গোপালগঞ্জ জেলার মুকসুদপুর উপজেলার প্রায় তিন লাখ পঞ্চাশ হাজার জনগণ পাচ্ছে ডিজিটাল স্বাস্থ্য কার্ডের সুবিধা। সারা দেশের মধ্যে তিনটি হাসপাতালে চালু হয়েছে এই ডিজিটাল প্ল্যাটফর্ম। এর মধ্যে মুকসুদপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স একটি। নিঃসন্দেহে বলা যায় এটা মুকসুদপুরবাসীর সৌভাগ্য। ইউএইচও ডা.রায়হান ইসলাম শোভনের অক্লান্ত পরিশ্রমে এটি সম্ভব হয়েছে। গত ( ৫ অক্টোবরের ২০২৩ ) তারিখ থেকে মুকসুদপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চালু হয়েছে এই সুবিধা। উপজেলার কিছু সংখ্যক লোক এই সুবিধা ভোগ করছে। পর্যায়ক্রমে উপজেলার প্রায় তিন লাখ পঞ্চাশ হাজার জনগণ এই সুবিধা ভোগ করবেন। জনগণের স্বাস্থ্যসেবা ব্যবস্থা আরও সহজতর করতে উন্নত দেশের ন্যায় এবার বাংলাদেশেও শুরু হয়েছে হেলথ আইডি সম্বলিত হেলথ কার্ড। জাতীয় পরিচয়পত্রে ব্যক্তিগত তথ্যের ন্যায়, এই কার্ডে থাকবে আপনার স্বাস্থ্যসেবা তথ্য। প্রথম ধাপে ঢাকা, গোপালগঞ্জ ও মানিকগঞ্জের মোট আট প্রতিষ্ঠানে পরীক্ষামূলকভাবে এই কার্যক্রম চলবে।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, সব সরকারি ও বেসরকারি স্বাস্থ্য প্রতিষ্ঠানের মধ্যে স্বাস্থ্য তথ্য আদান প্রদান এবং বাংলাদেশের নাগরিকদের স্বাস্থ্য তথ্য সংরক্ষণের একক প্ল্যাটফর্ম প্রস্তুত করার লক্ষ্য নিয়ে ‘শেয়ারড হেলথ রেকর্ড’ বাস্তবায়নে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের এমআইএস বিভাগের উদ্যোগে শুরু হয়েছে এই উন্নত স্বাস্থ্য ব্যবস্থা।
বর্তমানে ঢাকা মহানগরের মধ্যে National Institute of Traumatologz and Orthopaedic Rehabilition (NITOR) এবং ঢাকা বিভাগের মানিকগঞ্জ ও গোপালগঞ্জের সব সরকারি স্বাস্থ্য প্রতিষ্ঠান/ হাসপাতালে রোগীদের হেলথ আইডি প্রদানের পরীক্ষামূলক কার্যক্রম চলছে, শিগগিরই শুরু হবে পাইলটিং কার্যক্রম।প্রথম ধাপ: হেলথ আইডি প্রাপ্তির জন্য হাসপাতালে চিকিৎসা গ্রহণকালে জাতীয় পরিচয়পত্র অথবা জন্ম নিবন্ধন নম্বর (১৮ বছরের নিম্নে) এর কপি সহ হাসপাতালে যেতে হবে। পরবর্তীতে দ্রুত সময়ের মধ্যে তারা হাতে পেয়ে যাবেন এই কার্ডটি।
কেন এই হেলথ কার্ড: ১. বাংলাদেশের হাসপাতাল ও স্বাস্থ্য প্রতিষ্ঠানকে অটোমেশনের আওতাভুক্ত করা। ২.‘শেয়ারড হেলথ রেকর্ড’এর মাধ্যমে সকল প্রতিষ্ঠান কেন্দ্রীয়ভাবে সংযুক্তিকরণ। ৩. বাংলাদেশের প্রত্যেক নাগরিকের থাকবে নিজস্ব ‘হেলথ আইডি’ নম্বর। ৪. সুনির্দিষ্টভাবে রোগ নির্ণয় করা। ৫. চিকিৎসাসেবার গুণগত মান বৃদ্ধি ৬. নাগরিকদের অর্থ ও সময় সাশ্রয় ৭. চিকিৎসা ব্যবস্থা আরও সুশৃঙ্খল. ৮ সর্বজনীন স্বাস্থ্য সেবা নিশ্চিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা।
কী থাকবে এই কার্ডে: ১. রোগীদের জন্ম থেকে মৃত্যু পর্যন্ত সকল স্বাস্থ্য সেবার তথ্য সংরক্ষিত থাকবে এই ডিজিটাল ডাটাবেজে। ২. পূর্বের চিকিৎসা এবং পরীক্ষা-নীরিক্ষার কাগজ হারানোর ভয় থাকবে না। ৩. রোগীর বহন করে নিতে হবে না কোন কাগজ। অনলাইনেই থাকবে সব তথ্য। ৪. শুধু হেলথ কার্ডের বদৌলতেই আপনি পেয়ে যাবেন আপনার প্রয়োজনীয় স্বাস্থ্যসেবা। ৫. সকল পরীক্ষা-নিরীক্ষার রিপোর্ট চলে যাবে আপনার ইমেইল এড্রেসে। ৬. অনলাইনে ঘরে বসেই রোগীরা হাসপাতালে এপয়েন্টমেন্ট নিতে পারবেন।
কীভাবে পাব এই স্বাস্থ্য কার্ড: সরকার খুব শিগগিরই স্বাস্থ্য কার্ডের জন্য একটি বিশেষ ওয়েবসাইটের যাত্রা শুরু হতে যাচ্ছে। যেখানে আপনি যে কোন সময় যে কোন জায়গা থেকে অনলাইনে নিবন্ধনের মাধ্যমে স্বাস্থ্য কার্ড পেয়ে যেতে পারেন।
যারা অনলাইনে নিজে নিবন্ধন করতে পারবেন না তারা: চিকিৎসা গ্রহণকালে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর অনুমোদিত যে কোন সরকারি-বেসরকারি স্বাস্থ্য প্রতিষ্ঠান ও হাসপাতালে গিয়ে আপনার জাতীয় পরিচয় পত্র কিংবা জন্ম নিবন্ধন পত্র দেখালেই, উক্ত প্রতিষ্ঠানের নির্ধারিত রেজিস্ট্রেশন কাউন্টার কিংবা বুথে গেলেই স্বল্প সময়ের মধ্যে আপনার কার্ডটি তৈরি করতে সাহায্য করবে তারা।
কী কী লাগবে এই কার্ড পেতে: ১. ১৮ বছর বয়সের ঊর্ধ্বে- তাদের লাগবে শুধু জাতীয়পরিচয়পত্র, ২. ১৮ বছর বয়স নিচে- তাদের লাগছে জন্মনিবন্ধনপত্র।
উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স সুত্রে জানা যায়, প্রতিদিন জরুরী বিভাগে গড়ে ১৫০ জন রোগী দেখা হয়। আউটডোরে প্রতিদিন ৮টি বিভাগে ৮ জন ডাক্তার রোগী দেখেন। গাইনি, শিশু, এনসিডি, জেনারেল পুরুষ, জেনারেল মহিলা, কিশোর-কিশোরী এবং ভায়া টেষ্ট। আউটডোরে রোগী অনলাইনে টিকিট নিয়ে ডাক্তারের রুমে যান। যে বিভাগের ডাক্তার রুগী দেখাবেন সেই বিভাবেগর ডাক্তারের কম্পিউটারে রোগীর টিটিট এবং তার রোগের বিস্তারিত পৌছে যায়। ডাক্তার তাকে চিকিৎসা শেষে অনলাইনে হাসপাতাল ফার্মেসীতে রোগীর কি কি ওষুধ লাগবে সেটার প্রেসক্রিবশন পৌছে দেন। ফার্মেসী রোগীকে তার ওষুধ বুঝিয়ে দেন। রোগীর কোন টেষ্ট থাকলে সেটা ডাক্তার তাৎক্ষণাৎ হাসপাতাল ল্যাবে অনলাইনে পৌছে দেন। ল্যাব টেকনিশিয়ান অনলাইন টেষ্ট শেষে ডাক্তারের কাছে অনলাইনে টেষ্ট রিপোর্ট পাঠিয়ে দেন। অর্থাৎ রোগীর কোন কাগজপত্র নিয়ে দৌড়াতে হয়না। সব কিছুই অনলাইনে হয়। এক কথায় বলা যায় ডিজিটাল বাংলাদেশের একটি বাস্তব নমুনা মুকসুদপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স। আর এই সব কিছুই সম্ভব হয়েছে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের টিএইচও ডা. রায়হায়ন ইসলাম শোভনের একান্ত প্রচেষ্টায়।
ডিজিটাল হেলথ কার্ড প্রাপ্ত টেংরাখোলা গ্রামের রতন আলী জানান, আমার জ্বর হয়েছিলো। হাসপাতালের আউটডোরে এসেছিলাম ডাক্তার দেখাতে। এখানে আসার পরে টিকিট কাউন্টার থেকে আমার কাছে এন আইডিকার্ড কাছে কিনা জানতে চাইলে আমি আমার এনআইডি কার্ডটা দেই। দেয়ার পরে আমাকে একটা হেলথ কার্ড দিয়েছে। পরবর্তীতে আমি আবার অসুস্থ্য হলে হাসপাতালে যাওয়ার পরে আমার ওই হেলথ আইডি কার্ড থেকে আমার তথ্য নিয়ে আমাকে চিকিৎসা দিয়েছে। আমি এই আধুনিক স্বাস্থ্য সেবা পেয়ে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষসহ সরকারকে ধন্যবাদ জানাই।
উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের টিএইচও ডা. রায়হান ইসলাম শোভন মুকসুদপুর সংবাদকে জানান, আমি ১৯ ফেব্রুয়ারী ২০২২ সালে মুকসুদপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে যোগদান করি। যোগদানের পরেই মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনার ডিজিটাল বাংলাদেশ বির্নিমাণের স্বপ্ন বাস্তবায়নের লক্ষ্যে হাসপাতালে টিমওয়াইজ কাজ শুরু করি। প্রথমে স্বল্প পরিসরে আউটডোরে রুগীদের জন্য অনলাইন টিকিট চালু করা হয়। পরবর্তীতে সকল সেক্টরে অনলাইন কার্যক্রম চালু করা হয়। সরকার উন্নত বিশ্বের সাথে তাল মিলিয়ে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর ডিজিটাল হেলথ কার্ড চালু করার সিদ্ধান্ত নেয়। সেই সিদ্ধান্তের প্রেক্ষিতে সারা দেশে তিনটি হাসপাতালে পরীক্ষামূলকভাবে এই সেবা চালু করার সিদ্ধান্ত হয়। টুঙ্গীপাড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ছিলো স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পছন্দের তালিকায়। কিন্তু ডিজিটালাইজড কার্যক্রমে মুকসুদপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স গোপালগঞ্জের মধ্যে প্রথম স্থানে থাকায় মুকসুদপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে এই আধুনিক সেবার আওতাভুক্ত হয়েছে। অক্টোবরের ৫ তারিখ থেকে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে আসা রোগীদের ডিজিটাল হেলথ কার্ড প্রদান করা হচ্ছে। আশা করা যায় অতিদ্রুত সময়ের মধ্যে মুকসুদপুর উপজেলার সকল জনগণকে এই ডিজিটাল স্বাস্থ্য কার্ডের আওতাভুক্ত করা সম্ভব হবে। উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের এই অবদানে অভিনন্দন জানিয়েছেন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম মেম্বার মুহাম্মদ ফারুক খান, উপজেলা নির্বাহী অফিসার এস এম ইমাম রাজী টুলু, মুকসুদপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি রবিউল আলম শিকদার, সাধারণ সম্পাদক সাহিদুর রহমান টুটুল, ত্রাণ ও সমাজ কল্যাণ সম্পাদক হায়দার হোসেন প্রমুখ।