1. kazi.rana10@gmail.com : Sohel Rana : Sohel Rana
  2. jmitsolution24@gmail.com : support :
শুক্রবার, ২৭ জুন ২০২৫, ০৫:০৮ পূর্বাহ্ন
শিরোনাম :

৫০০ টাকায় ৬ জনকে সরকারি চাকরি দিয়ে প্রশংসায় ভাসছে গোপালগঞ্জ জেলা প্রশাসন

Reporter Name
  • Update Time : শনিবার, ২০ এপ্রিল, ২০২৪
  • ২৯৫ Time View
বাংলাদেশে বর্তমানে সরকারি চাকরি যেন সোনার হরিণ। সুপারিশ বা ঘুষ ছাড়া বর্তমান সময়ে এই সোনার হরিণ সহজে কেউ ধরতে পারে না। প্রচলিত এই ধারণাকে সম্পূর্ণ বদলে দিয়েছে গোপালগঞ্জ জেলা প্রশাসন। মাত্র ৫০০ শত টাকার বিনিময়ে পরীক্ষার্থীদের নিজ যোগ্যতায় জেলা প্রশাসনের ইউনিয়ন পরিষদ সচিব পদে নিয়োগ দিয়ে অনন্য এক দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে গোপালগঞ্জ জেলা প্রশাসন।
গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়া উপজেলার গোপালপুর গ্রামের দরিদ্র পরিবারের মেয়ে লিপিকা ঘরামী অনেক কষ্ট করে ২০১৮ সালে গণিতে স্নাতকোত্তর শেষ করে চাকরীর জন্য আবেদন করা শুরু করেন। এর আগে চাকরির জন্য পরীক্ষার টেবিলে বহুবার বসলেও কোন বারেই চাকরী নামক সোনার হরিণটির কাছাকাছি যেতে পারেননি। কিন্তু এবারমাত্র ৫০০ টাকা ব্যাংক ড্রাফট জমা দিয়ে কোন প্রকার ঘুষ ছাড়াই নিজ যোগ্যতায় চাকরী পেলেন তিনি।
মাত্র ৫০০ টাকায় চাকরি পেয়ে লিপিকা ঘরামী সংবাদ সংযোগ কে বলেন, আমি দরিদ্র পরিবারের সন্তান হওয়ায় লেখা পাড়া শিখেছি বেশ কষ্ট করে। চাকরির জন্য ঘুষ জোগান দেওয়া আমার পরিবারের জন্য প্রায় অসাধ্য ছিল। তাই বহুবার পরীক্ষা দিয়েও চাকরি পাইনি যোগ্যতা থাকা সত্ত্বেও। আজ সকল প্রতিকুলতাকে পিছনে ফেলে মাত্র ৫০০টাকা খরচ করে আমি চাকরী পেয়েছি। এটা সম্ভব হয়েছে শুধু মাত্র স্বচ্ছ নিয়োগ পরীক্ষার কারনে। এক একটি স্বচ্ছ নিয়োগ শুধু এক একটি পরিবার নয় একটি দেশকে বদলিয়ে দিতে পারে। দেশে স্বচ্ছাতা প্রতিষ্ঠায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে। আমি এ উদ্যোগকে সাধুবাদ জানাই। শুধু লিপিকা ঘরামী নয় এরকম চাকরী পেয়েছেন আরো ৫ জন বেকার যুবকও। তারাও এ উদ্যোগটিকে সাধুবাদ জানিয়েছেন।
সম্প্রতি মৌখিক পরীক্ষা শেষে চূড়ান্তভাবে এ ৬ জনকে ইউনিয়ন পরিষদ সচিব পদে মনোনীত করেন গোপালগঞ্জ জেলা প্রশাসন।
যারা চাকরী পেয়েছেন তারা হলেন, গোপালগঞ্জ সদর উপজেলার দুর্গাপুর ইউনিয়নের কাটরবাড়ি গ্রামের সজীব মন্ডল, কংশুর গ্রামের মামুন ফকির, মুকসুদপুর উপজেলার জলিরপাড় ইউনিয়নের শান্তিপুর গ্রামের কার্তিক মন্ডল, টেংরাখোলা গ্রামের মোঃ ইব্রাহীম, টুঙ্গিপাড়া উপজেলার গুয়াধানা গ্রামের সুব্রত ভক্ত ও গোপালপুর গ্রামের লিপিকা ঘরামী।
গোপালগঞ্জ জেলা প্রশাসনের নিয়োগ পরীক্ষায় কোন তদবির-সুপারিশ ছাড়াই শতভাগ স্বচ্ছতার মাধ্যমে মাত্র ৫ শ টাকার ব্যাংক ড্রাফট এ চাকরী পান তারা। সর্বশেষ মৌখিক পরীক্ষার ফলাফল ঘোষণার পর তাদেরকে ইউনিয়ন পরিষদ সচিব পদে চাকরি চুড়ান্ত করেন জেলা প্রশাসক কাজী মাহবুবুল আলম।
জেলা প্রশাসক কার্যালয় সূত্রে জানাগেছে, গোপালগঞ্জ জেলার ৫টি উপজেলার নাগরীকদের কাছ থেকে ৬টি ইউনিয়ন পরিষদ সচিব পদের বিপরীতে ৭শ ৮৩টি আবেদন পাওয়া যায়। আবেদন যাচাই বাছাইতে বিভিন্ন ভুলত্রুটির কারনে ২০টি আবেদন বাতিল হয়। মোট ৭শ ৬৩ জন বৈধ আবেদনকারীকে প্রথমে ৫০ নম্বরের প্রিলিমিনারি (এমসিকিউ) পরীক্ষা নেয়া হয়। এই পরীক্ষায় ১শ ৮৩ জন প্রার্থী উত্তীর্ণ হয়। পরবর্তিতে এই ১শ ৮৩ জনকে ৭০ নম্বরের লিখিত পরীক্ষায় বসানো হয়। লিখিত পরীক্ষায় ৬টি পদের বিপরীতে ৪০জনকে রাখা হয়। সর্বশেষ ৩০ নম্বরের মৌখিক পরীক্ষা শেষে চুড়ান্ত ফলাফলে এক নারীসহ ছয়জনকে চাকরীতে মনোনীত করা হয়।
চাকরিপ্রাপ্ত কার্তিক মন্ডল সংবাদ সংযোগ কে বলেন, আমি প্রথমেই ধন্যবাদ জানাই জেলা প্রশাসক স্যরকে। কারন তিনি স্বচ্ছতার সাথে নিয়োগ পরীক্ষা সম্পন্ন করেছেন বলেই আমি মাত্র ৫০০টাকায় চাকরীটা পেয়েছি। এর আগে অনেক দপ্তরের চাকরী পরীক্ষা দিয়েছি। পরীক্ষার প্রশ্ন ফাঁস হয় এ কারণে আমরা যারা মেধাবী ছিলাম তারা তাদের কাছে টিকতে পারিনি। পরীক্ষা স্বচ্ছ হলে মেধাবীরা সব সময় ভালো করবে তার প্রমাণ আমি পেয়েছি। চাকরী পেতে আমার বাড়তি কোন টাকা খরচ হয়নি। শুধুমাত্র ৫ শ টাকা ব্যাংক ড্রাফট জমা দিয়েছিলাম। প্রশাসন আমাকে যে সুযোগ-সুবিধা দিয়েছে আমিও চাই তার প্রতিদান দিতে আমি দেশ ও জাতির জন্য কাজ করতে চাই।
চাকরীপ্রাপ্ত প্রতিবন্ধী মামুন ফকির খবর সংযোগ কে বলেন, আমি একজন শারীরীক প্রতিবন্ধী । আমার হাঁটতে সমস্যা হয় এজন্য ক্রাসভর দিয়ে হাঁটাচলা করতে হয়। আমি আমার মেধা, শ্রম আর সততা দিয়ে দেশ ও জাতির জন্য কাজ করবো। সকল নিয়োগ পরীক্ষা যদি এভাবে স্বচ্ছ হয় তাহলে আমাদের দেশ সোনার দেশে পরিণত হবে।
চাকরীপ্রাপ্ত সুব্রত ভক্ত, মোঃ ইব্রাহিম খলীল ও সজীব মন্ডল সংবাদ সংযোগ কে বলেন, গোপালগঞ্জ জেলা প্রশাসক কার্যালয়ে ইউনিয়ন পরিষদ সচিব নিয়োগ পরীক্ষা শুধু জেলার মধ্যে নয় সারাদেশে স্বচ্ছতার এক অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করবে। যে তিনটি ধাপে পরীক্ষা গ্রহণ করা হয়েছে তা শুধু বিসিএস পরীক্ষায় হয়ে থাকে। কোন নিয়োগ পরীক্ষায় প্রিলিমিনারি পরীক্ষা হয় বলে আমাদের জানা নেই। জেলা প্রশাসক স্যার যেহেতু স্বচ্ছতার মাধ্যমে আমাদের চাকরীতে সুযোগ সৃস্টি করেছেন আমরাও কর্মকান্ডের মাধ্যমে তার প্রতিফলন ঘটাবো। যাতে দেশ ও জাতি উপকৃত হতে পারে।
গোপালগঞ্জের জেলা প্রশাসক কাজী মাহবুবুল আলম খবর সংযোগ কে জানান, চাকরি প্রত্যাশী মোট ৭শ ৬৩ জন পরীক্ষার্থীর মধ্যে থেকে ৬ জনকে বাছাই করা খুবই কষ্টসাধ্য একটা ব্যাপার। আমারা তাই প্রথমে প্রিলিমিনারি পরীক্ষার মাধ্যমে প্রার্থীদের যাচাই করেছি। পরবর্তীতে লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষার মাধ্যমে সেরা ৬ জনকে বেছে নিতে পেরেছি। স্বচ্ছভাবে কাজ করতে আমার দপ্তরের কর্মকর্তাগণ বেশ আন্তরিক ছিলেন। তাই আমি মেধাবী ও যোগ্যদের বাছাই করতে সক্ষম হয়েছি। আমি ব্যক্তিগতভাবে আশা করি চাকরিপ্রাপ্ত ছয় জন তরুণ তরুণী তাদের মেধা ও শ্রম দিয়ে দেশ ও দশের সেবায় নিজেকে উৎসর্গ করবে।

Please Share This Post in Your Social Media

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

More News Of This Category
© All rights reserved © 2023
error: Content is protected !!