বয়সে সকলেই ষাটোর্ধ্ব। উদ্দেশ্যে ছিল বাবার বাড়িতে সকল ভাই-বোন একত্র হয়ে ইফতার করবেন। সেই লক্ষ্যে সকালে একটি মাইক্রোবাসে ঢাকা থেকে গ্রামের বাড়ি মাদারীপুরের ডাসরা উপজেলার গোপালপুরে রওয়ানা দেন তারা। সঙ্গে যোগ দেন তাদের একজন ভাবি। কিন্তু ইফতার আর করা হলোনা তাদের। বাড়ির নিকটে এসে মর্মান্তিকভাবে বিদায় নিতে হলো তাদের। তাদের সাথে মর্মান্তি বিদায়ে যাত্রী হোন মাইক্রোবাসটির চালক।
গতকাল বুধবার বেলা ১১টার দিকে ঢাকা-বরিশাল মহাসড়কের গোপালগঞ্জের মুকসুদপুর উপজেলার ছাগলছিড়া এলাকায় বাস চাপায় দুমড়ে-মুচড়ে যায় তাদের বহন করা মাইক্রোবাসটি। মুহুর্তেই প্রাণ হারান তিন বোন, ভাবি ও মাইক্রোবাস চালক। এ সময় গুরুত্বর আহত হোন আরও তিনজন। তাদের মধ্যে রয়েছে তিনবোনের দুই ভাই ও আরেক ভাবি।
নিহতরা হলেন, তিন বোন কাজী সালমা (৬২), কাজী আসমা (৫৮) ও কাজী নাছিমা (৭০) ও ভাবি ভাবি কমল বেগম (৭৮)। নিহত মাইক্রোবাসের চালক রাজবাড়ী জেলার গোয়ালন্দ উপজেলার আতাউর মোল্যার ছেলে আলমগীর হোসেন মোল্লা। গুরুতর আহত কমল বেগমের স্বামী কাজী হুমায়ূন কবির, বোন নাজমা বেগম ও ভাই তাছলিমকে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।
পুলিশ জানায়, গ্লোবাল পরিবহনের একটি বাস যাত্রী নিয়ে বরিশাল থেকে ঢাকা আসছিল। পথে ঢাকা-বরিশাল মহাসড়কে ছাগলছিড়া এলাকায় বিপরীতমুখী একটি মাইক্রোবাসের সঙ্গে ওই বাসের মুখোমুখি সংঘর্ষ হয়। এতে ঘটনাস্থলেই তিন মাইক্রোবাস যাত্রী মারা যান। পরে আরও দুজন মারা যান।
নিহতদের মরদেহ উদ্ধার করে ভাঙ্গা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে আসে হাইওয়ে থানা পুলিশ। মরদেহ এখনও ভাঙ্গা হাইওয়ে থানা পুলিশ কার্যালয়ে রয়েছে। নিহতদের স্বজনরা থানায় এসেছেন। মরদেহ হস্তান্তরের প্রক্রিয়া চলছে।
নিহত কমল বেগমের দেবরের মেয়ে কাজী নাছরিন জানান, সবাই ঢাকাতেই থাকেন। গ্রামের বাড়িতে ইফতার মাহফিলের আয়োজন করা হয়েছিল। সেই ইফতারে যোগ দিতেই ঢাকা থেকে সবাই গ্রামের বাড়ি গোপালপুরের উদ্দেশে যাচ্ছিলেন। চাচা-চাচি ও চার ফুফুসহ পরিবারের সদস্যরা গাড়িতে ছিলেন। দুর্ঘটনায় ঘটনাস্থলেই চাচি ও তিন ফুফু মারা যান।
ভাঙ্গা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. তরুণ কুমার পাল জানান, মৃত অবস্থায় ৪ জন নারী ও একজন পুরুষের মরদেহ হাসপাতালে আনা হয়। হাসপাতাল থেকে মরদেহ থানায় নেয়া হয়েছে। ভাঙ্গা হাইওয়ে থানার উপপরিদর্শক (এসআই) মো. আবু নোমান জানান, দুর্ঘটনায় মাইক্রোবাসের চার যাত্রী ও চালক মারা গেছেন। নিহতদের মরদেহ থানায় রাখা হয়েছে।