মাসে ৮ হাজার টাকা এবং প্রতি সপ্তাহে হাটের দিন ২ হাজার টাকা জমির মালিক কে ভাড়া হিসেবে দিয়ে থাকি । আমি কারো জমে চোর দখল করি নাই একটি মহল আমার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করে আমার ভাবমূর্তি নষ্ট করার চেষ্টা করছে। চেয়ারম্যানের প্রতিনিধি অবসরপ্রাপ্ত সেনা সদস্য সালাউদ্দিন (৬৫) তিনি একটি চুক্তিপত্র দেখান যাহাতে সাক্ষী বা জমির মালিকের কোন স্বাক্ষর নেই ।
নাম প্রকাশ না করা শর্তে স্থানীয় কয়েকজন বাসিন্দা বলেন আফজল মন্ডলের নির্ধারিত গরুর হাট টি পাকা রাস্তার পশ্চিম পাশে ১০ শতাংশ জমির উপরে চেয়ারম্যান সেখানে গরুর হাট না বসিয়ে প্রভাব খাটিয়ে শফিক মাষ্টারের জায়গায় গরুর হাট বসিয়েছেন। তিনি একজন জনপ্রতিনিধি হয়ে এ ধরনের কাজ করলে আমরা তার প্রতি আস্থা রাখবো কিভাবে? তার উচিত মূল মালিক কে জমির দখল বুঝিয়ে দেওয়া এবং নির্ধারিত জায়গায় গরুর হাট বসানো ।
ভুক্তভোগী শফিউদ্দিন শেখ (শিক্ষক)ক্ষোভ ও দুঃখ প্রকাশ করে বলেন কয়েক লাখ টাকা খরচ করে আমার জমিতে মাটি ভরাট করেছি প্রায় কোটি টাকা মূল্যের আমার বাপ -দাদার পৈত্রিক সম্পত্তি চেয়ারম্যান তুহিনুর রহমান খোকন জোর দখল করে প্রভাব খাটিয়ে আমার জায়গার উপরে গরুর হাট বসিয়েছেন।
আমি খুব অসহায় অবস্থা জীবন যাপন করছি জমির জন্য চিন্তা করতে করতে আমার বাবার মৃত্যু হয়েছে। কখন যেন আমিও মারা যাই তাই আমি আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল কর্তৃপক্ষের প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণ করি আমার বেদখল হওয়া জমি উদ্ধারে আপনাদের সার্বিক সহযোগিতা কামনা করি।