সমাজের প্রতিটিস্তরে জবাবদিহিতা প্রতিষ্ঠা করার অঙ্গিকার ব্যক্ত করেছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। তিনি বলেছেন, আমরা দেশে একটা জবাবদিহিতার পরিবেশ তৈরি করতে চাই। রাজনৈতিক দল হিসেবে আমাদের মূল লক্ষ্যে উদ্দেশ্যে জবাবদিহিতা। শুধু প্রধানমন্ত্রী, মন্ত্রী, এমপিরা জবাবদিহিতা করবে? না। প্রতিটা পর্যায়ে জবাবদিহিতা করতে হবে। ইউনিয়ন পরিষদের মেম্বর যেমন জবাবদিহিতা করবে একজন প্রধানমন্ত্রীও জবাবদিহিতা করবে। সরকারি, বেসরকারি পর্যায়ের প্রত্যেকটি পর্যায়ে জবাবদিহিতা করতে হবে।
গতকাল শনিবার ফরিদপুর বিভাগীয় বিএনপির দিনব্যাপী ৩১ দফা বাস্তবায়ন ও জনসম্পৃক্তকরণ কর্মশালায় প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্যকালে এই অঙ্গিকার করেন তিনি। সকাল ১০ টা থেকে সদর উপজেলা পরিষদের অডিটোরিয়াম হল রুমে এই কর্মশালা অনুষ্ঠিত হয়। এতে ফরিদপুর, রাজবাড়ী, মাদারীপুর, শরিয়তপুর ও গোপালগঞ্জ জেলা বিএনপির নেতৃবৃন্দ অংশগ্রহণ করেন। বিকাল ৪ টা থেকে ঘন্টাব্যাপী দিকে অংশগ্রহণকারীদের প্রশ্নোত্তর পর্বে ভার্চুয়ালি যোগ দেন তারেক রহমান। পরে সকলের উদ্দেশ্যে বক্তব্য দেন।
বক্তব্যকালে তিনি বলেন, ‘পলায়নকৃত স্বৈরাচার সরকারের আমলে কোনো ক্ষেত্রেই জবাবদিহিতা ছিল না। দেশে যদি জবাবদিহিতা থাকতো তাহলে ফরিদপুর থেকে ২ হাজার কোটি টাকা পাচার হতো না বলে তিনি মন্তব্য করেন।
তিনি বলেন, ‘আমরা স্বাস্থ্যখাতে এমন একটি পর্যায় সৃষ্টি করতে চাই যে দেশের মানুষ দেশেই চিকিৎসা নিতে পারবে। শিক্ষার্থীরা তাদের ন্যায্য শিক্ষা নিতে পারবে। আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা করতে চাই। একমাত্র জবাবদিহিতা প্রতিষ্ঠা করা গেলে অনেককিছুই করা সম্ভব হবে। এই জবাবদিহিতা প্রতিষ্ঠা করতে হলে আমাদের ঘুরে আবার পেছনে যেতে হবে। বিভিন্ন শ্রেণী পেশার মানুষ যেমন ঐক্যবদ্ধ হয়ে স্বৈরাচারকে পালিয়ে যেতে বাধ্য করেছে। ঠিক একইভাবে দেশের মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠা করেত ঐক্যবদ্ধভাবে করতে হবে। যার মাধ্যমে পর্যায়ক্রমভাবে আমাদের কাঙ্খিত বাংলাদেশ গড়ার কাজ শুরু করতে পারব।
বিএনপির প্রতি জনগণের আস্থা ধরে রাখতে নেতাকর্মীদের নির্দেশনা দিয়ে বলেন, বিএনপির প্রতি জনগণের আস্থা আছে বলে ঘরে বসে থাকলে সেই আস্থা ধীরে ধীরে ক্ষয় হয়ে যাবে। সুতরাং, প্রথম শর্ত হচ্ছে জনগণকে আস্থায় রাখা এবং আস্থায় রাখতে হলে জনগণের প্রত্যাশা অনুযায়ী আমাদেরকে উঠতে হবে এবং চলতে হবে। আমাদের মধ্যে কেউ কেউ কিছু ভুল করছে সেই ভুল থেকে তাদেরকে সুধরে যেতে হবে অথবা তাদেরকে সতর্ক করতে হবে। ক্ষেত্র বিশেষে আমাদেরকে আরও কঠোর হতে হবে। মনে রাখতে হবে, রাজনৈতিক দলের পুঁজি হচ্ছে জনগণের আস্থা। এই পুঁজি যদি নষ্ট হয়ে যায় তাহলে সবকিছু নষ্ট হয়ে যাবে।
দেশ সংস্কারের কথা উল্লেখ করে বলেন, ‘গত দুই-তিন মাসে দেখেছি, বিভিন্ন ব্যক্তিবর্গ বিভিন্ন সংস্কারের কথা বলছেন। তাঁরা যে সংস্কারের কথা বলছেন তা আমাদের এই ৩১ দফার মধ্যেই রয়েছে। আমরা যে মূল বিষয় বলেছি, তারা একই কথা বলছেন। বিএনপি এমন একটি সময়ে এই দফাগুলো উপস্থাপন করেছে, যখন আমরা জানতাম স্বৈরাচারের পতন হবে তখন। হয়তো সঠিক সময়টা জানতাম না। আমরা যে দেশের মানুষের জন্য কাজ করতে চাই, এটিই হচ্ছে সবচেয়ে বড় প্রমাণ।
এতে সভাপতিত্ব করেন দলটির সাংগঠনিক সম্পাদক (ফরিদপুর বিভাগ) শামা ওবায়েদ। এর আগে দিনব্যাপী এই কর্মশালা অনুষ্ঠিত হয়। কর্মশালায় প্রধান বক্তা হিসেবে বক্তব্য রাখেন বিএনপির চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়ার উপদেষ্টা ইসমাঈদ জবিউল্লাহ।
এ সময় উপস্থিত ছিলেন বেগম খালেদা জিয়ার উপদেষ্টা জহিরুল হক শাহজাদা মিয়া, সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক খন্দকার মাসকুর রহমান মাসুক, মোঃ সেলিমুজ্জামান সেলিম, প্রশিক্ষণ বিষয়ক সম্পাদক এ বি এম মোশাররফ হোসেন, সহ ত্রাণ ও পুনর্বাসন সম্পাদক অ্যাডভোকেট নেওয়াজ হালিমা আরলী, জাতীয়তাবাদী মহিলা দলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও ঢাকা উত্তরের আহ্বায়ক চৌধুরী নায়াব ইউসুফ, জেলা বিএনপির আহ্বায়ক সৈয়দ মোদারেরছ আলী ইছা প্রমুখ।