চাঁদপুরে এমভি আল-বাখেরা নামের একটি জাহাজে দূবৃত্তদের হামলায় হতাহত আটজনের মধ্যে তিনজনের বাড়ি ফরিদপুরে। এরা হলেন, গোলাম কিবরিয়া (৬৫), সবুজ (২৭) ও আহত জুয়েল রানা (৩৫)। নিহত কিবরিয়া জাহাজটির মাস্টার ও সবুজ লস্কর হিসেবে কমর্রত ছিলেন যারা সম্পর্কে আপন মামা ভাগ্নে। আহত জুয়েল চার বছর ধরে জাহাজে সুকানির কাজ করছিলেন। নিহত দুই জনের বাড়ি ফরিদপুর সদরের গেরদা ইাউনিয়নের জোয়ারের মোড় এলাকায় এবং আহত জুয়েলের গ্রামের বাড়ি ফরিদপুর সদরের জামতলা এলাকায়।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, নিহত কিবরিয়া এবং সবুজের বাড়িতে চলছে শোকের মাতম। কিবরিয়ার স্ত্রী রোজি বেগম বারবার মূর্ছা খেয়ে পড়ছেন। মাঝে মাঝে বিলাপ করছেন স্বামীর নানান স্মৃতি মনে করে। আর একদিন পরেই চাকরী জীবন শেষ করে বাড়ি আসার কথার ছিল তার। সামনে ছিল মেয়ের বিয়ে। ঠিকই ফিরে এসেছেন বাড়িতে, তবে লাশ হয়ে।
নিহত কিবরিয়ার বাড়িতে দেখা হয় আবুল কাশেম নামে একই কম্পানির অন্য এক জাহাজ চালকের (মাষ্টার) সঙ্গে। তিনি বলেন“এটি কোন ডাকাতির ঘটনা নয় এটি একটি পরিকল্পিত হত্যা কান্ড যদি ডাকাতির ঘটনায় হত তাহলে জাহাজের মূল্যবান সামগ্রী বা টাকা পয়সা, মোবাইল ফোন কোন কিছুই না নিয়ে সুধু মাত্র মাথায় আঘাত করে ও জবাই করে মৃত্যু নিশ্চিত করে দূর্বৃত্তরা চলে গেল কেন?”
প্রতিবেশিরা বলেন, “কিবরিয়া খুবই ভাল মানুষ ছিলেন তার সাথে কারোর কোন শত্রুতা ছিল না”
নিহত সবুজের বাড়ি গিয়ে একই চিত্র দেখতে পাওয়া যায়। সবুজের মা বিলাপ করতে করতে বলছিলেন, “ আমার সবুজ আজ বাড়িতে আসবে, আমার জন্য টাকা নিয়ে আসবে, বাবা তুই কই?”
সবুজের আপন বড় ভাই মিজানুর রহমান ফারুক (৪২) বলেন, “এটি একটি পরিকল্পিত হত্যাকান্ড, একটি অরাজগতা সৃষ্টি করার জন্য এ হত্যাকান্ড ঘটনো হয়েছে। আমি নিজে গিয়েছিলাম ঘটনাস্থলে। আমি নিজে আমার মামা ও ভাইয়ের লাশ সনাক্ত করেছি। তখন আমার কাছে কোন ভাবেই ডাকাতি মনে হয়নি। জাহাজে যে আটজন লোক ছিল প্রত্যেকের মাথায় আঘাত করে থেতলে দেওয়া হয়েছে। আমি এ হত্যাকান্ডের উপযুক্ত বিচার চাই”।
সবুজের অন্য এক আত্মীয় কাবিদুল বলেন, “আমার মনে হয় সুপরিকল্পিতভাবে অন্য কোন গোষ্ঠি এ হত্যাকান্ডের সাথে জড়িত”। তিনি আরো বলেন, “কয়েকদিন আগে সাদ পন্থিরা এজতেমায় যে হত্যাকান্ড ঘটালো এবং চট্রগ্রামে আদালতে ইসকন কর্তৃক আইনজীবি হত্যাকান্ডের যে ঘটনা এগুলো সব একই সূত্রে গাথা”। তিনি আরো বলেন, “এ ঘটনা গভীরভাবে তদন্ত করে কোন কুচক্রী মহল এর সঙ্গে জড়িত কিনা তা বের করার জন্য সরকারের কাছে অনুরোধ করছি”।