1. kazi.rana10@gmail.com : Sohel Rana : Sohel Rana
  2. jmitsolution24@gmail.com : support :
শুক্রবার, ২৭ জুন ২০২৫, ০১:১৪ পূর্বাহ্ন
শিরোনাম :

মাফিয়া চক্রের নির্যাতনে পঙ্গু হয়ে দেশে ফিরলেন আসিফ

মুন্সি সুমন, জেলা প্রতিনিধি
  • Update Time : শুক্রবার, ২৮ ফেব্রুয়ারী, ২০২৫
  • ১১৯ Time View

লিবিয়ায় মাফিয়া চক্রের নির্মম নির্যাতনের কথা সবারই জানা। তাদের ফাঁদে পা দিয়ে প্রতিবছর প্রাণ হারাচ্ছেন শত শত যুবক। এখনো অনেকেই রয়েছেন নিখোঁজ। কেউ কেউ মোটা অংকের টাকার বিনিময়ে প্রাণে রক্ষা পেলেও দেশে ফিরেছেন পঙ্গু ও নিঃস্ব হয়ে।

এমনই মর্মান্তিক ঘটনার সাক্ষী হয়ে বাড়ি ফিরেছেন মো. আসিফ আহমেদ (২২) নামে ফরিদপুরের এক যুবক। তিনি ফরিদপুরের ভাঙ্গা উপজেলার ঘারুয়া ইউনিয়নের শরিফাবাদ গ্রামের মো. ইউসুফ মাতুব্বরের ছেলে। মাদারীপুরের রাজৈর উপজেলার হোসেনপুর ইউনিয়নের সত্যবর্তী গ্রামের মানবপাচারকারী দালাল মেহেদী হাসান ওরফে মঞ্জেলের খপ্পরে পড়ে পঙ্গুত্ব বরণ করে দেশে ফিরেছেন তিনি। প্রায় ৩ বছর আগে লিবিয়া থেকে সাগরপথে ইতালি যাওয়ার সময় নিখোঁজ হয়েছেন আসিফের বাবা ইউসুফ মাতুব্বর।

এক মাসেরও বেশি সময় ধরে দালাল মঞ্জেলকে দেওয়া ২৬ লাখ টাকা ফেরত পাওয়ার আসায় ঘুরছেন অসহায় আসিফ। মামলা করলে হত্যার হুমকি এবং টাকা ফেরত দেওয়ার আশ্বাস দিয়ে স্ত্রী-সন্তান নিয়ে নিজ বসতবাড়ি ছেড়ে পালিয়ে গেছেন দালাল। তার ব্যবহৃত মোবাইল নম্বরটিও বন্ধ রয়েছে। এজন্য দালালের খোঁজে কয়েকদিন পরপরই রাজৈর উপজেলার সত্যবর্তী গ্রামে আসেন আসিফ। এমন অমানবিক খবর শুনে দালাল মঞ্জেলের বাড়িতে গিয়ে ভুক্তভোগী আসিফের সঙ্গে কথা হয় সংবাদকর্মীর। এ সময় লিবিয়ার নির্মম ঘটনার বর্ণনা দেন তিনি।

আসিফ আহমেদ যানান , দালাল মেহেদী হাসান মঞ্জেলের সঙ্গে ১৪ লাখ টাকা কন্ট্রাক্ট হয়েছিল। সে বলছিল এক সপ্তাহের মধ্যে তোমরা ইতালি থাকবা। এ রকম বইলা প্রথমে ঢাকা থেকে বিমানে দুবাই নিছে। সেখান থেকে কুয়েত-মিশর দিয়ে লিবিয়ার বেনগাজিতে পাঠায়। ওখানে রিসিভ করার পর থেকেই শুরু হয় অমানবিক নির্যাতন। তিন দিন বেনগাজিতে একটি ঘরে আমাদের রাখা হয়, যাকে বলা হয় রিসিভ ক্যাম্প। ওই ক্যাম্পের মালিক আকাশ নামে এক দালাল। সেই রিসিভ ক্যাম্পে আটকে রেখে ৮ লাখ টাকা নেয় দালাল মঞ্জেল। ঠিক মতো খাবার দিতো না। কোনো কথা বললেই মারধর করতো। সেই ক্যাম্পে আরও প্রায় ৪০০-৫০০ জন বাংলাদেশি লোক বন্দি ছিল। তাদের শরীর পচে যাওয়ার মতো অবস্থায় ছিল। তিন দিন পর সেখান থেকে আবার আমাদের একটা গাড়িতে করে বেনগাজির গুয়াসায় শিপন নামে আরেক দালালের ক্যাম্পে নিয়ে যায়। সেই ক্যাম্পটা ছিল বড় একটা গোডাউনের মতো। ভেতরে বন্দি ছিল প্রায় ১২০০ মানুষ। ওই জায়গায় নেওয়ার পর ফোন ও পাসপোর্ট সব কেড়ে নিয়ে যায় এবং বাড়িতে যোগাযোগ বন্ধ করে দেয়।

তিনি বলেন, তখন আমার পরিবারের কাছ থেকে দালাল মঞ্জেল আরও ৬ লাখ টাকা নেয়। এভাবে সাত দিনে ১৪ লাখ টাকা হাতিয়ে নেওয়ার পরে গেম দেওয়ার কথা বলে একটা হাইয়েস গাড়িতে তুলে আমাদের ১০ জনকে বেনগাজির অন্য এক স্থানে পাঠায়। পরে অন্ধকার একটা ঘরের মধ্যে ঢোকালে সেখানে বন্দি থাকা লোকদের কাছ থেকে জানতে পারি ওইটা ‘মাফিয়া ঘর’। মিলন নামে এক মাফিয়া আমাদের কিনে নিয়েছে। কিছুক্ষণ পরেই আমাকে একা অন্য একটি রুমে নিয়ে আরও ২০ লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করে তারা। এ সময় তাদের ফোন দিয়ে দালালকে কল করে বিষয়টি জানালে সে বলে তারা যা চায় দিয়ে দেও, নাহলে তোমার ক্ষতি হবে। তখন আমি বললাম আপনাকেতো ১৪ লাখ দিছি এখন আবার এতো টাকা পাব কই। এ কথা শুনেই মাফিয়ারা আমাকে মারধর শুরু করে। আমার দুই পায়ে প্রতিদিন হাতুড়ি দিয়ে পিটাইতো আর বাড়িতে ভিডিও কল দিয়ে দেখাইতো। বলতো যে টাকা না দিলে এখান থেকে বেঁচে ফিরতে পারবি না।
আসিফ আহমেদ বলেন, টানা দুই মাস আমাকে হাতুড়িপেটা করে মাফিয়া গ্রুপের সদস্যরা। খাইতেও দিত না। ১৫ দিন পর এক মিনিট বাড়িতে কথা বলতে দিত শুধু টাকা চাওয়ার জন্য। কয়েক কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়ে স্ত্রী-সন্তানসহ বাড়ি ছেড়ে পালিয়ে যায় দালাল মঞ্জেল। একপর্যায়ে সুদে ১০ লাখ টাকা জোগাড় করে মাফিয়াদের কাছে আকুতি-মিনতি করলে আমার পরিবারের সম্পর্কে তথ্য নিয়ে ছেড়ে দেয়। পরবর্তীতে লিবিয়ার মিশ্রতায় নিয়ে সাগর পাড়ের একটা ঘরে ৩ মাস আটকে রাখে দালাল মঞ্জেলের লোকজন। আবারও গেম দেবে বলে দুই লাখ টাকা চায়। বললাম মোট ২৪ লাখ তো দিলাম আবার টাকা চান কেন। তখন সে আমাকে হুমকি দিয়ে বলে যদি ইতালি যেতে চাস তাহলে আরও ২ লাখ টাকা দেওয়া লাগবে। পরে আবার আমার বাড়ি থেকে টাকা জোগাড় করে আমার বোনের মাধ্যমে দালালের আত্মীয়দের কাছে দেয়। কিন্তু তারপরও গেম দেয়নি। বরং ওই দেশের সেনাবাহিনী দিয়ে ভয়ভীতি দেখিয়ে মিশ্রতা থেকে বেনগাজিতে ফেরত আনে। সেইটা ছিল চিসতী নামে এক দালালের ঘর।

তিনি বলেন, বিভিন্নভাবে মোট ১১ মাস আমাকে লিবিয়ায় নির্যাতন করেছে। হাঁটার শক্তি ছিল না। আমার শরীরে উকুন হয়ে গেছিল। পরে একজনের হাতে পায়ে ধরে সেখান থেকে ১ লাখ ৩০ হাজার টাকার বিনিময়ে মুমূর্ষু অবস্থায় গত ২৪ জানুয়ারি বাড়ি ফিরে আসি। হাতুড়ি দিয়ে পিটিয়ে আমার পায়ের হাড্ডি চূর্ণবিচূর্ণ করে ফেলেছে মাফিয়া-দালালরা। এখন লাঠি ভর দিয়ে হাঁটতে হয়।

আসিফ বলেন, লিবিয়া থাকতেই দালাল মঞ্জেলের স্ত্রী তাসলিমা আমাকে বিভিন্ন হুমকি দিয়েছে। সে বলে- ‘অলিদ (লিবিয়ার শীর্ষ মাফিয়া) হলো আমার ভাই। তুই যদি বাড়িতে তেমন কিছু বলস তাহলে অলিদকে বলে তোকে এমন জায়গায় পাঠাবো আর জীবনে বাংলাদেশে ফিরে আসতে পারবি না। তোকে শুট করে মেরে ফেলবে।’ অলিদ হলো লিবিয়ার বড় মাফিয়া দালাল। তার দ্বারা লিবিয়ায় সব কিছুই সম্ভব। কারণ পুলিশ প্রশাসন সব কিছুই তার হাতে। সে চাইলে একটা লোক মারতেও পারে আবার ইতালিও পাঠাতে পারে।

তিনি বলেন, দেশে আসার পরও মামলা করার সাহস পাই নাই। তারা হুমকি দিছে কোনো মামলা করলে আমাকে মেরে ফেলবে। আমার বাবা নিখোঁজ রয়েছে। চার ভাই-বোনের মধ্যে আমিই বড় সন্তান। জায়গা-জমিসহ যা হারাবার সব তো হারিয়েই ফেলছি। এখন পাওনাদাররা টাকার জন্য আমাকে প্রতিদিন চাপ দিচ্ছে। আমি টাকাগুলো ফেরত চাই। যাতে দেনা পরিশোধের পর কিছু করে খেতে পারি। তাই আগে আপনাদের (সাংবাদিক) জানালাম যেন আমার কোনো ক্ষতি করলেও প্রমাণ থাকে। পরে আইনের আশ্রয় নিব।

Please Share This Post in Your Social Media

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

More News Of This Category
© All rights reserved © 2023
error: Content is protected !!