গোপালগঞ্জ জেলার মুকসুদপুরে দলিল লেখক আমিনুল ইসলামের কৌশলে ভুয়া আইডিতে জমি দলিল সম্পন্ন হয়েছে। আদালতে মামলা ভূক্তভোগী।
যানাযায়, দাতার ভুয়া জাতীয় পরিচয় পত্র (ন্যাশনাল আইডি) দিয়ে জালিয়াতী করে জমির দলিল সম্পাদন হয়েছে। সম্প্রতি জালিয়াতির ঘটনা প্রকাশ হওয়ায় ভূক্তভোগী উত্তরাধিকার রাধেশ্যাম কর্মকার (৫০) দলিলের গ্রহীতা, দলিল লেখক স্বাক্ষী-শনাক্তকারীদের আসামী করে আদালতে মামলা দায়ের করেছেন।
মামলার আর্জি ও বাদীর বক্তব্যে জানা গেছে মামলার বাদী প্রভাকরদী গ্রামের রাধেশ্যাম কর্মকার। তারা চার ভাই; অন্য তিন ভাই হলেন দীলিপ কর্মকার, পল্টু কর্মকার ও সান্ত কর্মকার। দীলিপ কর্মকার ও পল্টু কর্মকার ১৯৮২ সালে দেশ ত্যাগ করে ভারতে যান এবং সেখানেই অবস্থান করেন।
সান্ত কর্মকার ১৮৮৯ সালে ভারতে যান এবং অবিবাহিত অবস্থায় ৮ বৎসর পূর্বে (অর্থাৎ ২০১৬) মারা যান। বাদীর পিতা ধীরেন্দ্র নাথ কর্মকার ২০১৪ সালে ২০৩২ নং দলিলে ৪১.৫০ শতাংশ জমি বাদী ও বাদীর মায়ের নামে দলিল সম্পাদন করেন। ২০১৪ সালে বাদীর পিতা পরলোকগমন করলে তার ৩ ভাই দীলিপ কর্মকার, পল্টু কর্মকার ও সান্ত কর্মকার বাংলাদেশে আসেন এবং পুনরায় ভারতে চলে যান। বাদীর দাবি ভারতে অবস্থনরত তার ভাইদের উপস্থিতি দেখিয়ে আসামী দলিলের গ্রহীতা পলাশ কর্মকার (৪৪), প্রহলাদ কর্মকার (৪৮), দলিল লেখক আমিনুল ইসলাম (সনদ ৭/২০১১) ও স্বাক্ষী-শনাক্তকারী যোগসাজশে জাল জালিয়াতী করে দলিল নং ১৩৭৩ তাং ১৮.৩.২০১৫ (দানপত্র-জমি ৭.৫শতক মূল্য ৬লাখ ৭২ হাজার টাকা), দলিল নং ১৩৭৪ তাং ১৮.৩.২০১৫ (নাদাবিÑজমি ১৫ শতক মূল্য ১২ লাখ ২৭ হাজার টাকা) এবং দলিল নং ১৩৯৩ তাং ১৯.৩.২০১৫ (কবলাÑ জমি ৫৮.৭৭ শতক মূল্য ৫৩ লাখ টাকা) তারিখে ৩টি দলিল সম্পাদন করে। ৩টি দলিলের মোট জমি ৮১.২৭ শতক মূল্য ৭১ লাখ ৯৯ হাজার টাকা।
৩টি দলিলের দাতা দীলিপ কর্মকার (আইডি নং- ৩৫২৫৮০৫৯৫৩৫৫৯ জন্ম তাং ২.১.৬০), পল্টু কর্মকার (আইডি নং-৩৫২৫৮০৫৯৫৩৫৮০ জন্ম তাং ৩.২.৬৫), সান্ত কর্মকার (আইডি নং- ৩৫২৫৮০৫৯৫৩৫৮৫ জন্ম তাং ৫.৫.৬৮)। সকলের পিতা ধীরেন্দ্র নাথ কর্মকার, নিবাস গ্রামÑ প্রভাকরদী। গ্রহীতা পলাশ কর্মকার (৪৪), প্রহলাদ কর্মকার (৪৮) পিতা দুলাল নাথ কর্মকার; স্থায়ী নিবাস গ্রাম- প্রভাকরদী, বর্তমান-টেংলাখোলা গ্রামে। দলিল লেখক আমিনুল ইসলাম (সনদ ০৭/২০১১)। দলিলের স্বাক্ষী শনাক্তকারী মো.আবু বক্কার শেখ ও মো.বাবুল শেখ উভয়ের পিতা আব্দুল লতিফ শেখ সাং পশ্চিম কদমপুর। এরা দলিল লেখকের পিতা এবং চাচা।
দাতাদের জাতীয় পরিচয় পত্র (আইডি) যাচাই করলে দেখা যায় দীলিপ কর্মকারের বর্ণিত আইডিতে প্রকৃত ব্যক্তি ইফাত জান মিয়া জন্ম তাং ১৩.১১.১৯৮৫। পল্টু কর্মকারের বর্ণিত আইডিতে প্রকৃত ব্যক্তি হালিমা বেগম জন্ম তাং ৩.৫.১৯৮১। এবং সান্ত কর্মকারের বর্ণিত আইডিতে প্রকৃত ব্যক্তি দুলাল নাথ কর্মকার জন্ম তাং ১.৫.১৯৫২ ( দলিলের গ্রহীতাদের পিতা)। দলিলের গ্রহীতা পলাশ কর্মকার ও প্রহলাদ কর্মকার জানান জমির দাতাগণ মৃত ধীরেন্দ্র নাথ কর্মকারের উত্তরাধিকারে স্বত্ত্ববান হয়ে দলিল সম্পাদনের তারিখে উপস্থিত থেকে দলিল সম্পাদন ও রেজিস্ট্রি করে দেন। দলিলে দাতাদের দাখিলকৃত জাতীয় পরিচয় পত্র (আইডি) ভুয়া কিনা আমাদের জানা ছিল না। তারা আরো জানান দাতাগণ তাদের পৈত্রিক সম্পত্তি প্রায় একই সময়ে একাধিক ব্যক্তির কাছে বিক্রয় করে জমির দলিল সম্পাদন করেছেন বলে আমরা জেনেছি।
দলিল লেখক আমিনুল ইসলাম জানান, দাতা গ্রহিতার পর্চা, দাখিলা এবং আইডিকার্ড ঠিক আছে কিনা এটা দেখে আমরা দলিল করে থাকি। আর এই দলিলে আমার বাবা ও চাচা স্বাক্ষী ও শনাক্ত দেয়ার কারন হলো জমির দাতা ও গ্রহীতাদের সাথে আমাদের পারিবারিক সম্পর্ক রয়েছে।