তৈরি করেছেন ভুয়া কাবিননামা, ভুয়া কোর্ট ম্যারিজ এফিডেভিট, ভুয়া মেডিক্যাল সার্টিফিকেট, এমনকি ভুক্তভোগীর বাবার নামে আদালত থেকে জারিকৃত ভুয়া গ্রেফতারি পরোয়ানা তৈরি করেও শেষ রক্ষা হলো না আলফাডাঙ্গা উপজেলার বেলবানা গ্রামের মৃত ওলিয়ারের পূত্র আরিফুজ্জামান ওরফে আরিফের (২৫)।
সরেজমিন ঘুরে জানা যায়, সৎ মায়ের সংসারে বাবার মৃত্যুর পর অভিবাবকহীন আরিফ উশৃঙ্খল জীবন যাপনে অভ্যস্থ হয়ে পড়ে। ভগ্নিপতি আসাদুজ্জামান জিয়া পুলিশে চাকরি পেলে দুলাভাইয়ের সহায়তায় আরো বেপরোয়া হয়ে ওঠে আরিফ। উশৃঙ্খল জীবন যাপনে অভ্যস্থ হয়ে এক পর্যায়ে বাবার রেখে যাওয়া প্রায় সকল সম্পদ খুইয়ে লোলুপ দৃষ্টি দেয় পার্শ্ববর্তী রুদ্রবানা গ্রামের কুয়েত প্রবাসীর সম্পদেও দিকে। ছক কাটতে থাকে প্রবাসীর মেয়েকে বিয়ে করে সম্পদ লুটে নেওয়ার।
এরই ধারাবাহিকতায় মধুখালী উপজেলার মৃত কাবিন রেজিষ্ট্রারের মাওলানা বিএম মহিউদ্দিনের স্বাক্ষর এবং সিলমোহর নকল করে প্রবাসীর মেয়ের সঙ্গে আরিফের বিবাহের একটি ভুয়া কাবিননামা তৈরি করে এলাকায় রটাতে থাকে যে উক্ত মেয়ের সঙ্গে তার বিয়ে হয়ে গেছে।
ফরিদপুর জজ কোর্টের নোটারী পাবলিকের অ্যাডভোকেট মিরাজ শরীফের স্বাক্ষর ও সিলমোহর নকল করে ভুয়া কোর্ট ম্যারিজ এফিডেভিটও তৈরি করেন।
বিষয়টি নিয়ে প্রবাসীর স্বজনেরা প্রতিবাদ করলে প্রবাসীর নামে আদালত থেকে জারিকৃত ভুয়া গ্রেফতারি পরোয়ানা তৈরি করে ভয় দেখাতে থাকে।
মামলার এজহার সূত্রে জানা যায়, এতকিছুর পরেও মেয়েকে আরিফের সঙ্গে বিয়ে দিতে রাজি না হওয়াই গত ৪/৯/২০২৪ ইং তারিখে আলফাডাঙ্গা থানাধীন বানা বাজারের আমতলা থেকে প্রবাসীর মেয়েকে দেশীয় অস্ত্র ঠেকিয়ে জোরপূর্বক অপহরণ করে আরিফের নিজ বাড়িতে নিয়ে মারপিট করে একটি কক্ষে তালাবদ্ধ করে রাখে। অপহৃতের মা খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে গেলে তাকেও মারপিট করে একই কক্ষে তালাবদ্ধ করে রাখে।
পরবর্তীতে সংবাদ পেয়ে অপহৃতের বাবা তাদের দু’জনকে উদ্ধার করতে গেলে আরিফের তৈরিকৃত ভুয়া কাগজপত্র এবং অপহরণের বিষয়ে কোন প্রকার মামলা করিবে না এই মর্মে ১০০ টাকার নন-জুডিসিয়াল স্টাম্পে স্বাক্ষর নিয়ে অপহৃতদের ছেড়ে দেয় আরিফ।
এরপর অপহৃত মেয়ে বাদী হয়ে বিজ্ঞ নারী ও শিশু নির্যাতন দমন বিশেষ আদালত ফরিদপুরে মামলা করলে (মামলা নং-৩০২/২৪) আদালত মামলাটি পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)কে তদন্তভার দেয়।
সাব-ইন্সপেক্টর কার্তিক এবং ইন্সপেক্টর গৌরাঙ্গ বসু দীর্ঘ তদন্ত শেষে মামলার তদন্ত প্রতিবেদন ৫/৪/২০২৫ ইং তারিখে আদালতে প্রদান করে। আদালত ধূর্ত আরিফের বিরুদ্ধে ১৫/৪/২৫ ইং তারিখে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করলে আলফাডাঙ্গা থানা পুলিশ ১৭ এপ্রিল দিবাগত রাতে তাকে গ্রেফতার করে।
এব্যাপারে আলফাডাঙ্গা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার (ওসি) সাথে মুঠোফোনে কথা হলে তিনি জানান, ওয়ারেন্ট ভুক্ত আসামি আরিফকে গ্রেফতার করে বিজ্ঞ আদালতে সৌপর্দ করা হয়েছে।