সবাই বলে ফাইন্যান্স (অর্থ) নেই। আমি আজ পাঁচ টাকাও হিসাব করে চলি। আজ পর্যন্ত কেউ স্পন্সর করেনি। আমি এই বয়সে সর্বনিম্ন ১৬ ঘন্টা কাজ করি। কারন, আমি কাজকে উপভোগ করি। আমি ছন্দের প্রথম ধাপেও না, আমি ছেড়ে দেয়ার মেয়েও না। কাজেই, সারাক্ষণ বলো না, পয়সা। তোমরা দেখাও। বাংলাদেশ শুধু চোখ খুলো। শুধু কাজে মনোযোগী হও।
ফরিদপুরে উদ্যোক্তা ‘কৈফিয়া’র আয়োজনে বিবির মেলা উদ্বোধনকালে উদ্যেক্তাদের প্রতি এই আহ্বান জানান আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন ফ্যাশন ও নকশাকার এবং মডেল বিবি রাসেল। শুক্রবার সন্ধ্যায় শহরের ঐতিহ্যবাহী অম্বিকা মেমোরিয়াল মাঠে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে এই মেলার উদ্বোধন করেন তিনি। আগামী ৮ ডিসেম্বর পর্যন্ত বিবির মেলা খ্যাত তাঁতশিল্প, লোকশিল্প ও হস্তশিল্প এ মেলা চলবে। এ মেলায় দেশের বিভিন্ন এলাকার উদোক্তারা স্টল নিয়ে বসেছেন। তাতে ফুটে উঠেছে বিলুপ্তি প্রায় শিল্প।
কৈফিয়ার স্বত্ত্বাধিকারী রওশন আরা দীপ্তি জানান, এই মেলা একটি জাতীয় মেলা। দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে উদ্যেক্তারা এসেছেন। আন্তর্জাতিক অঙ্গণে আমাদের দেশীয় পণ্যের অনেক কদর রয়েছে। সেক্ষেত্রে এই পণ্যগুলোর রক্ষা করার জন্যই এই মেলার আয়োজন। আমরা চাই, আমাদের ঐতিহ্য ও সংস্কৃতি টিকে থাকুক।
সন্ধ্যায় প্রদীপ প্রজ্জ্বোলনের মধ্যে দিয়ে মেলার উদ্বোধন করা হয়। এরপর অতিথিরা বক্তব্য রাখেন। এর আগে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান শুরু হয়। যেখানে বিবি রাসেলের অগ্রসরের প্রতীক ‘একলা চলোরে’ গানটি পরিবেশন করা হয়।
অনুষ্ঠানে বিবি রাসেল উদ্যোক্তাদের মোবাইল ছেড়ে কাজে মনোযোগ হওয়ার আহ্বান জানান। তিনি বলেন, আজকে আমরা এক আঙ্গুল দিয়ে পৃথিবী দেখতে পারি। আমি অবশ্যই শিখেছি। কিন্তু ইয়াং জেনারেশন কি শিখছে, জানে আমাদের দেশে কি আছে। আমি কম্পিউটার নিয়ে জন্ম নেইনি। আমি গ্রামে যখন তাতি শেখায় তখন দেখি ওদের দুই হাতে দুইটা টেলিফোন। সবার হাতে একটা করে টেলিফোন, পকেটে রাখো। হাত হচ্ছে গুরুত্বপূর্ণ। হাত, চোখ কথা বলে। কাজ করছে টেলিফোন এখানে, আমি বুঝাচ্ছি টেলিফোন এখানে। এটা কিন্তু আপনি বাইরে দেখবেন না, একদমই না। আমি অনেক আর্টিস্টদের সাথে কাজ করি।
ঘরের শিক্ষা সবচেয়ে বড় শিক্ষা উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘শৈশব একজন মানুষের জন্য খুব গুরুত্বপূর্ণ। আমার দুটো পা মাটিতে আছে, আমি যে ঘরে জন্ম নিয়েছি, আমার মা-বাবা আমাকে মাটি ছুতে দিয়েছে। আমি মাটি না ছুলে মাটির কাছে যাবো কি করে। ঘরের শিক্ষা সবচেয়ে বড় শিক্ষা। আমার সঙ্গে পাশ্ববর্তী একটা দেশও পারে না। তোমরা দুইটা পণ্য বানালে একটা দেশীয় তৈরি করো। আমি দেশীয় কাজে ম্যাজিক দেখাই।
এ সময় মানসম্মত পণ্য তৈরিতে কেমিক্যাল ব্যবহার ছাড়া কিভাবে সৌন্দর্য ফুটিয়ে তোলা যায় সে বিষয়ে উদ্যোক্তাদের অনুরোধ করেন। তিনি বলেন, ‘আমার বাবা-মা আমাকে দেশপ্রেমের ইনজেকশন দিয়ে দেয়নি, উপলদ্ধি করতে দিয়েছে। আমাকে দেখে কেউ আর্টিস্ট বলে না, আর্টদের অ্যাম্বাসেডর। আর্টদের ইউএনও এর অর্গানাইজেশন আমাকে তিন বছর আগে আমাকে ডিজাইনার ফর দ্য আর্ট হিসেবে ডিক্লেয়ার করেছে। আমি কোনো দিনও সিনথাটিক ব্যবহার করি না, প্লাস্টিক ব্যবহার করি না।
সামনেরটা যেমন সুন্দর, একটা মানুষের ভেতরটা তেমন সুন্দর হতে হয়। তোমরা যখন কাপড় বানাবে বা কাজ করবে তখন শুধু সামনে সুন্দর করো না, ভেতরটাও সুন্দর করো। দশ টাকা বেশি হোক, সে তোমার কাছে ফিরে আসবে। কিন্তু কেমিক্যাল নয়। কেমিক্যাল ব্যবহার করলে নিজেদের ধ্বংস করবে, ক্রেতাদেরও ধ্বংস করবে।
উদ্বোধনী সভায় অন্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন প্রবীণ শিক্ষাবিদ প্রফেসর আলতাফ মাহমুদ, সমকালের উপদেষ্টা সম্পাদক আবু সাঈদ খান, কৈফিয়া উদ্যোক্তার বাবা দলিল উদ্দিন, তরুণ উদ্যোক্তা ও অভিনেতা অন্তু করিম।