গত ২৪ ডিসেম্বর বেনাপোল-ঢাকা ও খুলনা-ঢাকা রুটে সম্প্রতি চালু হওয়া আন্তঃনগর জাহানাবাদ এবং রূপসী বাংলা ট্রেন দুটি চলাচল শুরু করেছে। কিন্তু এস্ট অফিস না থাকায় মুকসুদপুরের লখৈরচর রেল স্টেশনে ট্রেন যাত্রা বিরতি করছে না জানিয়েছেন স্টেশন কর্মকর্তারা। এতে ট্রেনে যাতায়েত করা থেকে বঞ্চিত হতে হচ্ছে মুকসুদপুরসহ আশপাশের এলাকার সাধারণ মানুষের। বিভিন্ন মহলে সৃষ্টি হয়েছে আলোচনার ঝড় এখানেই থেমে নেই। চায়ের দোকান থেকে শুরু করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও চলেছে চুলছেড়া বিশ্লেসন। কেউ কেউ মনে করছেন শেখ হাসিনার পতন হয়েছে এই জন্যই ট্রেন যাত্রাবিরতি করছে না। এভাবে বিভিন মতামত দিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে লেখা পোস্ট দিয়েছে অনেকে। প্রায় শত কোটি টাকা ব্যয়ে মুকসুদপুর রেলওয়ে স্টেশন নির্মাণ করেছে সরকার। সরকার রেলওয়ে স্টেশন করলেও এস্ট অফিস না থাকায় ট্রেনের সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে মুকসুদপুরসহ আসপাসের কয়েকটি উপজেলার প্রায় ১০-১২ লক্ষ সাধারণ যাত্রী।
মুকসুদপুরে ট্রেনের যাত্রাবিরতি করানোর জন্য বসে নেই মুকসুদপুরের জনগণ । ইতি মধ্যে মুকসুদপুর নির্বাহী আফিসার মো: আজিজুর রহমান এর মাধ্যমে রেল উপদেষ্ঠা বরাবর স্মারকলিপি দিয়েছে।
গত ২৮ ডিসেম্বর শনিবার (মুকসুদপুর, নগরকান্দা ও সালথা) কয়েক লক্ষাধিক জনসাধারণকে ট্রেন পরিসেবা থেকে বঞ্চিত করার প্রতিবাদে একটি মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করে ‘স্বপ্নপুর’ নামের একটি সংগঠন।
এলাকাবাসীর উপস্থিতিতে আয়োজিত মানববন্ধনে স্বপ্নপুরের মুখপাত্র মাহমুদ সিমান ভৌগোলিক, অর্থনৈতিক এবং ঐতিহ্যগত বিবেচনায় মুকসুদপুরে আন্তঃনগর ট্রেন বিরতির গুরুত্ব তুলে ধরেন। এছাড়া শিগগিরই বিষয়টি কার্যকর করার জন্য জোর দাবি জানান।
গত ২৯ ডিসেম্বর রোববার মুকসুদপুরের কলেজ মোড়ে ঢাকা-খুলনা মহাসড়ক অবোরধ করে হাতে হাত ধরে বিএনপি, জামাত, ইসলামী আন্দোলন ও ইসলামিক দল গুলোসহ সর্বদলীয় নেতাকর্মীরা মানববন্ধন কর্মসূচী পালন করে। সর্বদলীয় মানববন্ধনে ২৪ ঘন্টার আল্টিমেটাম দেন দাবী না মানলে রেললাইন অবরোধের হুমকি দেয় রেল কর্তৃপক্ষকে। মানববন্ধনে বক্তারা বলেন, ঢাকা- থেকে ছেড়ে আসা ঢাকা-খুলনা, ঢাকা- বেনাপোলগামী আন্তঃনগর রেল চলাচলের জন্য মুকসুদপুরে স্টেশন নির্মাণ করা হয়েছে। অথচ এই স্টেশনটি চালু করা হয়নি। রেলগুলো এখানে যাত্রাবিরতি করেনা। মুকসুদপুরবাসী এই সুবিধা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। শুধু মুকসুদপুর নয় পার্শ্ববর্তী ফরিদপুর জেলার নগরকান্দা, সালথা ও আলফাডাঙ্গার মানুষ এই সুবিধা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। অথচ আমাদের বাড়ির সামনে দিয়ে রেল যাবে আর আমরা সুবিধা পাবনা এটা হতে পারেনা। এই সুবিধা পেতে আমরা আজ রাস্তায় নেমেছি। তাই আগামী ৪৮ ঘন্টার মধ্যে মুকসুদপুর স্টেশনে রেলের যাত্রাবিরতির দাবী করছি। এই সময়ের মধ্যে যদি দাবী না মানা হয় তবে রেল লাইন অবরোধ করে কঠোর আন্দোলনের ঘোষণা দেয়া হবে।
মুকসুদপুর রেলওয়ে স্টেশনের স্টেশন মাস্টার মিহির বালা জানান, স্টেশনটিতে আমরা বিভিন্ন ক্যাটাগরির ২৩ জন স্টাফ কর্মরত আছি। আমরা পার্শ্ববর্তী কাশিয়ানি ও নগরকান্দা স্টেশনের হয়ে কাজ করছি। স্টেশন মাস্টার মিহির বালা আরো জানান ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ চাইলে মুকসুদপুর রেলওয়ে স্টেশনকে এস্ট অফিস হিসাবে অন্তর্ভুক্তি করতে পারবে। তবে মুকসুদপুর এস্ট অফিসটি করা খুব জরুরী কারণ এলাকায় প্রায় ১০-১২ লক্ষ মানুষের বসবাস। প্রতিদিন হাজার মানুষ মুকসুদপুর থেকে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন গন্তব্যে চলাচল করে।
উল্লেখ্য : গত ২৪ ডিসেম্বর ঢাকা-খুলনা, ঢাকা-বেনাপোল আন্তঃনগর ট্রেন চলাচল শুরু করলেও মুকসুদপুর রেল স্টেশনে যাত্রা বিরতি না কাশিয়ানী রেল জংশনে গিয়ে যাত্রা বিরতি করে। এতে মুকসুদপুর, ফরিদপুরের সালথা, নগরকান্দা উপজেলাসহ আশপাশের এলাকার যাত্রী সাধারন রেল যাত্রার সুবিধা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।
ট্রেন ছাড়ার সময়সূচীঃ
৮২৫/ ৮২৮/ ৮২৭/ ৮২৬ নং ট্রেনের ঢাকা-খুলনা, খুলনা-ঢাকা এবং ঢাকা-বেনাপোল, বেনাপোল-ঢাকা। “জাহানাবাদ এক্সপ্রেস” খুলনা থেকে ঢাকার উদ্দেশ্যে ছাড়বে ভোর ৬টায় এবং ঢাকায় পৌছাবে সকাল ৯টা ৪৫ মিনিটে। ঢাকা থেকে খুলনার উদ্দেশ্যে ছাড়বে রাত ৮টায় এবং খুলনা পৌছাবে রাত ১১ টা ৪৫ মনিটে। “রুপসীবাংলা এক্সপ্রেস” ঢাকা থেকে বেনাপোলের উদ্দেশ্য ছাড়বে সকাল ১০টা ৪৫ মিনিটে এবং বেনাপোল পৌছাবে দুপুর ২টা ২৫ মিনিটে। বেনাপোল থেকে ঢাকার উদ্দেশ্য ছাড়বে ৩টা ২৫ মিনিটে এবং ঢাকায় পৌছাবে সন্ধা ৭টায়।