গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়া উপজেলার শৈলদাহ নদীর ওপর সেতুর মূল কাজ শেষ হয়েছে ১২ বছর আগে। কিন্তু সংযোগ সড়ক নির্মাণ না করায় একদিনের জন্যও সেতুটির ওপর দিয়ে কোনো যানবাহন চলতে পারেনি। বাধ্য হয়ে স্থানীয়রা সেতুটির একপাশে প্রায় ৩০ ফুট উঁচু বাশের মই লাগিয়েছেন। জীবনের ঝুঁকি নিয়ে এ খাড়া মই বেয়ে লোকজনকে সকাল থেকে রাত পর্যন্ত নদী পারাপার হতে হচ্ছে। এতে ভোগান্তিতে পড়েছে স্কুল পড়ুয়া ছাত্র-ছাত্রীসহ আশে পাশের বাসিন্দারা। অচিরেই এর সমাধান হবে বলছেন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা।
স্থানীয়দের অভিযোগ, নির্ধারিত স্থানের পরিবর্তে অপরিকল্পিতভাবে ধানক্ষেতের পাশে সেতুটি নির্মাণ করা হয়। সেতুর সংযোগ সড়কের জন্য জমি অধিগ্রহণ না করায় নির্মাণের ১২ বছরেও সেতুটি চালু করা যায়নি। যদিও বছরখানেক আগে জমি অধিগ্রহণ করে দরপত্রের মাধ্যমে সংযোগ সড়ক নির্মাণকাজ শুরু হয়েছে। তবু প্রায় সাড়ে চার কোটি টাকা খরচের পরও কবে এ সেতুর সুফল পাওয়া যাবে সেই প্রশ্ন এলাকাবাসীর। সেতুটির একপাশে রয়েছে ডুমুরিয়া উচ্চবিদ্যালয়, ডুমুরিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, ডুমুরিয়া ইউনিয়ন পরিষদ, ডুমুরিয়া বাজার ও ডুমুরিয়া কমিউনিটি ক্লিনিক। আর অন্যপাশে ডুমুরিয়া উত্তর পাড়া হয়ে কোটালীপাড়া উপজেলা সড়ক। নদীর ওপর নির্মিত সেতুটির উচ্চতা প্রায় ৩০ ফুট। সেতুর দুই পাশে সংযোগ সড়ক নেই। তাই খাড়া মই বেয়ে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে সেতুতে ওঠা-নামা করে নদী পারাপার হতে হয় এলাকার শিশু শিক্ষার্থী থেকে শুরু করে বৃদ্ধ পর্যন্ত নানা বয়সী নারী-পুরুষকে।
এলজিইডি সূত্রে জানা যায়, টুঙ্গিপাড়া উপজেলার ডুমুরিয়া এলাকায় শৈলদাহ নদীর ওপর নির্মিত হয়েছে এ সেতু। চার কোটি ৩১ লাখ ৭৫ হাজার টাকা ব্যয়ে মূল সেতুর কাজ শেষ হয়েছে ২০১২ সালের জুন মাসে। জমি অধিগ্রহণ শেষে ২০২২ সালের ৬ নভেম্বর ১৭ কোটি ৯৩ লাখ টাকা বাজেটে সেতুর সংযোগ নির্মাণকাজ শুরু হয়। চলতি বছরের জুনের মধ্যে কাজটি শেষ করার কথা ছিল। কিন্তু ধীরগতিতে কাজ চলার কারণে মেয়াদ বাড়িয়ে আগামী বছরের পর্যন্ত করা হয়েছে। তবে দ্বিতীয় মেয়াদেও কাজ শেষ হবে কিনা তা সন্দিহান এলাকাবাসী। এলাকার ব্যবসায়ী রিপন তালুকদার বলেন, সেতুটি চালু হলে শুধু চলাফেরায় নয়, স্থানীয় কৃষিপণ্য বিপণন, ব্যবসা-বাণিজ্যসহ নানাভাবে সমৃদ্ধ হতে পারবেন তারা। মূল সেতুর নির্মাণকাজ শেষে হয়েছে ১২ বছর আগে। অথচ সংযোগ সড়ক নির্মাণ না করেই সেতুটি অব্যবহৃত অবস্থায় ফেলে রেখে সংশ্লিষ্টরা চরম দায়িত্বহীনতার পরিচয় দিয়েছেন। স্থানীয়দের অন্তহীন দুর্ভোগ তারা দেখেও না দেখার ভান করেছেন। দীর্ঘ এক যুগ পর এখন শুরু হয়েছে অ্যাপ্রোচ বা সংযোগ সড়ক নির্মাণের কাজ। এটির নির্মাণকাজ চলছে অত্যন্ত ধীরগতিতে। ফলে নির্মাণকাজে দীর্ঘসূত্রতা নিয়ে এলাকাবাসীর রয়েছে ক্ষোভ আর হতাশা। আবার নির্মাণকাজে ব্যবহৃত রডসহ অন্যান্য সামগ্রীর মান নিয়েও প্রশ্ন রয়েছে অনেকের। ডুমুরিয়া ইউনিয়ন পরিষদের মেম্বার খোকন তালুকদার বলেন, ১২ বছর আগে সেতুর মূল অংশ নির্মাণ হলেও এখনো অ্যাপ্রোচ বা সংযোগ সড়ক নির্মাণের কাজ শেষ হয়নি। অ্যাপ্রোচ নির্মাণে লোহার পাইপ ও স্টিল সাটারিংয়ের পরিবর্তে গাছের বল্লি ও কাঠ দিয়ে সাটারিং করে ভায়াডাক্টের কংক্রিট ঢালাই দেয়া হচ্ছে।
এভাবেই দীর্ঘদিন ধরে তারা অনিয়ম আর ধীরগতিতে কাজ করছেন। সেতুর ওপর দিয়ে কোনো ধরনের যানবাহন চলাচল করতে না পারায় নদীর দু’পাড়ের লোকজন সীমাহীন দুর্ভোগের শিকার হচ্ছে। পণ্য পরিবহনে এখনো অতিরিক্তি পাঁচ থেকে সাত কিলোমিটার পথ ঘুরে চলাচল করতে হচ্ছে। সেতুটির সংযোগ সড়ক নির্মাণে দায়িত্বপ্রাপ্ত ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান জান্নাত কনস্ট্রাকশনের হাবিবুর রহমান বলেন, সেতুটির সংযোগ নির্মাণে সব পিলার বসানো হয়েছে। এখন ছাউনিসহ অন্যান্য কাজ আগামী জুনের মধ্যে শেষ করতে পারব বলে আশা করছি। গোপালগঞ্জ এলজিইডির নির্বাহী প্রকৌশলী মো: এহসানুল হক বলেন, মানসম্মতভাবে দ্রুত সংযোগ সড়ক নির্মাণকাজ শেষ করে আগামী জুনের মধ্যে সেতু জনসাধারণের জন্য খুলে দেয়া সম্ভব হবে।