আগামীকাল ২১ মে অনুষ্ঠিত হবে ৬ষ্ঠ উপজেলা পরিষদ নির্বাচন। তফসিল ঘোষণার পর থেকে ঢিলে ঢালা ভাবে চলছে শেষ মুহূর্তেও জমেনি উপজেলা পরিষদ নির্বাচন। উপজেলা জুড়ে এমন চিত্র চোখে পড়েছে। গত নির্বাচনের তুলনায় এবারের নির্বাচন একেবারেই উত্তাপহীন বলে মনে করছেন সকল শ্রেণী ও পেশার মানুষ।
উপজেলার সর্বত্রজুড়ে চেয়ারম্যান, ভাইস চেয়ারম্যান ও মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান প্রার্থীদের পোষ্টার ব্যানারে ছেয়ে গেছে। সকাল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত বিরতিহীনভাবে চলছে প্রার্থীদের প্রচার প্রচারণা ও বিভিন্ন আকর্ষণীয় গান দিয়ে তৈরি প্রচার মাইকিং। এখানে প্রত্যেক প্রার্থী তাদের নিজস্ব নামের উপর তৈরি করেছেন প্রচার গান। ভোটারদের আকর্ষণ করতেই এই গান তৈরি হয়েছে বলে জানিয়েছে প্রার্থীরা । তবে এই নির্বাচনকে কেন্দ্র করে এখন পর্যন্ত কোন বড় ধরনের আচরণ বিধি লঙ্ঘনসহ অনিয়মের ঘটনা ঘটেনি। হামলা মামলাও হয়নি নির্বাচনকে কেন্দ্র করে। আইনশৃঙ্খলার কোন অবনতি না ঘটলেও নির্বাচনের পরে কিছু হট্রগোলের আশঙ্কা আছে বলে মনে করছেন এলাকাবাসী। এর কারণ হিসাবে জানাগেছে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দীতার ত্রিমুখী লড়াই।
মুকসুদপুর উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের রিটার্নিং অফিসার ও গোপালগঞ্জ জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মো.গোলাম কবির জানান, আগামী ২১ মে ৬ষ্ট উপজেলা পরিষদ নির্বাচন সম্পন্ন করতে সকল ধরনের প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। এ উপজেলায় মোট ভোটার ২ লাখ ৫৬ হাজার ২’শ ৮৯, পুরুষ ভোটার ১ লাখ ৩৩ হাজার ১’শ ৩১, নারী ভোটার ১ লাখ ২৪ হাজার ৯৫৮ জন। মোট ভোট কেন্দ্র ৯৬ টি, মোট ভোট কক্ষ ৫৮১ টি।
মুকসুদপুর থানার ওসি মোহাম্মদ আশরাফুল আলম জানান, এই পর্যন্ত নির্বাচন নিয়ে কোথাও কোন অঘটন ঘটেনি। অর্থাৎ নির্বাচন সংশ্লিষ্ট কোন হামলা, মামলা এমনকি অভিযোগও দায়ের হয়নি। সুতারং আইনশৃঙ্খলার কোন অবনতি ঘটেনি। আশা করা যায় নির্বাচনের আগ পর্যন্ত কোন অঘটন ঘটবে না। আশা করি একটি অবাধ সুষ্ঠ নির্বাচন উপহার পেতে যাচ্ছে মুকসুদপুর উপজেলাবাসী। তবে এই সংশ্লিষ্ট কোন অভিযোগ পেলে সাথে সাথে আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
এবারের নির্বাচনে চেয়ানম্যান পদে চার জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দি¦তা করছেন। তাদের মধ্যে তিনজন প্রার্থী পুরাতন আর একজন প্রার্থী একবারেই নতুন। তার কোন নির্বাচনের অভিজ্ঞতা না থাকলেও লোকবল গুছিয়ে ভোটের মাঠে একটা নির্বাচনী আমেজ তৈরি করার চেষ্টা করে যাচ্ছেন তিনি।
অন্যদিকে ভাইস চেয়ারম্যান পদে মোহাম্মদ রবিউল ইসলাম ‘উড়োজাহাজ’, সনজিত সরকার ‘টিউবওয়েল’, শাহরিয়ার কবির ‘চশমা’, দুলাল হোসেন ‘তালা’, মো: সুমন মুন্সী ‘মাইক’ প্রতীকে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে তানিয়া আক্তার ‘হাঁস’, নাজমা বেগম ‘কলস’ এবং রিনা বেগম ‘ফুটবল’ প্রতীকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। এসকল ভাইস চেয়ারম্যান ও মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান প্রার্থীরা দিনরাত ভোটের মাঠে পরিশ্রম করে যাচ্ছেন। ভোটারদের ভোট কেন্দ্রে আনার জন্য তারা সব রকম চেষ্টা করে যাচ্ছেন।
এবারের নির্বাচনের নতুন প্রার্থী ইন্দুহাটি হলধর উচ্চ বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি, খান্দারপাড়া ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সদস্য, ড্রিমওয়ে গ্রুপের চেয়ারম্যান আবুল কাসেম রাজ ‘দোয়াত কলম’ প্রতীক নিয়ে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। উপজেলা ঘুরে দেখাগেছে তিনি প্রচুর জনসমর্থন পাচ্ছেন। পৌরসভাসহ ১৬ ইউনিয়নে তিনি ক্যাম্পিং অফিস করেছেন। পাড়া মহল্লা চষে বেড়াচ্ছেন। ইতিমধ্যে তিনি এবারের নির্বাচনে প্রচার জনপ্রিয়তার শীর্ষে রয়েছেন এবং সব প্রার্থীর চেয়ে বেশি ভোট পাওয়ার সম্ভ^াবনা আছে ভোটারদের সাথে কথা বলে এমন তথ্য পাওয়া গেছে।
আবুল কাসেম রাজ জানান, আমি এবারই নির্বাচনে অংশ নিচ্ছি। এতো অল্প সময়ে মুকসুদপুরের আপামর জনসাধারণ আমাকে আপন করে নিয়েছে। আমি জনগণের যথেষ্ট সাড়া পাচ্ছি। আমার নিজের কোন কিছুর লোভ নেই, আমার চেয়ারম্যান হয়ে টাকা কামানোরও ইচ্ছা নেই, মহান আল্লাহ আমাকে যথেষ্ট দিয়েছেন। আমি মানুষের দোয়ায় আমি চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়ে জনগণের সেবা করে যেতে চাই। জনগণ আমাকে নির্বাচিত করে তাদের সেবা করার সুযোগ করে দিলে আমি সবসময় জনগণের পাশে থেকে তাদের কাক্সিক্ষত চাহিদা অনুযায়ী সেবা করে যাবো। আমি জনগণের যে সাড়া পাচ্ছি তাতে ইনশাআল্লাহ আমি জয়ী হবো। আমি নির্বাচিত হতে পারলে সারা দেশের মধ্যে মুকসুদপুর উপজেলাকে একটি মডেল উপজেলা হিসাবে গড়ে তুলতে সচেষ্ট হব।
মুকসুদপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের যুব ক্রীড়া সম্পাদক কামরুজ্জামান কামাল জানান, জননেত্রী মাননীয় প্রধানমন্ত্রী এবং আমাদের নেতা মুহাম্মদ ফারুক খান এমপি কাউকে দলীয় মনোনয়ন দেয়নি। তাই আমি এবার আবুল কাশেম রাজের পক্ষে তার নির্বাচন করছি। সে একজন সমাজ সেবক ও তরুন প্রজন্ম তাকে ভালোভাবে গ্রহণ করেছে সে জন্যই তার নির্বাচন করছি। ভোটের মাঠে তার শক্ত অবস্থান তৈরি হয়েছে। আশা করাযায় সে বিপুল ভোটে চেয়ারম্যান নির্বাচিত হবে।
সাবেক উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান মো. কাবির মিয়া ‘ঘোড়া’ প্রতীক নিয়ে এবারের নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। গত উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে অংশ নিয়ে আনারস প্রতীকে ৭০ হাজার ৬শ ১৭ ভোট পেয়ে উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছিলেন। চেয়ারম্যান পদে তার মেয়াদ শেষ হওয়ার আগেই তিনি পদত্যাগ করে জাতীয় নির্বাচনে গোপালগঞ্জ-১ (মুকসুদপুর-কাশিয়ানী) সংসদীয় আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছেন। বিপুল সংখ্যক ভোট পেলেও তিনি পরাজয় বরণ করে এবারও তিনি উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। তার রয়েছে নিজস্ব ভোট ব্যাংক তিনিও জনগনের মাঝে সাড়া ফেলেছে। উপজেলা ঘুরে দেখাযায় তার ভোটাররা রয়েছে নিরব কিন্তু বড় ধারনের ব্যবধান আসতে পারে বলে মনে করছেন মুকসুদপুর উপজেলার ভোটাররা।
কাবির মিয়া বলেন, আলাপকালে তিনি মুকসুদপুরবাসী আমাকে প্রাণদিয়ে ভালবাসে। তারা চায় আমি তাদের পাশে থাকি। এজন্য তাদের চাপেই আমার নির্বাচনে আসা। কাবির মিয়া আরও বলেন যত প্রার্থীই হোক না কেন নির্বাচনে তিনি শতভাগ জয়লাভের আশাবাদী। জয়লাভ করে আগের মত জনগণের সাথে মিশে থাকবেন। তাদের সবরকম সমস্যা সমাধান করবেন বলে তিনি জানান।
মুকসুদপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক এমএম মহিউদ্দিন আহম্মেদ মুক্ত ‘মটোর সাইকেল’ প্রতীক নিয়ে এবারের নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। গত উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে অংশ নিয়ে মোটরসাইকেল প্রতীকে তিনি ৪৩ হাজার ৯৭ ভোট পেয়েছিলেন। গত নির্বাচনে দলীয় প্রতীক না থাকলেও স্থানীয় সংসদ সদস্য এবং মুকসুদপুর উপজেলা আওয়ামী লীগ তাকে দলীয় সমর্থন দিয়ে তার নির্বাচনী প্রচারণা চালিয়েছিলেন। তবে এবারের নির্বাচনে দলীয় সমর্থন না থাকলেও দলের সিনিয়র নের্তৃবৃন্দ তার পক্ষে নির্বাচনের প্রচার প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছেন কিন্তু জুনিয়র পর্যায়ের নেতাকর্মীরা অন্য প্রার্থীর পক্ষে প্রচার চালাচ্ছেন। তিনি এবারের নির্বাচনে দলীয় সিনিয়র নেতাদের সর্মাথন পাওয়ায় বেশ কিছু ভোট পাওয়ার সম্ভাবনা আছে বলে মনে করছেন এলাকার সচেতন ভোটাররা।
মুক্তমুন্সি বলেন, নির্বাচনে জয়ের লক্ষ্য নিয়ে কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছি। আশা করি জয়লাভ করতে পারব। মুকসুদপুর আওয়ামী লীগের নিরঙ্কুশ ঘাটি। দলের নেতা কর্মী নিশ্চয় পূর্ণ সমর্থন ও ভোট প্রদান করবেন। বিজয়ী হলে অবশ্যই দলীয় নির্দেশনা ও নেতৃবৃন্দের পরামর্শ নিয়ে জনগণের কল্যাণে কাজ করে যাব। মটোরসাইকেল প্রতীকের এক সমর্থক জানান, মুক্তু মুন্সী আওয়ামী লীগের একজন ত্যাগী নেতা। তিনি মানুষের সুখে দু:খে পাশে থাকেন। গত নির্বাচনে দলীয় সমর্থন পেয়েছিলেন। এবার দলীয় সমর্থন না পেলেও দলেরা সিনিয়র নেতাকর্মীরা তার সাথে আছেন। আমরা তার পক্ষে দিন রাত প্রচার প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছি। নির্বাচনী মাঠ এবার আমাদের দখলে। আশা করি এবার মটোরসাইকেল প্রতীক বিপুল ভোটে বিজয়ী হবে।
বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের কৃষি বিষয়ক উপ-কমিটির সদস্য মো.কাইমুজ্জামান রানা ‘আনারস’ প্রতীক নিয়ে এবারের নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। গত নির্বাচনে তিনি দোয়াত কলম প্রতীকে পেয়েছিলেন ১ হাজার ৬শ ভোট। এবারের নির্বাচনে তিনি আটঘাট বেধেই নেমেছেন। কিন্তু প্রচার প্রচারণায় এখন পর্যন্ত জমিয়ে তুলতে পারেননি। এলাকা ঘুরে তার পক্ষে সেরকম জনসর্মথনও চোখে পড়েনি। চায়ের দোকান থেকে পাড়া মহল্লা কোথাও তাকে নিয়ে কোন আলোচনা হচ্ছেনা। তিনি এবারের নির্বাচনে ৪র্থ হতে পারে বলে মনে করছেন ভোটাররা। পুরো উপজেলা ঘুরে এমন চিত্র চোখে পড়েছে। রানা বলেন, গত নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ¦ীতা করেছি। এবারের নির্বাচনে জনগণের নিকট থেকে ভালো সাড়া পাচ্ছি। আশা করি জনগণ আমাকে তাদের মূল্যবান ভোট দিয়ে জয়যুক্ত করবেন। নির্বাচনে জয়ী হলে মুকসুদপুর উপজেলার প্রধান প্রধান সমস্যাগুলো সমাধানের চেষ্টা করবো।