ফরিদপুরের বোয়ালমারীতে আমিন বিশ্বাস (৪৫) নামে এক ব্যবসায়ীর দুটি দোকানঘর গত দুই সপ্তাহের বেশি সময় ধরে জোরপূর্বক তালা বন্ধ করে রেখেছে কৃষকদল ও যুবদল নেতা দুই ভাই।
এছাড়া প্রাণনাশের হুমকি, বাড়িঘর ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের মালামালও লুট করে নিয়েছে দুই ভাই। তাঁদের হয়রানি থেকে মুক্তি পেতে ও দোকান দখলের প্রতিবাদে মঙ্গলবার বিকালে উপজেলার চিতারবাজারে সংবাদ সম্মেলন ও মানববন্ধন করেছেন স্থানীয় এলাকাবাসী এবং বাজারের ব্যবসায়ীরা।
ভুক্তভোগী ব্যবসায়ী আমিন বিশ্বাস উপজেলার দাদপুর ইউনিয়নের বাজিতপুর এলাকার বাসিন্দা। তিনি দীর্ঘ ২৩ বছর সৌদি আরব প্রবাসে থেকে গত ৫ বছর আগে দেশে চলে আসেন। এরপর স্থানীয় চিতারবাজারে গার্মেন্টস ব্যবসা শুরু করেন।
আমিন বিশ্বাস জানান,বিদেশে থাকা অবস্থায় ১৩ বছর আগে তিনি দোকান দুটি ক্রয় করেন। ক্রয়কৃত জায়গা দাতা বুঝিয়ে দেয়ার পর দোকানঘর তুলে লিখিত চুক্তিপত্র করে ভাড়া দেন অপর এক ব্যবসায়ীকে। তারপর থেকে দোকানঘরের ভাড়া নিয়ে আসছেন আমিন বিশ্বাস। গত ৫ আগস্টের পর উপজেলা কৃষকদলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক রেজাউল হক ও দাদপুর ইউনিয়ন যুবদলের সভাপতি সালিমুল হক ভাড়াটিয়াদের ভাড়া দিতে নিষেধ করেন এবং তাঁদের নিকট ভাড়া দিতে বলেন।কিন্তু ভাড়াটিয়া ব্যবসায়ী তাদের কথায় কর্ণপাত না করলে গত ১৭ মে ওই দোকানে তালা দেন দুই ভাই।
স্থানীয়দের সাথে কথা বলে জানা যায়, রেজাউল হক ও সালিমুল হক ঢাকায় ব্যবসা করেন। গত ৫ আগস্টের পর এলাকায় ফিরে দলীয় পরিচয়ে প্রভাব বিস্তার শুরু করেন। কেউ প্রতিবাদ করলে বিভিন্ন মামলায় আসামীর হুমকি দেয়া হয়।
আমিন বিশ্বাস কান্নাজড়িত কন্ঠে বলেন, এলাকার কেউ মামলার ভয়ে তাদের অন্যায়ের প্রতিবাদও করে না। আমি সারা জীবন বিদেশ করেছি। আমি কোন রাজনীতি করি না। আমার জীবনে আমি কোনদিন কখনও কোনো মিটিং-মিছিলেও যাইনি।।
দোকানঘরে তালা দেয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে চিতারবাজার বণিক সমিতির সভাপতি জামাল উদ্দিন এই প্রতিবেদককে বলেন- সম্প্রতি ওই দুই ভাই ভাড়া দাবি করলে এবং উত্তেজনা দেখা দিলে আমার কাছে তিনমাসের ভাড়া রেখে দেই। পরে ওসি স্যারের নির্দেশে আমিন বিশ্বাস ভাড়া ও চাবি দিয়ে দেই। এরপরই শুনেছি তালা দিয়েছে।
এ বিষয়ে স্থানীয় বাসিন্দা ও ওই বাজার বণিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক মো. শাকিল মোল্যা বলেন- আমিন মিয়া কখনও শালিস দরবার বা কোনো দলের সভা-সমাবেশেও দেখিনি। উনি মূলত নিরীহ ও সহজ-সরল প্রকৃতির মানুষ।
এসব বিষয়ে জানতে কথা হয় দুই ভাই রেজাউল হক ও সালিমুল হকের সাথে। তাঁরা দাবি করেন- নিজেদের ঘরে তালা দিয়েছেন। এ সময় সালিমুল হক বলেন- ওই জায়গা আমাদের ভাগ রয়েছে। আমিন আওয়ামীলীগের লোক এবং আওয়ামীলীগের ক্ষমতা দেখিয়ে দখল করে রেখেছিল। এখন আমরা আমাদের ঘরেই তালা দিয়েছি। এছাড়া ওই দোকান থেকে তাঁরা ভাড়া আদায় করে আসছিলেন বলে জানান। তবে, তারা এসংক্রান্তে কোনো চুক্তিপত্র বা প্রমাণ দেখাতে পারেননি।
তাঁদের দলীয় পরিচয় নিশ্চিত করে উপজেলা যুবদলের আহ্বায়ক মিনহাজুল রহমান লিপন ও কৃষকদলের সভাপতি লুৎফর জানান- তারা বিষয়টি নিয়ে অবগত নন এবং অভিযোগ পেলে সাংগঠনিক প্রক্রিয়ায় তদন্তানুযায়ী ব্যবস্থা নেয়া হবে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে বোয়ালমারী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মাহামুদুল বলেন- দোকানঘরের বিষয়ে আমিন বিশ্বাস অভিযোগ দিয়েছেন। পরবর্তীতে স্থানীয়ভাবে মিমাংসা করা হবে বলে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হয়নি।