1. kazi.rana10@gmail.com : Sohel Rana : Sohel Rana
  2. jmitsolution24@gmail.com : support :
শনিবার, ২৮ জুন ২০২৫, ০৭:০৫ অপরাহ্ন

ফরিদপুরে বোর্ডারদের ৩০ লাখ টাকা নিয়ে উধাও ছাত্রী হোস্টেলের পরিচালিকা

ফরিদপুর সংবাদদাতা
  • Update Time : বৃহস্পতিবার, ২৪ অক্টোবর, ২০২৪
  • ২৭৮ Time View

ফরিদপুর শহরের একটি ছাত্রী হোস্টেলের বোর্ডার সহ বিভিন্নজনের নিকট থেকে প্রায় ৩০ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়ে পালিয়ে গেছে ওই হোস্টেলের পরিচালিকা। শহরের ঝিলটুলী মহল্লার ডায়াবেটিক অ্যাসোসিয়েশন হাসপাতালের সামনে অবস্থিত আফসানা ছাত্রী হোস্টেলে এ ঘটনা ঘটেছে। ওই মেসের পরিচালিকা আফসানা মীম হোস্টেল ছাত্রী ও বিভিন্ন গ্রাহকের কাছ থেকে নেওয়া প্রায় ৩০ লাখ টাকা নিয়ে চম্পট দিয়েছেন বলে ভুক্তভোগীরা জানান। এ ঘটনায় ফরিদপুরের কোতোয়ালী থানায় সাধারণ ডায়েরি করেছেন ভুক্তভোগীরা।
জানা যায়, প্রায় চার বছর আগে ঝিলটুলীর সুফিয়া বেগমের মালিকানাধীন ১১ তলাবিশিষ্ট রহমত টাওয়ারের ছয়টি ফ্ল্যাট ভাড়া নিয়ে আফসানা ছাত্রী হোস্টেল নামে ওই মেসটি চালু করেন মধুখালি উপজেলার আড়পাড়া গ্রামের মামুন মোল্লার মেয়ে আফসানা মীম। ৬টি ফ্লাটের বিভিন্ন কক্ষে প্রায় ১২০ জন ছাত্রী বোর্ডার রয়েছেন। একই বিল্ডিংয়ের আরেকটি ফ্ল্যাট ভাড়া নিয়ে স্বামী ইমামুজ্জামান মিয়া ওরফে সাব্বিরকে নিয়ে সপরিবারে সেখানে থাকতেন তিনি। মাত্র ১৫ দিন আগে শহরের একটি হাসপাতালে সিজারিয়ান অপারেশনের মাধ্যমে একটি কন্যা সন্তান জন্ম দেন মীম।
হোস্টেলের বোর্ডাররা জানান, বুধবার ভোরে হঠাৎ একটি হলুদ পিকআপ ও দুটি ভ্যান যোগে তার পরিবারের সব মালামাল নিয়ে উধাও হয়ে যান মীম। তার আগে মঙ্গলবার রাতে মীম ওই হোস্টেলের সকল ছাত্রীদের কারো নিকট থেকে ১ হাজার, আবার কারো নিকট থেকে ২ হাজার টাকা করে প্রায় ৫০ হাজার টাকা সংগ্রহ করেন। তারপর ভোরের দিকে লাপাত্তা হয়ে যায় বলে জানান হোস্টেলের ছাত্রীরা। একাধিক ছাত্রী বলেন, অনলাইন জুয়ায় আসক্ত হয়ে মীম প্রায় ৫০ লাখ টাকা দেনা হয়ে পড়েন। তিনি বিভিন্ন সময়ে আমাদের নিকট থেকেও টাকা নিয়েছেন। তারা বলেন, এ হোস্টেলের অনেক ছাত্রী চলে গেছেন। অনেকে এক মাস সময় চেয়েছেন। এখন গতকাল থেকে আমরা খেয়ে না খেয়ে আছি। অনেকের পরীক্ষা চলছে। সবাই খুব বিপদে আছে। এমনকি হোস্টেলের রান্নার পরিচারিকার থেকেও ২৫ হাজার টাকা ধার নিয়েছেন তিনি।
ছাত্রী হোস্টেলের বিল্ডিং মালিক সুফিয়া বেগমের ছেলে মো: রফিকের সাথে এবিষয়ে আলাপকালে তিনি বলেন, বৃহস্পতিবার (২৪ অক্টোবর) তার বাড়ির ভাড়া দেওয়ার কথা ছিলো। তার আগে বুধবার (২৩ অক্টোবর) খুব ভোরে কাউকে কিছু না বলে পিকআপে মালামাল নিয়ে উধাও হন আফসানা মীম। দুপুরে একে একে পাওনাদারদের ফোনে জানতে পারি এসব। তিনি জানান, ৬ টি ফ্লাটের প্রতিটির ভাড়া ২০ হাজার টাকা করে। ২ মাসের ভাড়া বকেয়া রয়েছে। বিদ্যুৎ বিলও বকেয়া রেখেছে প্রায় আড়াই লাখ টাকা। এবিষয়ে আমরা আইনগত ব্যবস্থা নেবো।
রফিক বলেন, এ অবস্থায় হোস্টেলের ছাত্রীদের ব্যাপারে এখনো কোন সিদ্ধান্ত হয়নি। তারা এখানে নিরাপদেই আছে। তাদের সময় দেওয়া হয়েছে। তিনি বলেন, অনেকেই মীমের কাছে টাকা পায় বলে জানতে পারছি। এসব পাওনাদারেরা এখন আমাদের ফোন দিয়ে মীমের কাছে তাদের টাকা পাওনার কথা জানাচ্ছেন। এখন পর্যন্ত যা খবর এসেছে তাতে মীম প্রায় ৩০ লাখ টাকা দেনা রয়েছেন বিভিন্নজনের কাছে।
এদিকে এ খবর জানতে বৃহস্পতিবার দুপুরে ওই হোস্টেলে গেলে তখন সেখানে উপস্থিত হন আফসানা মীমের আপন ফুপু শাহানা বেগম। তিনি মধুখালি থেকে ভাতিজির সাথে দেখা করতে এসে রুমে তালা দেওয়া দেখেন। শাহানা বলেন, গত সেপ্টেম্বর মাসের ১৭ তারিখে আমার মেয়ে আশার কাছ থেকে ৩ লাখ টাকা ধার নিয়ে এক সপ্তাহের মধ্যে দিবে বলে জানায় মীম। আজ এক মাসের বেশি হলো টাকা দিচ্ছেনা। আজ তার সাথে দেখা করতে এসেছি। তবে হোস্টেল ফেলে মীম পালিয়েছে একথা জেনে হাউমাউ করে কেঁদে উঠেন শাহানা বেগম। তিনি কাঁদতে কাঁদতে বলেন, মেয়ের জামাই জমি কিনতে সিঙ্গাপুর থেকে টাকা পাঠাইছে। কাউকে না জানিয়ে সেই টাকা ধার দিছে মীমকে। একথা জামাই জানলে মেয়ের সংসার থাকবে না।
এ ঘটনায় কোতয়ালী থানায় একটি লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন ওই হোস্টেলের সামনের বিকাশের দোকানি মো: নিশাদ পাল। তিনি বলেন, আমার দোকানের বিকাশ নম্বর থেকে মীম টাকা লেনদেন করতেন। গত ২১ অক্টোবর মীম বিকাশের মাধ্যমে ৪০ হাজার টাকা নেন এবং ২২ তারিখে নগদ ৩০ হাজার টাকা নেন। গতকালই তার টাকা দেওয়ার কথা ছিলো। কিন্তু বুধবার সকালে তার পালিয়ে যাওয়ার কথা শুনে আমার মাথায় হাত পড়েছে।
পাশের আরেক বিকাশ ও লোড ব্যবসায়ী কাজী রাজু বলেন, ২২ অক্টোবর সকালে আমার কাছ থেকে নগদ ২ লাখ ২০ হাজার টাকা ঋণ নিয়ে রাতেই ফেরত দিবেন বলে জানিয়েছিলো মীম। সকালে শুনি তিনি চম্পট দিয়েছেন। আমিও পুলিশের শরণাপন্ন হবো।
হোস্টেলের ছাত্রীরা জানান, প্রতি সিট ৪ হাজার টাকা করে ভাড়া দিতে হয় এ হোস্টেলে। গত ২ মাস ধরে এ হোস্টেলে কোনকিছুরই ঠিক নাই। গ্যাসের দোকানে ৭০ হাজার টাকা বাকি। তারা আর গ্যাস দেন না। বাসায় কুকারে রান্না করা হয়। আবার ঠিক মত রান্না করাও হয়না।
মীমের বিরুদ্ধে অভিযোগের বিষয়ে জানতে কোতোয়ালী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোঃ আসাদউজ্জামানের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, আফসানা ছাত্রী হোস্টেলের পরিচালিকা আফসানা মীমের উধাও হওয়ার ঘটনায় ওই বিল্ডিংয়ের মালিকের পক্ষ থেকে একটি লিখিত অভিযোগ পেয়েছি। মীম তাদের ২ মাসের ভাড়া না দিয়ে চলে গেছেন। এ বিষয়ে আমাদের তদন্ত কার্যক্রম চলমান রয়েছে।

এদিকে আফসানা মীম আত্মগোপনে থাকায় তার মোবাইলে যোগাযোগ করা হলেও তা বন্ধ পাওয়া যায়

Please Share This Post in Your Social Media

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

More News Of This Category
© All rights reserved © 2023
error: Content is protected !!