1. kazi.rana10@gmail.com : Sohel Rana : Sohel Rana
  2. jmitsolution24@gmail.com : support :
শনিবার, ২৮ জুন ২০২৫, ০২:২৮ অপরাহ্ন

ফরিদপুরে হাসপাতালগুলোতে ধারণ ক্ষমতা ছাড়িয়ে ডেঙ্গু রোগী

স্টাফ রিপোর্টার 
  • Update Time : শনিবার, ১৬ সেপ্টেম্বর, ২০২৩
  • ২৬৮ Time View
হাসপাতালের মেঝেতে রেখে ডেঙ্গু রোগীদের চিকিৎসা চলছে। ছবিটি গতকাল দুপুরে ফরিদপুর মেডিকেল হাসপাতাল থেকে তোলা (উপরে) এবং ফরিদপুর জেনারেল হাসপাতালে ডেঙ্গু রোগীদের চাপে তিল পরিমাণ ঠাই নেই (নিচে)।

ফরিদপুরে ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত রোগী। গত ২৪ ঘন্টায় ৩ জনসহ গত দুইদিনে আরো ৬ জনের মৃত্যু হয়েছে। জেলা শহরের সরকারি হাসপাতাল দুটিতে ধারণ ক্ষমতা ছাড়িয়ে গেছে ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত রোগীর ভর্তি সংখ্যা। হাসপাতাল দুটির আনাচে-কাঁনাচে বেড বিছিয়ে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে আক্রান্তদের। তবে চিকিৎসকেরা বলছে, সচেতনতা ছাড়া বিকল্প নেই। এমন অবস্থায় সকলকে এগিয়ে আসারও আহŸান জানিয়েছেন তারা।
গতকাল শনিবার দুপুরে ফরিদপুর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ঘুরে দেখা যায়, নির্দিষ্ট ডেঙ্গু ওয়ার্ডের বাইরে ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত রোগীদের রাখা হয়েছে। হাসপাতালটির অব্যবহৃত জায়গাসহ প্রতিটি সিড়িতে রেখে রোগীদের চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে। শুধু তাই নয়, হাসপাতালের বাইরে রোগীদের চিকিৎসা দিতে দেখা যায়। তবে, ডেঙ্গুতে আক্রান্ত রোগীদের মশারির টাঙানোর কোনো চিহ্নই দেখা যায়নি। সাধারন রোগীদের সাথে তাদেরও চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে। এতে আতঙ্কে রয়েছে অন্য রোগীরাও।
ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত মনির মোল্যা নামে এক রোগীর স্বজন বলেন, এতো রোগী আগে দেখিনি। ভয়াবহ অবস্থা। দ্যাখেন, যেখানে-সেখানে রোগী ভর্তি। তবে, হাসপাতালটির পুরাতন বিল্ডিংয়ের নিচ তলায় গেলে ক্ষোভ প্রকাশ করেন লাভলী বেগম নামে অপর এক রোগীর স্বজন। তিনি বলেন, স্যাঁতস্যাতে জায়গায় রোগীদের রাখা হচ্ছে। এগুলোর ছবি তুলেন না কেন? এখানে থাকলে মশাতো এমনেই কাঁমড়াবে।
হাসপাতাল সুত্রে জানা যায়, প্রতিদিন ফরিদপুর, রাজবাড়ী, গোপালগঞ্জ, মাদারীপুর, মাগুরা জেলাসহ অন্তত ৬/৭টি জেলা থেকে ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়ে চিকিৎসা নিতে আসছে। হাসপাতালটিতে গত ২৪ ঘন্টায় ৫৯ জন ভর্তি হয়েছে এবং চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনজন মারা গেছে। বর্তমানে ৩৩৭ জনকে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে।
হাসপাতালটির পরিচালক ডাঃ এনামুল হক এ প্রতিবেদককে বলেন, যে পরিমান রোগী আসছে তাতে আমাদের ডাক্তার, নার্স ও স্টাফদের হিমশিম খেতে হচ্ছে। ২৫০ বেডের মধ্যে ৬৫০জন রোগীকে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে। অতিরিক্ত রোগীর চাপ রয়েছে। এ অবস্থায় সকলকে এগিয়ে আসতে হবে, তা-না হলে অন্য কিছু ঘটতে পারে।
স্যালাইন সংকটের আশঙ্কা প্রকাশ করে তিনি বলেন, নরমাল স্যালাইন এখন পর্যন্ত যে পরিমান মজুদ আছে, তা দিয়ে আগামী ৪/৫দিন সাপ্লাই দিতে পারবো। এরপর সংকট দেখা দিতে পারে। তবে তার আগেই আমরা স্যালাইনের ব্যবস্থা করার চেষ্টা করবো।
একই পরিস্থিতি দেখা যায় ফরিদপুর জেনারেল হাসপাতালেও। হাসপাতালটির নির্দিষ্ট ওয়ার্ড রুম ছাড়িয়ে বারান্দায় রেখে ডেঙ্গু রোগীদের চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে। সরকারি এই হাসপাতালটিতে মোট বেড সংখ্যা রয়েছে ১০০টি। বর্তমানে অন্য রোগী সহ ২১২ জন চিকিৎসা নিচ্ছেন। এরমধ্যে ১০০জনই ডেঙ্গু রোগী এবং গত ২৪ ঘন্টায় ভর্তি হয়েছে ৭৫ জন।
শনিবার (১৬ সেপ্টেম্বর) সকালে হাসপাতালটি দুটি পরিদর্শন করেন জেলাপ্রশাসক মোঃ কামরুল আহসান তালুকদার পিএএ। তিনি সকলকে ডেঙ্গু প্রতিরোধে এগিয়ে আসার আহŸান জানিয়েছেন।
সিভিল সার্জন অফিস সুত্রে জানা যায়, গত ২৪ ঘন্টায় জেলার বিভিন্ন হাসপাতালে ২৬৮ জন ডেঙ্গু রোগী ভর্তি হয়েছে এবং বর্তমানে ৮০২ জন চিকিৎসা নিচ্ছেন। এছাড়া এখন পর্যন্ত জেলায় ৮ হাজার ১৬৩ জন আক্রান্ত হয়েছে। এরমধ্যে সুস্থ হয়েছে ৭ হাজার ৩৩১জন এবং ৩০ জন মারা গেছেন।
গত ২৪ ঘন্টায় ফরিদপুর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনজনের মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করেন সিভিল সার্জন ডাঃ সিদ্দিকুর রহমান। তিনি বলেন, মারা যাওয়া তিনজনের মধ্যে দুইজন ফরিদপুর জেলার বাসিন্দা। এদের মধ্যে শুক্রবার (১৫ই সেপ্টেম্বর) রাতে জেলা সদরের ইসাইল গ্রামের আবুল কালাম আজাদের স্ত্রী মরিয়ম বেগম (৪০) এবং বিকালে সদরপুর উপজেলার পশ্চিম শ্যামপুর গ্রামের বাসিন্দ ইসাহাক শেখ (৭৫) চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যায়। এছাড়া ঐ দিন রাত ৯টায় মারা যায় মাগুরা জেলার মোহাম্মদপুর উপজেলার ঘরিনাডাঙ্গা গ্রামের রুবিয়া বেগম (৬০)।
তিনি বলেন, আমাদের সচেতনতা অবলম্বন করা ছাড়া বিকল্প নেই। আমরা চিকিৎসা নিতে আসা রোগী ও রোগীর স্বজনদের সচেতনতা নিয়ে উদ্বুদ্ধ করে যাচ্ছি।
এর আগের ২৪ ঘন্টায় মারা যায় আরো তিনজন নারী। মারা যাওয়া তিন নারী হলেন- ফরিদপুর সদর উপজেলার কানাইপুর এলাকার সুধীর সিকদারের স্ত্রী চন্দনা সিকদার (৫০), একই জেলার ভাঙ্গা উপজেলার মালিগ্রাম এলাকার ছত্তার বেপারীর স্ত্রী আছিয়া বেগম (৫০) ও গোপালগঞ্জের কাশিয়ানী উপজেলার ব্যাসপুর গ্রামের মো. জাফর শেখের স্ত্রী রাজিয়া বেগম (৫০)।
এছাড়া পরিসংখ্যানে দেখা যায়, জুলাইয়ে জেলায় চিকিৎসাধীন অবস্থায় প্রথম মৃত্যু হয়। চলতি মাসেই ১৭ জনের মৃত্যু হয়েছে। এছাড়া গত আগস্ট মাসে মারা যায় ৯ জন। এর আগে বাকি আরো চারজনের মৃত্যু হয়।

Please Share This Post in Your Social Media

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

More News Of This Category
© All rights reserved © 2023
error: Content is protected !!