ফরিদপুরে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে বাস উল্টে বাবা-ছেলেসহ সাত জন নিহত হয়েছেন। এ ছাড়া এ ঘটনায় কমপক্ষে ৪০ জন আহত হয়েছেন। নিহতদের মধ্যে বাবা-ছেলেসহ ৪জন পুরুষ ও ৩ জন নারী রয়েছে।
আজ মঙ্গলবার বেলা ১১ টার দিকে ফরিদপুর জেলা সদরের ফরিদপুর-বরিশাল মহাসড়কের বাখুন্ডা এলাকার শরীফ জুট মিলের সামনে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে এই দুর্ঘটনা ঘটে। এতে ঘটনাস্থলে ৫ জন মারা যায় এবং ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যায় আরও দুইজন। এছাড়া আহত হয়েছেন প্রায় ৪০ জন।
নিহতরা হলেন, নগরকান্দা উপজেলার শেয়ারকান্দি গ্রামের দোয়াত সর্দার (৬৫), তাঁর ছেলে ইমান সর্দার (২৮), জেলা শহরের মোল্লাবাড়ি সড়ক এলাকার ফজিরুন নেছা (৬০), কাঠিয়া বড়গ্রামের রাজিব খানের স্ত্রী দীপা খান (৩৪), জেলা সদরের চরচাঁদপুর গ্রামের বলরাম সরকারের স্ত্রী ভারতী সরকার (৪০), চরভদ্রাসন উপজেলার হাজিগঞ্জের আলম মিয়া (৪০) ও লালমনিরহাটের হাতিবান্ধা উপজেলার পূর্ব ফকিরপাড়ার আজিবুর হোসেন (৪০)। বিকাল সাড়ে ৩ টার দিকে নিহতদের লাশ স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করা হয়।
দুর্ঘটনাকবলিত বাসের আহত কয়েকজন যাত্রী ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। তারা বলেন, মুকসুদপুর থেকে ফরিদপুরের উদ্দেশে ছেড়ে আসা ফারাবি এন্টারপ্রাইজ নামে লোকাল বাসটি বাখুন্ডা এলাকায় পৌঁছালে নিয়ন্ত্রণ হারায়। এরপর সেটি সড়কের পাশে বিদ্যুতের খুঁটির সঙ্গে ধাক্কা খেয়ে খাদে উল্টে পড়ে যায়। ঘটনার পড়ে খবর পেয়ে নিহত ও আহতদের উদ্ধার করেন ফায়ার সার্ভিস, সেনাবাহিনী ও থানা পুলিশের সদস্যরা।
কোতয়ালী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আসাদউজ্জামান বলেন, বাসটি অতিরিক্ত বেপরোয়া গতিতে চালানোর কারনে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে বিপরীত লেনে চলে গিয়ে সড়কের পাশে থাকা বিদ্যুতের খুটিতে ধাক্কা লাগে।
ফরিদপুর দমকল বাহিনীর জ্যেষ্ঠ স্টেশন মাস্টার নজরুল ইসলাম বলেন, বাসটি দ্রুত গতিতে এসে আরেকটি বাসকে ওভারটেক করতে গিয়ে সড়কের পাশের একটি পিলারে ধাক্কা খেয়ে উল্টে যায় এবং রাস্তার পাশের খাদে পড়ে যায়।
ফরিদপুর সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ইশরাত জাহান বলেন, আমি ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছি। প্রত্যক্ষদর্শীদের সঙ্গে কথা বলেছি। তারা জানিয়েছেন বাসের গতি ৮০ কিলোমিটারের বেশি ছিল। চালকের বেপরোয়া গতির কারণে এ দুর্ঘটনা ঘটেছে। এ ব্যাপারে জেলা বাস ও মিনিবাস মালিক সমিতির সঙ্গে সভা করা হবে। এভাবে অতিরিক্ত গতির কারণে দুর্ঘটনা ও মৃত্যু মেনে নেওয়া যায় না।
ফরিদপুর হাইওয়ে পুলিশের সহকারী পুলিশ সুপার মো. মারুফ হোসেন বলেন, গাড়িটি দ্রুত গতির ছিল একই সঙ্গে আরেকটি দ্রুত গতির যানকে ওভারটেক করতে গিয়ে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে এই দুর্ঘটনা ঘটেছে বলে প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে।
ফরিদপুরের জেলা প্রশাসক মো. কামরুল হাসান মোল্লা বলেন, নিহত প্রত্যেককে প্রশাসনের উদ্যোগে তাৎক্ষণিকভাবে ২৫ হাজার টাকা দেওয়া হচ্ছে। এছাড়া পরবর্তিতে বিআরটিএর মাধ্যমে এককালীন অনুদান দেওয়া হবে। এ ঘটনায় অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেটকে আহ্বায়ক করে পাঁচ সদস্য বিশিষ্ট একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। এই কমিটি দুর্ঘটনার কারণ অনুসন্ধান করবে। পরে তাদের সুপারিশ অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।