ফরিদপুরে কিশোর গ্যাংয়ের অত্যাচারে অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছে এলাকাবাসী। মাদক ব্যবসা ও সেবনে দিন দিন বেড়েই চলছে তাদের নানা অপরাধ । বাধা দিলে ৩০/৪০ জন একত্রে হয়ে হামলা চালায় ।
তারই প্রতিবাদে আজ সোমবার ২ জুন সকাল ১১ টায় ফরিদপুর সদর উপজেলার কৃষ্ণনগর ইউনিয়নের রহিমপুর গ্রামে স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ আজমল মিয়ার বাড়িতে বৈঠক করেন , বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন স্থানীয় বিশিষ্ট ব্যবসায়ী মোঃ জাহাঙ্গীর ফকির , পরিচালনা করেন শেখ মোঃ শাহজাহান, এখানে আলোচনার মধ্যে কিশোর গ্যাংদের মাদক ক্রয় বিক্রয় ও প্রতিটি পরিবারের সদস্যদের নির্দেশ দেওয়া হয় যার যার পরিবার সে সে দেখে রাখবেন কোন কিশোর যাতে মাদকের সাথে জড়িত না হয়, এই ব্যাপারে সবাইকে সচেতন থাকার জন্য পরামর্শ দেওয়া হয়।
এখানে মহিলাদের উপস্থিতি ছিল চোখে পড়ার মতো, প্রায় দুই শতাধিক মানুষের উপস্থিতিতে এই আলোচনায় সবায় সকলে একত্বতা প্রকাশ করেন যে মাদকের বিরুদ্ধে আমরা সবাই সচেতন হয়ে কাজ করব আমাদের এলাকায় কোন মাদক বেচাকেনা বা সেবন করা চলবে না।
এ ব্যাপারে প্রশাসনের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন উপস্থিতি সকল জনসাধারণ তারা বলেন আইনশৃঙ্খলা বাহিনী যেন আমাদেরকে এই মাদকের হাত থেকে ছোট ছোট কিশোরদেরকে রক্ষা করেন এলাকায় শান্তি ফিরিয়ে আনার আহ্বান জানান।
সম্প্রতি গত ৩১ মে মাদক সেবানে নিষেধ করায় মোঃ আজমল মিয়া নামে এক ব্যক্তিকে কুপিয়ে জখম করেছে কিশোর গ্যাংয়ের সদস্যরা। গুরুতর আহত আজমল মিয়াকে ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
এঘটনায় শনিবার (৩১ মে) দুপুরে কোতোয়ালী থানায় অভিযোগ দিয়েছেন আজমল মিয়ার ছেলে মোঃ হাফিজুর রহমান।
অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, সদর উপজেলার কৃষ্ণনগর ইউনিয়নের রহিমপুর গ্রামের বাসিন্দা আজমল শেখ গতকাল শুক্রবার (৩০ মে) মাগরিবের নামাজ শেষে বাড়ি ফিরছিলেন। পথিমধ্যে আগে থেকে ওৎ পেতে থাকা ৩/৪ জন কিশোর তার ওপর হামলা চালায়। এসময় আজমল শেখের শরীরের বিভিন্ন অংশে চাপাতি দিয়ে কুপিয়ে জখম ও মারপিট করে।
পরে স্থানীয়রা তাকে উদ্ধার করে ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করে। এঘটনায় শনিবার দুপুরে কোতোয়ালী থানায় অভিযোগ দিয়েছেন আজমল শেখের ছেলে হাফিজুর রহমান।
স্থানীয় ও পরিবারের সদস্যরা জানান, কৃষ্ণনগর ইউনিয়ন জুড়েই মাদকের ব্যবসা করে আসছে কিশোররা। বিভিন্ন স্থান থেকে মাদকসেবীরা মাদক নিতে আসে এ এলাকায়। সদর থেকে দূরে হওয়ায় এ এলাকায় অবাধে মাদকের ব্যবসা করে আসছে কিশোররা। তাদের কিছু বললেই তারা ক্ষিপ্ত হয়ে কিশোররা দলবল নিয়ে হামলা চালায়।
আজমল শেখের ছেলে হাফিজুর রহমান বলেন, ‘জমি-জমা নিয়ে প্রতিপক্ষের সঙ্গে মামলা রয়েছে। আবার কিছুদিন আগে এই এলাকার কিছু কিশোর মাদকের সঙ্গে জড়িত তাদের মাদক বিক্রি করতে মানা করেছিল আমার বাবা। আমাদের জমিতে বসেই মাদক সেবন করতো তারা। এনিয়ে বাবার ওপর ক্ষিপ্ত ছিল ওই কিশোররা। তারাই এ হামলা চালিয়েছে। থানায় অভিযোগ দিয়েছি। জড়িতদের দ্রুত গ্রেফতার করে আইনের আওতায় আনার দাবি জানাই পুলিশের প্রতি।’
স্থানীয় বাসিন্দা জামাল হোসেন বলেন, ‘এলাকায় কিশোর গ্যাংয়ের অত্যাচারে অতিষ্ঠ আমরা। কাউকে কিছু বললেই ৩০/৪০ জন জড়ো হয়ে একসঙ্গে এসে হামলা চালায়। ভয়ে তাদের বিরুদ্ধে কেউ কথা বলতে সাহস পায় না।’
তিনি আরও বলেন, ‘এলাকায় মাদকে সয়লাব হয়ে গেছে। ছোট ছোট ছেলেরা মাদকের ব্যবসা ও সেবনে জড়িয়ে পড়েছে। ওদের কারণে এলাকার অন্য ছেলেরাও নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। অন্য এলাকা থেকেও কিশোররা এ এলাকায় এসে মাদক সেবন করে ও কিনে নিয়ে যায় । শহর থেকে বেশ দূরে হওয়ায় নিরাপদ স্থান হিসেবে এই এলাকা বেছে নিয়েছেন তারা।’
সেলিনা আজিজ নামে একজন নারী জানান আমরা এখন এমন পর্যায়ে পৌঁছেছে দিনে আমরা চলাফেরা করতে ভয় পাই মেয়েরা স্কুলে যেতে ভয় পায় দিনরাত মিলেই এখান দিয়ে এই কিশোরা বিভিন্ন ধরনের মোটরসাইকেল নিয়ে আড্ডা করে , দূর দূরান্ত থেকে কিশোররা এখানে আসে মাদক ক্রয় ও সেবন করতে । এ ব্যাপারে তিনি প্রশাসনের দৃষ্টি আকর্ষণ করে বলেন মাদক সেবীদের কে নির্মূল করে আমাদেরকে একটু স্বস্তিতে থাকতে দিন।
এ ব্যাপারে কৃষ্ণনগর ইউনিয়ন পরিষদের ৯ নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য কনক হাসান মাসুদ জানান এই এলাকাটা একটা মাদক ব্যবসায়ীদের নিরাপদ স্থান হিসেবে বেছে নিয়েছে ,সার্বক্ষণিক মাদক সেবীরা এখানে মাদক বেচাকেনা করে ও সেবন করে থাকে।
প্রশাসনের দৃষ্টি আকর্ষণ করে তিনি বলেন, ‘এদের এখনই থামানো দরকার, না হলে এলাকায় বসবাস করা আমাদের কঠিন হয়ে পড়েছে।’ দ্রুত এদের আইনের আওতায় আনার দাবি জানান তিনি।
ফরিদপুর কোতোয়ালী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. আসাদুজ্জামান বলেন, ‘হামলার ঘটনায় অভিযোগ পেয়েছি। তদন্ত চলছে আমরা গুরুত্ব সহকারে দেখছি ও ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এছাড়া ওই এলাকায় মাদকের বিষয়েও অভিযান পরিচালনা করা হবে অতি দ্রুত, মাদকের ব্যাপারে প্রশাসন জিরো টলারেন্স।