গোপালগঞ্জে এনসিপির সমাবেশে হামলা ও ককটেল নিক্ষেপ, পুলিশের ওপর হামলা গাড়ি ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ এবং বিভিন্ন স্থাপনায় হামলা ভাঙচুরের ঘটনায় অন্তর্নিহিত কারণ উদঘাটন শুরু করেছে সরকারের গঠিত ছয় সদস্যের তদন্ত কমিশন।
মঙ্গলবার ৬ সদস্য বিশিষ্ট ওই কমিশনের সভাপতি সাবেক বিচারপতি মো. আবু তারিকের নেতৃত্বে কমিশন এ অনুসন্ধান কার্যক্রম শুরু করে।
সন্ধ্যা ৭টায় গোপালগঞ্জের জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সম্মেলন কক্ষে প্রেস ব্রিফিংয়ে এ বিষয়ে নিশ্চিত করেন কমিশনের সভাপতি।
এ সময় তিনি বলেন, আমরা ঢাকা থেকে ৬ জন এসেছি। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের সঙ্গে নিয়ে স্পটগুলো সরেজমিন পরিদর্শন করেছি। আমাদের নিয়োগ দেওয়া হয়েছে এ ঘটনাকে তদন্ত করার জন্য। আমরা তদন্ত করছি।
কমিশনের সদস্য ও জননিরাপত্তা বিভাগের অতিরিক্ত সচিব খন্দকার মো. মাহাবুবুর রহমান বলেন, আমাদের কাছে সরকার কিছু এজেন্ডা দিয়ে দিয়েছে। ওই এজেন্ডা অনুযায়ী আমরা উত্তর খোঁজার চেষ্টা করছি। ভবিষ্যতে যেন এ ধরনের ঘটনা পুনরাবৃত্তি না হয়, সে ধরনের সুপারিশও সরকারের কাছে করতে হবে। তিনি বলেন, যেহেতু বিষয়টি তদন্তনাধীন; আজকে আমরা অন দ্য স্পটে অনেকের বক্তব্য নিয়েছি, আগামীকাল ও যতজনের পারি বক্তব্য নেব। এর আগে ঢাকায়ও বক্তব্য নেওয়া হয়েছে। এটি একটি গোপনীয় প্রতিবেদন হবে, যা সরকার প্রকাশ করবে। কী পাচ্ছি, কী পাইনি সেই বিষয়ে মন্তব্য করতে আমরা অপারগ।
সাংবাদিকদের উদ্দেশ্যে খন্দকার মো. মাহাবুবুর রহমান বলেন, আমরা বিভিন্ন প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক্স মিডিয়ায় অনেক তথ্য পেয়েছি। আপনাদের কাছে যদি আরও কোনো তথ্য থেকে থাকে আমাদের দিয়ে সহযোগিতা করলে আমরা যে রিপোর্টটি দাখিল করব সেটা আরও ভালো হবে। আমরা আগামীকাল গোপালগঞ্জে আছি।
এর আগে কমিশনের সদস্যরা দুপুরে গোপালগঞ্জে এসে পৌঁছান। পরে তারা বিভিন্ন স্থান পরিদর্শন করেন। এ সময় কমিশনের সদস্য সিনিয়র জেলা ও দায়রা জজ মো. সাইফুল ইসলাম, ২১ পদাতিক ব্রিগেডের কমান্ডার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল শাহীদুর রহমান ওসমানী, কেন্দ্রীয় পুলিশ হাসপাতালের পরিচালক অতিরিক্ত পুলিশ মহাপরিদর্শক সরদার নূরুল আমিন এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শান্তি ও সংঘর্ষ অধ্যয়ন বিভাগের চেয়ারম্যান সাজ্জাদ সিদ্দিকী এবং গোপালগঞ্জের জেলা প্রশাসক মুহম্মদ কামরুজ্জামান, পুলিশ সুপার মো. মিজানুর রহমানসহ আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন।
এর আগে ১৬ জুলাই জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) জুলাই পদযাত্রাকে কেন্দ্র করে সমাবেশ স্থলে হামলা, মঞ্চ ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের ঘটনায় ২৪ জুলাই দ্য কমিশন অব ইনকোয়ারি অ্যাক্ট ১৯৫৬ ক্ষমতাবলে তদন্ত কমিশন গঠন করে সরকার।
এনপিপির সমাবেশে হামলা ও ককটেল নিক্ষেপ, পুলিশের ওপর হামলা, গাড়ি ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ, জেলা কারাগারের হামলা, জেলা প্রশাসকের বাসভবনে হামালা সড়কে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি এবং রাষ্ট্রবিরোধী কার্যকলাপে জড়ানোর অভিযোগ ও গুলিতে পাঁচজন নিহতের ঘটনায় মোট ১৫টি মামলা করা হয়। সদর, কাশিয়ানী, টুঙ্গিপাড়া ও কোটালীপাড়া থানায় মামলাগুলো করা হয়। ১৫টি মামলায় কার্যক্রম নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের ১ হাজার ২৫২ জনের নাম উল্লেখ করে এবং অজ্ঞাতনামা ১৪ হাজার ৯৬০ জনকে আসামি করা হয়েছে।
গত ১৬ জুলাই থেকে গত সোমবার সন্ধ্যা পর্যন্ত জেলার বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালিয়ে অন্তত ৩৫০ জনকে গ্রেফতার করে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠিয়েছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী।