ফরিদপুরের মধুখালী উপজেলার রায়পুর ইউনিয়নের ছকরিকান্দী গ্রামে রহস্যজনকভাবে এক গৃহবধূর মৃত্যু হয়েছে। সোমবার (১৮ মার্চ) দিবাগত রাতে এ ঘটনা ঘটে।
প্রতিবেশী নাসির উদ্দিন শেখ জানান, রাত আনুমানিক তিনটার দিকে মোহাম্মদ ইয়াসিন ব্যাপারী তাকে ঘুম থেকে ডেকে তুলে জানান যে, তার স্ত্রী ঘরের ভেতর গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করেছেন। পরে নাসির উদ্দিন ইয়াসিনের সঙ্গে তার ঘরে গিয়ে দেখেন, খাটের পাশে একটি ওড়না ঝুলছে এবং রত্না সুলতানা (২০) খাটের ওপর পড়ে আছেন।
এ ব্যাপারে পাশের ঘরের চাচি ইরানের স্ত্রী মোছাঃ ইতি খাতুন জানান, রাত আনুমানিক তিনটা বা সাড়ে তিনটার দিকে ইয়াসিন আমাকে ডেকে তোলে বলেন আমি বাড়িতে আসছি রত্না ঘর খুলছে না অনেক ডাকাডাকি করছি দরজা ধাক্কাচ্ছি কিন্তু দরজা খুলে না তখন আমি তাকে বলি জানালা দিয়ে ডাক দাও জানালা ধাক্কা দাও বললে তখন ইয়াসিন ঘরের দিকে যায় পিছন পিছন আমি ও আসি তখন ইয়াসিন জানালা টান দিলে জানালার একটি পাল্লা খুলে যায় তখন জানালা দিয়ে দেখেন রত্না গলায় ফাঁস নিয়েছেন। তখন ইয়াসিন দৌড়াদৌড়ি করে গিয়ে পাশেই ঘরের বেড়ার টিন ভেঙ্গে ঘরের দরজা খোলে দ্রুত বারান্দায় রুমে গিয়ে রত্নাকে গলার ফাঁস কেটে দেয়। তখন আমরা ঘরে ঢুকে দেখি রত্না মারা গেছেন ।
ববিতা বেগম (৪০ ) স্বামী মৃত কালাম বেপারী চার বছর আগে মারা গেছেন স্বামী কালাম ব্যাপারী। স্বামী মারা যাওয়ার পর বর্তমান তিনি সালথার ইসুবদিয়া গ্রামের বুঝেই মোল্লার সাথে দ্বিতীয় বিবাহে আবদ্ধ হন সেখানেই তিনি বসবাস করেন তিনি জানান খবর পেয়ে আজ সকালে বাড়িতে আসি বাড়িতে এসে দেখেন তার ছেলে ইয়াসিন এর স্ত্রী রত্না খাতুন গলায় ফাঁস দিয়ে মারা গেছেন। আমার দুটি ছেলে ইয়াসিন বড় তিনি পেশায় একজন মোটর গাড়ির ড্রাইভার। ছোট ছেলে উজ্জ্বল তিনিও পেশায় একজন ড্রাইভার তিনি অধিকাংশ সময় বিভিন্ন জায়গায় থাকেন চার পাঁচ মাস পর পর বাড়িতে আসেন একদিন বা দুই দিন থেকে আবার চলে যান। আমি যেটুকু জানি সংসারে ভালই চলছিল কিন্তু রত্না ছিল একটু উশৃংখল ধরনের মানুষ কারো কথাই শুনতো না নিজের খেয়ালখুশি মতো চলাফেরা করতো।
খবর পেয়ে স্থানীয়রা সকালে ঘটনাস্থলে জড়ো হন এবং মধুখালী থানা পুলিশকে অবহিত করেন। পরে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে মরদেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠায়।
নিহত রত্না সুলতানা উপজেলার ব্রাহ্মণকান্দা গ্রামের মো. মাজেদ শেখের মেয়ে। তার স্বামী মোহাম্মদ ইয়াসিন শেখ (২৫) ছকরিকান্দী গ্রামের মৃত কামাল বেপারীর ছেলে।
এ ঘটনায় নিহতের বাবা মধুখালী থানায় একটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন।
মধুখালী থানার সাব-ইন্সপেক্টর মো. মোক্তার হোসেন জানান, “আমরা মরদেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য পাঠিয়েছি। তদন্তের পর প্রয়োজনীয় আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
নিহতের মা জরিনা বেগম অভিযোগ করে বলেন, “আমার জামাই ইয়াসিন দীর্ঘদিন ধরে অন্য এক মেয়ের সঙ্গে সম্পর্কে জড়িত ছিল। এ নিয়ে স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে প্রায়ই ঝগড়া হতো। আমি বিশ্বাস করি, এই ঘটনার জের ধরেই আমার মেয়েকে হত্যা করা হয়েছে।”
পুলিশ বিষয়টি তদন্ত করছে এবং ময়নাতদন্তের রিপোর্ট পাওয়ার পর মৃত্যুর প্রকৃত কারণ জানা যাবে।