অধিকাংশ ক্ষেত্রে দেখা যায় মা-বাবা ছেলেমেয়েদের পড়াশোনায় ভালো হলে বলেন, আমাদের সন্তান বড় হলে ডাক্তার হবে। কিন্তু স্বপ্নপূরণের এই পথ যে বড্ড সুদীর্ঘ। সফলতার সঙ্গে মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিকে উত্তীর্ণের পর মেডিকেল কলেজে পা রাখতে গিয়ে একজন শিক্ষার্থীকে নামতে হয় ভর্তিযুদ্ধের তীব্র লড়াইয়ে। সেই লড়াইয়ে সদ্য অনুষ্ঠিত ২০২৪-২৫ মেডিকেল ভর্তিযুদ্ধে বিজয়ী হয়েছে হতদরিদ্র এক কাঠ মিস্ত্রির মেয়ে প্রান্তি বিশ্বাস।
ফরিদপুর সদর উপজেলার কৃষ্ণনগর ইউনিয়নের হাট গোবিন্দপুর এলাকার বাসিন্দা অতি দরিদ্র কাঠ মিস্ত্রি রমেন বিশ্বাস এর মেয়ে প্রান্তি বিশ্বাস মেডিকেল কলেজের ভর্তি পরীক্ষায় বিজয়ী হওয়ার সংবাদ শুনে তার বাড়ীতে আনন্দের অনুভূতি বইছে। ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ ভর্তি হওয়ার সুযোগ পেয়ে যতটা খুশি হওয়ার কথা এই কাঠ মিস্ত্রির পরিবারটি ততটা খুশি হতে পারছে না। তাদের পিছে তাড়া করে ফিরছে মেডিকেল কলেজে পড়াশোনার খরচ কিভাবে পোশাবে সেই আতঙ্ক।
খোঁজ নিয়ে প্রান্তির বাডীতে গিয়ে জানা যায়, প্রান্তি বিশ্বাসের বাবা রমেন বিশ্বাস পেশায় তিনি একজন হতদরিদ্র কাঠ মিস্ত্রি ও তার মা চঞ্চলা বিশ্বাস মুড়ি ভেজে বাজারের দোকানে দোকানে বিক্রি করেন। এই সৎসামান্ন আয়ে কোন ভাবে চলছে পরিবারটির দিন। কানাইপুর-খলিলপুর গ্রামিণ সড়কের হাট গোবিন্দপুর বাজার এলাকার উত্তর পাশে প্রাপ্তিদের বাড়ীটি অবস্থিত দুই শতাংশ জমির উপর অবস্থিত। প্রান্তি বিশ্বাস দুই ভাই-বোনের মধ্যে ছোট। তার ভাই রাহুল বিশ্বাসি একটি বেসরকারি কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র থেকে ডিপ্লোমা পাস করে এখন কর্মহীন বেকার অবস্থায় রয়েছেন।
প্রান্তি বিশ্বাস ২০২২ সালে কানাইপুর বেগম রোকেয়া কিশলয় বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এস.এস.সি পরীক্ষায় জিপিএ-৫ এবং ২০২৪ সালে ফরিদপুর সরকারি সারদা সুন্দরী এইচ.এস.সি পরীক্ষায় জিপিএ-৫ পেয়ে উত্তীর্ণ হয়েছে।
বিজয়ী প্রান্তি বিশ্বাস জানায়, প্রথমে সৃষ্টিকর্তাকে স্মরণ করি, যার করুণায় আজ আমি মেডিকেল কলেজের শিক্ষার্থী হতে পেরেছি। হাজারো স্বপ্নের মধ্যে কোনো একটা স্বপ্নকে স্থির করা যেমন কঠিন, তার চেয়ে কঠিন সেই স্বপ্নটাকে বাস্তবে রূপ দেওয়া। তার পিছনে এই সফলতার জন্য বিশেষভাবে কৃতজ্ঞতা জানাতে চাই আমার পিতা-মাতাকে। এছাড়াও শিক্ষকদের ভেতর আমার তৎকালীন কানাইপুর বেগম রোকেয়া কিশলয় বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক চঞ্চল দত্ত স্যারের অনুপ্রেরণা। আমাকে সব সময় পথ দেখিয়েছে তিনি। ছোট থেকেই আমার ইচ্ছা ছিল আমি মেডিকেলে পড়াশোনা করব এবং আমার স্যার চঞ্চল দত্তকে ইচ্ছার কথা প্রকাশ করি। তিনি, অক্লান্ত পরিশ্রম দিয়ে আমার হতাশা কাটিয়ে তার দিকনির্দেশনা দেওয়ার কারণেই আমি এতদূর আসতে পেরেছি। আজকের এই অর্জন আমার স্যারের জন্য। চঞ্চল দত্ত স্যারের অনুপ্রেরণায় আজ আমি এই সফলতায় পৌঁছাতে পেরেছি। তিনি জানায়, আমি দেশের সকল মানুষের কাছে দোয়া এবং আশীর্বাদ প্রার্থী। যাতে আমার ডাক্তার হওয়ার পথে সবাই যেন সবসময় আমাকে আশীর্বাদ করেন। যাতে আমার বিপদমুক্তি হয়। যাতে আমি একজন ভালো ডাক্তার হিসেবে এই দেশটাকে সুন্দরভাবে গড়ার কাজে অবদান রাখতে পারি।
প্রান্তির মা চঞ্চলা বিশ্বাস আনন্দিত কান্নার শব্দে অনুভূতি প্রকাশ করে বলেন, আমার মেয়ে অনেক কষ্ট করে বাড়ীতে পড়াশুনা করে পরীক্ষা দিয়েছে। মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষায় বিজয়ী হওয়ায় আমি খুবই আনন্দিত। বিভিন্ন শ্রেণি পেশার মানুষ আমার মেয়েকে শুভেচ্ছা জানাতে আসছেন। উল্লেখ্য, গত (১৭ জানুয়ারি) শুক্রবার সরকারি-বেসরকারি মেডিকেল কলেজের ২০২৪-২৫ শিক্ষাবর্ষের এম.বিবি.এস ভর্তি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। পরীক্ষায় ৬০ হাজার ৯৫ জন উত্তীর্ণ হয়েছে।+