উপজেলার ৩ ইউপি চেয়ারম্যানের নানান অনিয়ম-দুর্নীতি ও স্বেচ্ছাচারিতার বিরুদ্ধে ২১ ইউপি সদস্যর অনাস্থা প্রস্তাব এবং অভিযোগ দায়ের করেছেন। পৃথক পৃথক অভিযোগ সূত্রে জানা যায় মোচনা চেয়ারম্যান এমদাদ হোসেন মোল্যা, উজানী চেয়ারম্যান শ্যামল কান্তি বোস ও কাশালিয়া পরিষদের চেয়ারম্যান সিরাজুল ইসলাম মিয়ার বিরুদ্ধে মোট ২১ ইউপি সদস্য জেলা প্রশাসক ও উপজেলা নির্বাহী অফিসার বরাবর উক্ত অনাস্থা প্রস্তাব ও অভিযোগ দায়ের করেন।
১৪নং উজানী ইউনিয়নের ৯ জন মেম্বার লিখিত অভিযোগে উল্লেখ করেন, উজানী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান শ্যামল কান্তি বোস একজন প্রভাবশালী লোক। প্রভাব খাটিয়ে পরিষদের প্রশাসনিক কার্যক্রম নিজের স্বেচ্ছাচারিতায় পরিচালনা করেন। ইউনিয়ন পরিষদের নামে কোন সভাও করেন না এবং অভিযোগকারী কোন মেম্বারদের জানান না। তিনি তার নিজের মত করে বরাদ্দের টাকা বন্টন করেন। টাকার বিনিময় ব্যতীত কোন ভিজিডি কার্ড, বয়স্ক ভাতা ও জাতীয় কোন সেবা প্রদান করেন না। অভিযোগকারী মেম্বারদের কিছু দুর্নীতি ও অনিয়ম হচ্ছে, ধর্মরায়ের বাড়ীর ফটিক বিশ্বাসের পুকুর পর্যন্তু রাস্তা নির্মাণ না করে বিল উত্তোলন করেন। ২০২৩-২০২৪ অর্থ বছরের ভূমি হস্তান্তরের করের টাকা আত্মসাৎ। ২০২৩-২০২৪ বছরের পিবিজি’র ৯ লক্ষ ২০০ টাকা, ২০২২ থেকে অদ্যাবধি ট্রেডলাইসেন্স অর্থসহ অগনিত প্রকল্পের টাকা আত্মসাত করেছেন চেয়ারম্যান শ্যামল কান্তি বোস।
১৫ নং কাশালিয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান সিরাজুল ইসলাম মিয়ার বিরুদ্ধে তার পরিষদের ৪ জন ইউপি সদস্য গত মাসের ২৫ তারিখে মুকসুদপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার দপ্তরে অভিযোগ দায়ের করেন। অভিযোগে পত্রে, ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান সিরাজুল ইসলাম মিয়ার বিরুদ্ধে অনাস্থা প্রস্তাব দাখিল করেন। অভিযোগে সূত্রে জানা যায়, সিরাজুল ইসলাম একজন স্থানীয় প্রভাবশালী চেয়ারম্যান। তিনি প্রভাব খাটিয়ে পরিষদের প্রশাসনিক কার্যক্রম মাসিক সভা না করে নানান অনিয়ম-দুর্নীতি ও স্বেচ্ছাচারিতা পরিষদ পরিচালনা করে আসছেন। বিভিন্ন দপ্তর থেকে কোন বরাদ্ধা পাওয়া গেলে পরিষদের সভা না করে এবং পরিষদের মেম্বারদের মতামতের গুরুত্ব না দিয়ে তার নিজের মত করে বরাদ্দের টাকা বন্টন করে থাকেন। তিনি নির্বাচিত ইউপি সদস্যদের উপেক্ষা করে তার অনুগত কিছু স্থানীয় নেতাদের মাধ্যেমে ভিজিডি কার্ড, বয়স্ক ভাতা, জাতীয় যে কোন সেবা টাকার বিনিময়ে বন্টন করেন। চেয়ারম্যান সরকারী বরাদ্দকৃত কাবিখা, কাবিটা ও টিআরসহ সকল উন্নয়ন প্রকল্পে বরাদ্দকৃত টাকার কিছু স্থানে কাজ না করে এবং কিছু স্থানে আংশিক করে সমপরিমান টাকা উত্তোলন করে আত্নসাৎ করে আসছেন।
উপজেলার ১৩ নং মোচনা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান এমদাদ হোসেন মোল্যার সীমাহীন দুর্নীতি, অর্থ আত্বসাৎ, অবৈধ সম্পদ অর্জন, স্বেচ্ছাচারিতা এবং বিধি-বিধান বহির্ভূত কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে পরিষদের ৮ জন ইউপি সদস্য মুকসুদপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার দপ্তরে লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন।
অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, এমদাদ হোসেন মোল্যা ২০২১ সালের ২৮ ডিসেম্বর চেয়ারম্যান হিসাবে শপথ গ্রহণ করার পর মাত্র একদিন ইউনিয়ন পরিষদ কার্যালয়ে অফিসের দাপ্তরিক কাজ করেন। এরপর থেকে ইউনিয়ন পরিষদ এবং পারিবারিক আদালত তালাবদ্ধ রেখে তার নিজ বাড়িতে অফিসের কার্যাবলী নিজ খেয়াল খুশিমত অফিস পরিচালনা করে আসছেন। চেয়ারম্যান ইউপি সচিব ও দফাদার-চৌকিদারদের চাপ প্রয়োগ করে পারিবারিক ও ব্যক্তিগত কার্যদি পরিচালনা করিয়ে আসছেন। জন গুরুত্বপূর্ণ যে কোন নাগরিক সেবার জন্য তার ভাবাপন্ন লোক মারফত ৪ থেকে ৫ শত টাকার অধিক ফি গ্রহণ করেন। স্থানীয় সরকার ও বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের প্রকল্পের বিষয় সে¦চ্ছাচারিতা এবং বিধি-বিধান বহির্ভূত কর্মকাণ্ড করে মেম্বারদের বিভিন্নভাবে চাপ প্রয়োগ করে রেজুলেশনে স্বাক্ষর করিয়ে বিল উত্তোলন করে টাকা আত্নসাৎ করেন। টিআর, কাবিখা, কাবিটা, এলজিএসপি থেকে বরাদ্দ, ২৪টি গভীর নলকুপ জনস্বাস্থ্য প্রকৌশলী অধিদপ্তর কর্তৃক পাকা ল্যাট্রিন মেম্বারদের না জানিয়ে নিজের স্বেচ্ছাচারিতা করে প্রকল্পের কাজ করিয়েছে এবং চেয়ারম্যান এমদাদ হোসেন মোল্যা প্রতিটি গভির নলকূপের বাবদ ১৫ থেকে ২০ হাজার টাকা নিয়েছেন। কাশালিয়া ইউপি চেয়ারম্যান সিরাজুল ইসলাম মিয়ার ব্যবহৃত মোবাইল ০১৭১৬২২১৫১৩ নাম্বারে কল দিলে তিনি রিসিভ করেননি।
উজানী ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান শ্যামল কান্তি বোস জানান, পরিষদে পক্ষ বিপক্ষ থাকে সেই কারণে অভিযোগ দিয়েছে। প্রশাসন তদন্ত করে যেটা করবে আমি সেটাই সম্মত।
মোচনা ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান এমদাদ মোল্যা জানান, আমি আমার পরিষদের মেম্বারদের অনৈতিক সুযোগ সুবিধা দেই না, তারা পরিষদের বিভিন্ন বরাদ্দ মেরে খেতে চায় আমি সেটা হতে দেই না, তাই তারা আমার বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করেছে। ইউনিয়ন পরিষদের কার্যক্রম তার বাড়িতে পরিচালনা করেন এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি জানান, আমার বাড়ি থেকে পরিষদ ৭ কিলোমিটার দূরে। তাছাড়া যেখানে পরিষদ ঐ এলাকার লোকজন খারাপ প্রকৃতির লোক। আমি আমার জীবনের ঝুকি নিয়ে পরিষদের কার্যক্রম ইউপি পরিষদে করি না। আমি ইউএনও অফিসে অবগত করে আমার বাড়িতে পরিষদের কার্যক্রম পরিচালনা করি। আমার বিরুদ্ধে অভিযোগ হয়েছে প্রশাসন তদন্ত করে যে রায় দিবে আমি সেই রায় মেনে নিবো।
মুকসুদপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোহাম্মদ আজিজুর রহমান জানান, মুকসুদপুর উপজেলার ৩টি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানের বিভিন্ন অনিয়ম দুর্নীতি ও স্বেচ্ছাচারিতার বিরুদ্ধে অনাস্থা এবং অভিযোগ দায়ের হয়েছে। এই বিষয়ে তদন্ত চলছে। তদন্ত সাপেক্ষে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।