১৭.২ বর্গ কিলোমিটার জুড়ে মুকসুদপুর পৌরসভা। এখানে ব্যপক ভাবে বাড়ছে ডেঙ্গুর প্রকোপ। নেই মশার ওষুধ ছিটানোর উদ্যোগ। পৌরসভা জুড়ে রয়েছে ময়লা-আবর্জনার ভাগাড়। মূলত এই ময়লা আবর্জনা ও ড্রেনে জমে থাকা পানির কারনেই বাড়ছে ডেঙ্গু। সচেতন মহল মনে করছেন পৌর মেয়রের অবহেলায় ময়লা-আবজনা পরিস্কার করা হচ্ছে না।
মুকসুদপুর সদর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে প্রতিদিনই ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে। বিশেষ করে সরকারি জেনারেল হাসপাতালে প্রতিদিন গড়ে ৫-৭ জন করে নতুন রোগী ভর্তি হচ্ছে। হাসপাতালের নিয়মিত রোগীর পাশাপাশি ডেঙ্গু রোগীর চিকিৎসাসেবা দিতে হিমশিম খেতে হচ্ছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে।
এ পর্যন্ত মুকসুদপুর পৌরসভায় গোপীনাথপুর গ্রামে সামিম শেখ (৩০)এবং ভাবড়াশুর ইউনিয়নে বোয়লিয়া গ্রামের রোজিনা (৩৫) মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। তারা প্রথমে মুকসুদপুর হাসপাতালে চিকিৎসা গ্রহণ করলেও উন্নত চিকিৎসার জন্য রেফার করা হয়।
ডেঙ্গুর বিস্তার রোধে প্রশাসনের কোন কার্যক্রম না থাকায় ক্ষোভ জানিয়েছে মুকসুদপুরবাসী।
সরেজমিন ঘুরে দেখা যায়, পৗরসভার বিভিন্ন এলাকায় সড়কে জমে আছে পানি। অপরিষ্কার অবস্থায় ড্রেন, বাসা-বাড়ি ও রাস্তাঘাটে ডাবের খোসা ও ফুলের টপে থাকছে পানি থাকে। যা থেকে বংশবিস্তার করছে এডিস মশা।
এলাকাবাসীরা জানান, আমরা পৌর এলাকায় বসবাস করছি। দিন দিন ডেঙ্গুর প্রকোপ বেড়েই চলছে। কিন্তু পৌরসভা থেকে ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণের কোন কার্যক্রমই চোখে পড়ছে না।
মুকসুদপুর পৌর এলাকার এক ব্যবসায়ী বলেন, প্রতিদিনই ডেঙ্গুতে আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ছে। বিভিন্ন জেলায় মানুষ মারাও যাচ্ছে। অথচ ডেঙ্গু প্রতিরোধে প্রশাসন কিংবা পৌরসভার পক্ষ থেকে দৃশ্যমান কোন কার্যক্রম দেখা যায় না। আমি মনে করি পৌর মেয়রের অবেহেলাই জমে থাকা পানি ও ময়লা-আবজনা পরিস্কার করার উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে না।
পৌরসভার গোপীনাপুরের বাসিন্দা সোহেল রানা নামের এক ভুক্তভোগী জানান, গত বছরও ডেঙ্গুর প্রাদুর্ভাবে পৌর কর্তৃপক্ষ মশা নিধনে কার্যক্রম চালিয়েছিল এবং মিডিয়ায় প্রকাশ পেয়েছিল। এবার কোন তৎপরতা না থাকায় পৌরবাসী হিসেবে আমি হতাশ।
পৌর এলাকার অন্য এক বাসিন্দা বলেন, ডেঙ্গুর আতঙ্ক থেকে আমরা প্রতিকার চাই। তাই দ্রæত প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নিতে সংশ্লিষ্ট দফতরকে অনুরোধ করছি। তা না হলে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে অনেকের প্রাণহানি ঘটবে।
মো. ইকবাল হোসেন নামে এক ব্যাক্তি ক্ষোভ জানিয়ে বলেন, ডেঙ্গু প্রতিরোধে পৌরসভার তেমন কোন কার্যক্রম চোখে পড়েনি। আমরা যারা পৌরসভায় বসবাস করছি, প্রতিটি মানুষের ভেতরে আতঙ্ক বিরাজ করছে। ডেঙ্গু প্রতিরোধে সব ড্রেন পরিস্কার করা ও পর্যাপ্ত মশার ওষুধ ছিটানো দরকার।
মুকসুদপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের ইউএইচএফপিও ডা.রায়হান ইসলাম শোভন জানান, মুকসুদপুরে ডেঙ্গুর প্রকোপ দিন দিন বেড়েই চলছে। এ পর্যন্ত মুকসুদপুরে মোট ৩শ ৬২ জন ডেঙ্গু রোগে আক্রান্ত হয়েছে। মুকসুদপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি থাকা অবস্থায় কোন রোগী মারা যায়নি। হাসপাতালে এখনো বেড পর্যাপ্ত রয়েছে। ডেঙ্গু রোগীদের প্রয়োজনীয় চিকিৎসা প্রদান করা হচ্ছে। তবে যেভাবে রোগীর সংখ্যা দিন দিন বেড়ই চলছে তাতে ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীদের চিকিৎসা দিতে হিসশিম খেতে হবে। তিনি আরও জানান, ডেঙ্গু বৃদ্ধির একমাত্র কারণ এডিস মশার বিস্তার। বর্তমান আবহাওয়া আর মুকসুদপুর শহর এলাকার পাশাপাশি গ্রাম এলাকায় জলাবদ্ধতা এডিস মশার বিস্তারের পক্ষে সহায়ক ভুমিকা পালন করছে। তাই ডেঙ্গু বাড়ছে, এবং সামনে আরো বাড়বে।
মুকসুদপুর পৌর মেয়র আশরাফুল আলম শিমুলকে ডেঙ্গু পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে কোন ব্যবস্থা আছে কিনা জানতে চাইলে, তিনি মুঠোফানে কথা বলতে চাননি, এছাড়া সংবাদ সংক্রান্ত কোন বক্তব্য ছাপাতে হলে তার লিখিত বক্তব্য ছাপার অনুরোধ জানান।