মুকসুদপুরে প্রচন্ড গরমে অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছে জনজীবন। সূর্যের প্রখর তাপে ক্লান্ত জীবনযাত্রা। প্রতিদিন বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বাড়ছে দিনের তাপমাত্রা। গরমের সঙ্গে যুক্ত হয়েছে বিদ্যুৎ লোডশেডিং। পরিপূর্ণ ক্ষমতা নিয়েই প্রকৃতিতে হাজির হয়েছে ষড়ঋতুর এক নম্বরে থাকা মৌসুম গ্রীষ্ম। এই ঋতুর ক্ষমতার আগুনে ঘি ঢেলে দিয়েছে উত্তপ্ত জলবায়ু। দেশজুড়ে চলছে দাবদাহ। মুকসুদপুরে পথগুলোর কালো পিচও গলতে শুরু করেছে খরতাপে।
প্রচন্ড গরমে হাঁসফাঁস করা পথচারী সহজেই ১০ টাকায় কিনে পান করছেন এক গ্লাস লেবু পানির শরবত। পানি, বরফ, চিনি কিংবা বিট লবন মিশিয়ে তৈরি করা এই শরবত পূরণ করছে পিপাসা। গরম থেকে কিছুটা হলেও প্রশান্তি পাচ্ছেন পথচারী, শ্রমজীবী আর ছুটে চলা সাধারণ মানুষ।
সারাদেশে বইছে তাপপ্রবাহ। খুব বেশি প্রয়োজন ছাড়া দিনের বেলায় ঘর থেকে বের হচ্ছে না অনেকেই। জীবনের প্রয়োজন মেটাতে গরম উপেক্ষা করে কাজ করতে হচ্ছে নিম্ন আয়েরসহ সব খেটে খাওয়া মানুষদের।
মরার উপর খড়ার ঘায়ের মতো পুরো মুকসুদপুর উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় এরই মধ্যে দেখা দিয়েছে বিদ্যুতের লোডশেডিং।
প্রচন্ড গরম পড়ায় মুকসুদপুরে পানির চাহিদা বৃদ্ধি পেয়েছে। প্রায় প্রত্যেক সড়কের বসেছে শরবতের দোকান।
এছাড়া পুরো উপজেলায় দিনে ও রাতে অসংখ্যবার লোডশেডিংয়ে পোহাতে হচ্ছে চরম ভোগান্তি। তীব্র গরমে বিদ্যুৎ না থাকায় অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছে উপজেলাবাসী। বিদ্যুতের ত্রুটিপূর্ণ বিতরণ ব্যবস্থার কারণে নিয়মিত বিদ্যুৎ সরবরাহ করা যাচ্ছে না। গরমে শিক্ষার্থী ও রোগীদের ভোগান্তি সবচেয়ে বেশি। তীব্র তাপপ্রবাহে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ছুটি বাড়িয়ে ২৮ এপ্রিল পর্যন্ত সাধারণ ছুটি ঘোষণা করা হয়েছে। লোডশেডিংয়ের সময় ফ্রিজে থাকা মাছ-মাংস ও তরকারি নষ্ট হয়ে পড়ছে। গরমের কারণে বাড়ছে নানা ধরনের রোগবালাই।
মুকসুদপুরে তীব্র গরমের কারণে গত কয়েক দিনে ডায়রিয়াসহ পানিবাহিত রোগে আক্রান্তের হার বেড়ে গেছে। তীব্র গরমে শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত ক্লাস ও অফিস থেকে এসে ঠান্ডা-গরমে জ্বর, কাশি ও সর্দিসহ নানা রোগে আক্রান্ত হচ্ছে সব বয়সী নারী-পুরুষ।
চিকিৎসকদের মতে, গরমে অতিষ্ঠ হয়ে সড়কের উপর বসা দূষিত পানি ও বাসি খাবার গ্রহণের কারণে মানুষের বেশি ডায়রিয়া হচ্ছে। আর গরম বেড়ে যাওয়ায় তৃষ্ণার্ত পথিক ও শিশুরা রাস্তার পাশে তৈরি করা শরবত, আইসক্রীম ইত্যাদি খেয়ে অসুস্থ হয়ে পড়ছে। এর পাশাপাশি হোটেল-রেস্তোরায় পচা-বাসি খাবার খেয়েও অনেকে ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হচ্ছেন।
আবহাওয়া অফিস মতে, মৃদু তাপপ্রবাহ বইছে। একদিকে তাপপ্রবাহ, অপরদিকে বৃষ্টিহীন দিন-রাত। গতকাল বুধবার মুকসুদপুরে ৩৮.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে। এরকম আরো ৩/৪ দিন থাকার সম্ভবনা রয়েছে বলে জানান আবহাওয়া অফিস কর্মকর্তা।
সচেতন মহল বলেন, প্রচন্ড গরমে অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছে জনজীবন। গরমে পানি খাওয়া আমাদের শরীরের জন্য খুবই উপকারী। তবে অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে বা খোলা পরিবেশে যে শরবত বিক্রি হচ্ছে সেগুলো স্বাস্থ্যসম্মত নয়। এই অস্বাস্থ্যকর পানি ও খোলা শরবত পান করলে আমাদের শরীরে নানা রোগ হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। বিশেষ করে ডায়রিয়া ও জন্ডিসসহ বিভিন্ন রোগ। তাই তীব্র গরমে এ ধরনের পানীয় এড়িয়ে চলাই ভালো।