ইতিহাসে প্রথমবারের মতো ঢাকা থেকে সরাসরি ফরিদপুরে এসেছে একটি পরীক্ষামূলক ট্রেন। পূরণ হতে চলেছে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের মানুষের নতুন আরেকটি স্বপ্ন। ঘুচবে এই অঞ্চলের মানুষের অর্থনৈতিক চাকা। আগামী ১০ই অক্টোবর এই পথে রেল চলাচল উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সেই লক্ষে চ‚ড়ান্তভাবে একটি ট্রায়াল ট্রেন গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুর ১২ টা ০৭ মিনিটে ফরিদপুরের ভাঙ্গা রেল জংশনে পৌছায়।
এর আগে সকাল ১০টার সময় পরীক্ষা মূলক ট্রেনটি কমলাপুর স্টেশন থেকে ভাঙ্গার উদ্দেশে ছেড়ে যায়। ট্রেনটি মাত্র ৭ মিনিটে পার হয় পদ্মা সেতু। বিশেষ এই ট্রেনটি জাজিরা ষ্টেশন পরে ভাঙ্গার বামনকান্দা রেল ষ্টেশন এসে পৌঁছায়।
এতে প্রধান অতিথি হিসেবে ট্রায়াল ট্রেনে পদ্মা সেতু পাড়ি দিয়ে ভাঙ্গায় আসেন রেলমন্ত্রী নুরুল ইসলাম সুজন। এ সময় তার সফরসঙ্গী ছিলেন পানি সম্পদ উপমন্ত্রী একেএম এনামুল হক শামীম, আওয়ামীলীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য শাহজাহান খান, জাতীয় সংসদের চিফ হুইফ নূর-ই-আলম চৌধুরী, রেলপথ ড. হুমায়ন কবির, বাংলাদেশ রেলওয়ের মহাপরিচালক মো. কামরুল আহসান, পদ্মা সেতু রেল সংযোগ প্রকল্পের পরিচালক আফজাল হোসেন, রেলপথ মন্ত্রণালয় সংক্রান্ত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য এবং রেলওয়ের অন্যান্য ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা। পরে বেলুন উড়িয়ে ও আতশবাজী ফুটিয়ে উদযাপন করেন সকলে।
পরে সংবাদ সম্মেলন করেন রেলমন্ত্রী। সেখানে জানান, আগামী ১০ অক্টোবর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ঢাকা-ভাঙ্গা রেলপথে রেল চলাচলের উদ্বোধন করবেন। সেই লক্ষ্যেই চ‚ড়ান্তভাবে এই রুটে ট্রায়াল ট্রেনটি এসেছে।
ভবিষ্যতে ভাঙ্গা থেকে এশিয়ার বিভিন্ন দেশের সাথে রেল যোগাযোগের ব্যবস্থা হবে বলে মন্তব্য করেছেন একই সাথে তিনি বলেছেন, ভবিষ্যতে ট্রানজিশনাল রেলপথের সাথে যুক্ত হবে। তার জন্য অভ্যন্তরীণ যে অবকাঠামোগত উন্নয়ন করা হবে এবং এই রেলপথকে অন্যতম একটি কাঠামো হিসেবে গড়ে তোলা হবে।
রাজধানী ঢাকার সাথে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের মানুষের যোগাযোগের দুরুত্ব কমবে মন্তব্য করে তিনি বলেন, খুব অল্প সময়ের মধ্যে ঢাকার সঙ্গে খুলনার দুরুত্ব কমে আসবে। ঢাকার থেকে পাশ্ববর্তী দেশের কলকাতারও দুরুত্ব কমে আসবে। এর মধ্যে দিয়ে আমাদের আর্থিকভাবেও সাশ্রয়ী হবে। যাত্রী ও ব্যবসায়ীরা উপকৃত হবে।
তিনি বলেন, আগামী ১০ অক্টোবর উদ্বোধনের পর গেন্ডারীয়া, নিমতলী, শিবচর এবং ভাঙ্গার স্টেশনগুলো তৈরী হবে। ভবিষ্যতে পটুয়াখালী ও বরিশাল হয়ে পায়রা বন্দর এবং পর্যটন শহর কুয়াকাটা পর্যন্ত রেল চলবে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর পরিকল্পনা রয়েছে, রেলকে আধুনিক, সাশ্রয়ী ও যুগোপোযগী করার প্রকল্প চলমান আছে। আপনারা জানেন যে দেশ যত উন্নত সে দেশের রেলপথ তত উন্নত। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী দেশকে নিয়ে স্বপ্ন দেখেন একটি উন্নত সমৃদ্ধ আধুনিক বাংলাদেশের।
প্রেসবিফ্রিং সময় উপস্থিত ছিলেন ফরিদপুর ৪ আসনের এমপি মজিবুর রহমান চৌধুরী নিক্সন, ফরিদপুরের জেলা প্রশাসক কামরুল ইসলাম তালুকদার, ফরিদপুরের পুলিশ সুপার মোঃ শাহজাহান, ভাঙ্গা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ আজিমউদ্দিন, ভাঙ্গা থানা অফিসার ইনচার্জ জিয়ারুল ইসলাম সহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বৃন্দ।
সংবাদ সম্মেলন শেষে পদ্মা সেতুর রেলের চীফ কো-অর্ডিনেটর মেজর জেনারেল একেএম রেজাউল মাজেদ বলেন, আমাদের প্রথম চ্যালেঞ্জই ছিলো, এখানে কোনো এ্যালাইনমেন্টই ছিলো না। এই জায়গা নদী বিস্তৃত জায়গা ছিলো, পানিও ছিলো। যার জন্য আমাদের কিছুটা সময়ও লেগেছে। যে সময়ই লাগুক, আমরা নির্ধারিত সময়ের মধ্যেই শেষ করবো। আমরা স্বল্প সময়ের মধ্যে মানসম্মত একটি কাজের জন্য সফল হয়েছি।
স্থানীয় সংসদ সদস্য ও যুবলীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য মজিবুর রহমান নিক্সন চৌধুরী বলেন, দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের মানুষের স্বপ্নের এই রেলপথ উদ্বোধন হচ্ছে। এর জন্য আমাদের এলাকার মানুষ আজ খুবই আনন্দিত। আমরা আশা করি, মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর এই উন্নয়নের ধারা যেন অব্যাহত থাকে। দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের মানুষের ভাগ্যের দোয়ার যেন খুলে যায়। এই অঞ্চলের মানুষের অর্থনৈতিক মুক্তি আজ পরীক্ষামূলকভাবে চালু হয়েছে। আগামী ১০ই অক্টোবর মাননীয় প্রধানমন্ত্রী এই রেলপথ উদ্বোধন করবেন। এরপর থেকে এই পথে রেল চলবে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বলেছেন- আগামীতে এই রেলপথ এয়ারপোর্ট পর্যন্ত যাবে। আমাদের প্রবাসী বিদেশ থেকে এসে মাত্র ৫০ মিনিটে আমাদের অঞ্চলে আসতে পারবে। এই সুযোগ-সুবিধা সব ক্ষেত্রেই হবে। ঢাকায় যারা চাকরী করে তারা দিনে গিয়ে দিনেই আসতে পারবে।
পরে দুপুরে দেড়টার দিকে ঐ ট্রেনে করেই ঢাকায় ফিরে যান রেলমন্ত্রীসহ অতিথিরা।